1. [email protected] : amzad khan : amzad khan
  2. [email protected] : NilKontho : Anis Khan
  3. [email protected] : Nil Kontho : Nil Kontho
  4. [email protected] : Nilkontho : rahul raj
  5. [email protected] : NilKontho-news :
  6. [email protected] : M D samad : M D samad
  7. [email protected] : NilKontho : shamim islam
  8. [email protected] : Nil Kontho : Nil Kontho
  9. [email protected] : user 2024 : user 2024
  10. [email protected] : Hossin vi : Hossin vi
পোখরার পথে পথে! | Nilkontho
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | শুক্রবার | ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হোম জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি জেলার খবর আন্তর্জাতিক আইন ও অপরাধ খেলাধুলা বিনোদন স্বাস্থ্য তথ্য ও প্রযুক্তি লাইফষ্টাইল জানা অজানা শিক্ষা ইসলাম
শিরোনাম :
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে রিভিউ আবেদনে বিএনপি মহাসচিবের ১০ যুক্তি মেসিকে সর্বকালের সেরার পুরস্কার দিলো মার্কা পাকিস্তানে ছাত্র বিক্ষোভ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা বন্যার স্থায়ী সমাধান আমরাও চাই: দুর্যোগ ও ত্রাণ উপদেষ্টা মারা গেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী সুজেয় শ্যাম শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারাই বিদ্যুৎ শাটডাউন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে: রিজভী রাজধানীর ৩০০ ফিটে সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে ১২ জন আটক বায়তুল মোকাররমের খতিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন মুফতি আব্দুল মালেক ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাবনা: আইন উপদেষ্টা দর্শনা ও কুড়ুলগাছিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে লিফলেট বিতরণ মেহেরপুরের গাংনীতে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল জীবননগরে গাছিদের ব্যস্ত সময় দর্শনায় আ.লীগ নেতার ছেলের নামে পর্নোগ্রাফি মামলা বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার কমিটি গঠন চুয়াডাঙ্গায় আসছেন হেফাজত নেতা মুফতি হারুন ইজহার চুয়াডাঙ্গায় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান চুয়াডাঙ্গায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অবহিতকরণ সেমিনারে ডিসি জহিরুল ইসলাম সরকারের আশ্বাসে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত সারা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত

পোখরার পথে পথে!

  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

নিউজ ডেস্ক:

আমরা পথে গাড়ি থামিয়ে কেনাকাটা করলাম, চা খেলাম, প্রয়োজনীয়ো কাজ সারলাম। রাস্তার পাশে পসরা নিয়ে বসে গেছে নেপালী নারী। ধাতব গহনা, ছোট পার্স, টুপি ও হ্যাটের সমারোহ। বাচ্চু ভাই দারুণ একটা হ্যাট  কিনলেন, হালিমা আপা তিন’শ টাকা দিয়ে একটা পিঠে ঝুলানো ব্যাগ। আমি নিলাম ৫০ টাকা দিয়ে ছোট পার্স। ফেরদৌসি ঘুরে ঘুরে ছবি তুলতে লাগলো।  বেশ নিচে একটা কলঘর। সিঁড়ি দিয়ে নামতে হয়।নেপালী মেয়েরা পানি তুলছে, ফেরদৌসি ছবি তুলতে লাগলো, -ওর চোখে মুখে উচ্ছাস। আমাকে বললো, জানো এখান থেকেই  দু’শ বছর যাবত ওরা পানি নিচ্ছে, তাই ছবিটা তুললাম। রউফ ভাই তাড়া দিলেন গাড়িতে উঠুন। আমরা যাচ্ছি পোখরা। যার নাম শুধু বইয়ে পড়েছি। যাকে দেখেছি শুধু সিনেমার পর্দায়।
নাগরকোট থেকে পোখরা ২৪২ কিলোমিটার। কাঠমুন্ডু হতে পোখরার দূরত্ব ২০৮ কিলোমিটার। উপচে পড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে আধার পোখরাকে বলা হয় নেপালের ভ’স্বর্গ। পৃথিবীর দশটি উচূঁ পর্বত র্শৃঙ্গের তিনটিই পোখরাতে। নেপাল পর্যটন বিভাগের একটি শ্লোগান রয়েছে, ‘তোমার নেপাল দেখা পূর্ন হবে না যদি তুমি পোখরা না দেখো’। আবার আমাদের সামনে ফুটে উঠতে লাগলো পর্বতের অপার সৌন্দর্য়। সেই সাথে যোগ হলো পাহাড়ি নদী। ছোট কিশোরীর মতো উচ্ছলতা নিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলছে। কি ভীষণ দ্রুততা। সামনে পড়ছে ছোট বড় পাথর ,কিশোরী নদী তা মাড়িয়ে এগিয়েই চলেছে। তার বুকের নিচে ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র নুড়ি পাথর। এ যেন উঠতি বয়সী মেয়ের প্রেম। প্রেমের জন্য সমাজ, নিয়ম নীতি ভেঙ্গে শুধু সামনে চলাই যে জানে। আমি অপলক দেখলাম নদীর চলা। গুনগুন করতে ইচ্ছে করলো, নদী আপন বেগে পাগল পাড়া। কে যেন বললো এ নদীর নাম ত্রিমূর্তি। আমি মনে মনে বললাম, বলো কোথায় তোমার দেশ, তোমার নেই কি চলার শেষ। মনে পড়লো আমার দেশের নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদীর কথা। কি শান্ত, স্নিগ্ধ। অপরুপ এ নদী বুকে কত বেশি অভিমান নিয়ে কিশোরীর মতো ডুকড়ে মরছে। আর ত্রিমূর্তি উচ্ছলতা নিয়ে পাথরের গায়ে জাঁপিয়ে পড়ছে।

পথের একপাশে বয়ে চলা নদী অন্য পাড়ে পাহাড়ের উচ্চতা। আমরা চলেছি তার মাঝ দিয়ে, ভাল লাগছে, ভীষণ ভাল লাগছে- এ পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো? বেলা এগারোটা হবে, রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড়াতে হবে চা পান সহ যাবতীয় কাজ সারতে। নদীর পাশেই ছোট দোকান চা, বিস্কুট, বাদাম। এত দূরেও প্রাণের প্যাকেট দেখে ভাল লাগলো। দোকানীকে ভাঙা ভাঙা হিন্দীতে বললাম, তুমি কি জানো এটা বাংলা দেশের? তরুণ দোকানী না সূচক মাথা নেড়ে বললো, চলে ভাল, খেতে মজা। তুমি কি বাংলাদেশের নাম জানো? নো নো। আবার সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নেপালের সৌন্দর্য্যরে এক কণাও ছেড়ে দেয়া যাবে না। স্বপ্না ভাবী ও সাঈদ ভাই (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক) খুব পোজ মেরে মেরে ছবি তুললেন। যথারীতি দেখলাম ফেরদৌসী একেবারে পাড় ঘেসে ছবি তুলছে, ওর কথা  ওর সাথে নদীর ছবি আসতেই হবে। একটু হেললেই ও পাড়ে যাবে হাজার ফুট নিচে এ বিষয়টি ওকে বোঝানোই গেল না। শেষমেষ সোলায়মান ভাই (এনজিও কর্মকর্তা) ছবি তুলতে নারাজী হয়ে বললেন, এত দূরে বসে আপনার মৃত্যুর জন্য তো আমি দায়ী হতে পারবোনা। সব ছবি তেলা থেমে গেল, গাড়ি আবার ছুটতে শুরু করবে তাই। নদীর রুপ বদল হয়,এবার নদীর বুকে আর নুড়ি পাথর নয়, বেশ বড় বড় পাথর। সেই পাথরের পাশ ঘেসে কিশোরদের উদ্দাম স্নান। কৈশোরের দূরন্ত পানার  ঝকমকে ছবি। সব উচ্ছলতা সরিয়ে কেউ কেউ আবার বড়শি ফেলে মাছ ধরছে। দুপুর গড়িয়ে গেল। গাড়ি আবার থামলো। নদী তখনও আমাদের সাথে সাথেই চলছে। নদীর পাড়ে ছোট একটা রেস্তেঁরা। কাঠের রংচং আ। রাস্তা থেকে নিচে। কাঠের সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে হবে। নেপাল যেহেতু পাহাড়ের দেশ, তাই বোধহয় সব কিছুই সিড়ি ভেঙে ভেঙ্গে করা। এ রেস্তোরার প্রথম ঘরটিতে স্ন্যাকস।তারপর উঠোনে খাবারের ব্যবস্থা। তারপর আরো নিচুতে চেয়ার টেবিল পাতা। একপাশে বেসিন হাত মুখ ধোয়ার জন্য। পাশেই প্রচন্ড খরস্রোতা নদী। বড় বড় পাথর ডিঙ্গিয়ে ছুটেই চলেছে। যেন কেউ তাকে আঘাত  করে চলে গেছে, তাকে ধরতেই  নদীর  এ প্রাণপন ছুটে চলা। খাওয়া এখানেও বুফে। ভাত, রুটি, সবজির নানা পদ ডাল, আচার। এখানে এসে পেলাম মাছ। মাছ? কি মাছ? বাঙালিদের মধ্যে সাড়া পড়ে গেল। কে যেন দু’টুকরো মাছ নিতে চাইলো, রেস্তোরার সুদর্শন যুবক বললো, নো নো, মছলি অনলি ওয়ান পীস। আমি খাবার থালা নিয়ে একেবারে নদীর দিকে মুখ করে বসলাম। আমার আশপাশে কেউ নেই। সবাই বারান্দায় বসেছে। বাঁধ না মানা ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে আমি মজাদার কোড়াল মাছ মুখে তুললাম। এ মাছটি কি এ নদীর?

গাড়ি চলছে পোখরার দিকে। নদীর ওপারে চলাচলের জন্য রয়েছে দড়ির তৈরি সরু সেতু। হঠাৎ দেখা গেল ক্যাবল কার। রউফ ভাই বললেন, এখানেই রয়েছে বিখ্যাত মনো কামনা মন্দির। জায়গার নাম কুন্তির। রাস্তা থেকে মন্দির যাওয়ার টিকিট ঘর অনেক নিচে। গাড়ি চলে গেল আকাবাকাঁ পথ ধরে নিচে। নিচে গিয়ে অবাক হলাম হাজার হাজার মানুষের ভিড়। প্রায় প্রত্যেকের সাথে রয়েছে ছাগল। মনোকামনা মন্দিরে গিয়ে বলি দেবেন। অনেকেই আবার বলি দিয়ে দুপায়ে চ্যংদোলা করে  ছাগল নিয়ে বাড়ি চলেছেন। আসা-যাওয়ার সব মানুষের হাতেই রয়েছে পূজার থালা, সিদূঁর , নারকেল সহ নানা সামগ্রী। মন্দির থেকে ফিরে আসা সবার কপালে বড় সিদূঁরে টিপ চাঁদের মতো জলজলে। ওপারে ক্যাবল কারে যেতে টিকেট লাগবে ৫’শ টাকা।

ইতিহাস বলে, ৪০০ বছর আগের ঘটনা। তখন নেপালের গোরখা রাজা রাম শাহর স্ত্রী  অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারিণী ছিলেন। তাঁর এই অলৌকিকতার খবর জানতেন শুধু একজন, তাঁরই সেবাদাস লক্ষ্মণ থাপা। একদিন দৈবাৎ রাজা দেখেন তাঁর স্ত্রী দেবীর আসনে বসে আছেন, তাঁর সামনে সিংহের অবয়ব নিয়ে আছে লক্ষ্মণ থাপা। রাজা এই দৃশ্য দেখামাত্রই অকস্মাৎ মৃত্যুবরণ করেন। রাজার মৃত্যু হলে তাঁর স্ত্রীকেও ‘সতী’ হতে হয়। রাজার শবানলে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দেন রানি। আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার আগে রানি তাঁর দাসীকে বলে যান যে কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আবার ফেরত আসবেন।

এ ঘটনার মাস ছয়েক পর, এক কৃষক জমি চাষ করার সময় তার লাঙলের আগায় এক খন্ড  পাথর দেখতে পায়। কৃষক দেখে, লাঙলের খোঁচা লেগে পাথর  থেকে একসঙ্গে রক্ত আর দুধ বেরোচ্ছে। এ খবর শোনার পর লক্ষ্মণ থাপা সে জায়গায় এসে হিন্দুধর্মের  কিছু মন্ত্রবাণী পড়া শুরু  করে দেন এবং এখানে একটি স্থাপনা তৈরি করে  ধর্মচর্চা করেন। দিন দিন খবর রটে যায়, এই স্থাপনায় এসে যেকোনো ইচ্ছা পূরণের কথা বললে সেই মনোকামনা পূর্ণ হয়। কালের পরিক্রমায় প্রায় সাড়ে চার হাজার ফুট ওপরে গড়ে উঠেছে এক দৃষ্টিনন্দন মন্দির। মনোকামনা মন্দিরটি নেপালের গোরখা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে। দূরত্বগত অবস্থানে এটি পোখরা আর কাঠমান্ডুর  প্রায় মাঝামাঝি একটা জায়গায়। এ কথা ঠিক নেপালে রয়েছে দেখার মতো কিছু মন্দির। পোখরায়  রয়েছে প্রাচীন ভীমসেন মন্দির,  বিন্ধ্যা বাসিনী মন্দির । এ ছাড়া পোখরায় রয়েছে শ্বেতী রিভার গর্জ, ডেভিস (দেবী) ফলস, মহেন্দ্র গুহা, গোর্খা মিউজিয়াম। মনোকামনায় যেতে উঠতে হলো ক্যাবল কারে। ক্যাবল কারেও চললো ছবি তোলা। নিচে তিরতির বয়ে চলেছে ত্রিশূল নদী। মিনিট পনেরো পর পাহাড়ের চূড়ায়। নেমে কিছুদূর হেঁটেই মনোকামনা মন্দির। আশপাশেই প্রচুর দোকানের সারি। রয়েছে ফুল, মিষ্টি ও ফলের দোকান। সব দোকানেই ভীড় কারণ এখানে যারা আসেন তাদের আশি শতাংশই আসেন পূজা দিতে। বাকিরা পর্যটক। এখানে হোটেল রেস্তোরাও রয়েছে। অনেকেই রাত কাটান এখানে। মন্দির টি তিন স্তরের ছাদ দিয়ে বানানো। অনেকটা প্যাগোডার মতো। মন্দিরের পূর্ব দিকে এক সারিতে বসা বেশ কয়েকজন সন্ন্যাসী। পড়নে গেরুয়া, লাল উত্তরীয়ো ও কপালে চন্দন ও সিদূঁর। তাদের কাছে ধ্যান মগ্ন হয়ে বসে আছেন দেশি-বিদেশি মানুষ। বোঝাই যায় এরা বেশ সংকটে রয়েছেন।

আমরা প্রবেশ করলাম পোখরা শহরে। ৩০০০ ফুট উচু পোখরা শহর। পোখরা অর্থ জলাশয়।  শহরের ভেতর  বেশ কয়েকটি লেক , নামের সার্থকতা ফুটে উঠেছে। এর মধ্যে ফেওয়া লেক অন্যতম। ফেওয়া লেক-৪ কিলো মিটার দীর্ঘ। প্রস্থ ১,৫ কিলোমিটার। লেকে রং বেরং এর নৌকা। প্যাডেল বোট, পাল তলা নৌকা, টিকেট ৫’শ রুপি। লেকের মাঝে মন্দির। নৌকায় চেপে দেখে আসা যায় ওপারের বারাহী মন্দির। পড়নে অবশ্যই থাকতে হবে লাইফ জ্যাকেট।  আমরা লেকের পাড়ে পৌছালাম ঠিক দুপর বেলা। লেকে পড়েছে পাশের পর্বতমালার ছায়া। এখানেও দলে দলে মানুষ ছুটেছে নৌকা চেপে বারাহি মন্দিরে। তীরে দাঁড়িয়ে আমার মনে পড়লো, আজমীর শরিফেও এমন একটি লেক রয়েছে তার মাঝে একটি রিসোর্ট রয়েছে। জল বেশ কালো, সে জল পেরিয়ে রিসোর্ট যেতে মন চ্য়ানি।  মন্দিরে যেতে বোট ভাড়া করতে হলো ৫’শ টাকায়। লাইফ জ্যাকেটের জন্য ৫’ শ রুপি। লেকের অপূর্ব নীল রং এর পানি। দূরে দেখা গেল প্যরাসুট নিয় উড়ছে অনেকে। জানা গেল প্যারাসুট করে হিমালয় পাদদেশেও যাওয়া যায়।
শেত্বী রির্ভারস গর্জ লেখা একটা গেটের সামনে গাড়ি থামলো। ঢুকতেই পানির গর্জন। সবাই ইতি উতি চাইলো-এ জলের উৎস কি? কাঠের  সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলাম। কাঠের সেতুর   নিচে বহু নিচে খাদে বয়ে চলেছে জলস্রোত। সেতুর শেষ মাথায় লাল কাপড় পড়া, কপালে সিদূঁর ও চন্দন মাখা এক সন্ন্যাসী দাড়িয়ে এক বালতি পানি নিয়ে। এ পানি খেলে মনস্কামনা পূর্ন হয়। আমি খেলাম । একটু ভেতরেই এক প্রতিমা। সন্ন্য্যাসী জানালেন এখানে পূজা দিলে বিফল হওয়ার পথ নেই। সর্বধর্মে বিশ্বাসী বাচ্চু ভাই (ব্যবসায়ী) পূজা দিলেন। সেতুর নিচেই ঝর্না। কালো পাহাড়ের গা চিড়ে প্রচন্ড শব্দ নিয়ে ছুটে চলছে  জলের প্রপাত। ঠিক উপরেই সেতুর  মাঝখানে কৃত্রিম পানির জলধারা। জলের রং বেশ সাদা।  তাই ফলকে লেখা শ্বেতী রিভারস গর্জ। এখান থেকে বের হয়েই সবাই কমলা কেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এক নেপালী নারী বিক্রেতা। ডজন পঞ্চাশ রুপি। ব্যাগ খুলে দেখি খুচরা নেই। বেশ জোরেই স্বগোতিক্ত করলাম , হায় হায় খুচরাই তো নেই।সাঈদ ভাই এগিয়ে এলেন,  নিন, খুচরা। হাত বাড়িয়ে নিলাম পঞ্চাশ রুপি।

এরপর ডেভি’স ফলস (দেবীর জলপ্রপাত)। ঢোকার আগেই রউফ ভাই বললেন কে কি কিনবেন, এখান থেকেই কিনবেন। পোখরায় এর চেয়ে স্বস্তায় আর পাওয়া যাবে না। এখানে ঢুকতেই  গেটের মুখে রয়েছে বড়সড় বাজার। কি নেই এখানে, পোশাকের আতিশয্য, গহনার খনি। পরে দেখা গেছে  দামও কাঠমুন্ডুর চেয়ে কম। ডেভিস ফলসে ঢুকতে  এখানে টিকেট ৫০ রুপি। ডেভিস ফলস সম্পর্কে বলা হয় এটি ফেওয়া লেকের পানি থেকে উৎপন্ন। ঝর্না নেমে এসেছে বহুদূর থেকে।  এ ঝর্নার কাছে যেতে হলে আবার সেই উচঁনিচু সিঁড়ি। একেবারে খাদের কাছে গিয়ে দেখা যায়, শ্যাওলা পড়া জমাট সবুজ ও কালচে  পাথরের ফাঁক দিয়ে ভয়াবহ জোরে বেরিয়ে আসছে  জলস্রোত।  প্রচন্ড খরস্রোতা ঝর্নার কলতানে, ঝরঝর শব্দে  ঝিম ধরে যায় মাথা। মননে, চিন্তায়, প্রকৃতির কাছে অবনত হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প কাজ করে না। জনশ্রুত রয়েছে এখানে কোন অভিমানী মেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। ঝর্নার জলে নাকি, পাহাড় থেকে পড়ে তা জানা যায়নি। মেয়েটির নাম দেবী। তাকে হাজার বছর মনে রাখতেই এ জলপ্রপাতের নাম ডেভিস ফরষ। মনে পড়লো, আমার দেশে কত নির্যতিতা মেয়ে লজ্জায় অপমানে আত্মহত্যা করছে। তাদের স্মৃতি চিহৃ কেউ রাখেনা। প্রত্যেকের বাড়ির সামনে একটি স্মৃতি চিহৃ রাখলে যে বখাটেদের জন্য তারা এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়, তাদের কুকীর্তিটা মানুষকে বিস্মৃত হতে দিতো না। নেপালে আসার পর আমি খুব বেশি স্মৃতি ও দেশ কাতর হয়ে পড়ছি। ডেভিস ফলসে এসে জসিম ভাই (সাবেক সরকারী কর্মকর্তা) ও ভাবীকে ছবি তুলতে দেখলাম। জসিম ভাই খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। এ দুদিনে ভাবীকে আমি একবারও একটা কথাও বলতে শুনিনি।

ডেভিস ফলসেও  রয়েছে মনো কামনা পূর্ণ হওয়া সুযোগ। ফেরার পথে সিড়িঁ দিয়ে উঠতেই দেখলাম রেলিং দিয়ে ঘেরা গোল একটি জায়গা জুড়ে ছোটখাট ভীড়। বেশির ভাগই অল্প বয়েসী। কৃত্রিম একটি জলাশয়। সে জলের মধ্যে একটি মূর্তি। তার পায়ের কাছে পড়ে রয়েছে পয়সার স্তূপ। একটু দূর থেকে ছুড়ে ছুড়ে মারতে হবে। ছুড়ে দেয়া পয়সা যদি ঐ মূর্তির গায়ে লাগে তবে তার মনোস্কামনা পূর্ন হবে। এবারও  আমি ব্যাগ খুঁজে খুচরা পয়সা  পেলাম না।
পোখরায় রয়েছে  মহেন্দ্র গুহা। এখানে ঢুকতে হলে টর্চ লাগবে। ঘুটঘুটে অন্ধকার নিচে জলের স্রোত। উপরে মাথা ঠেকে যায়, পায়ের নিচে পানি। একটা ভয় সাপের মতো শরীর বেয়ে নামতে লাগলো।

পোখরায় আমরা উঠেছি হোটেল ডিউডিলিওনে। মানে টি রুট। বাংলা করলে চায়ের শেকড়। হোটেলটি বেশ বড়। ঢুকতেই হাতের বায়ে ডাইনিং হল। একটু পেরিয়ে লনের পর মূল হোটেল। আমি আর হালিমা আপা পেলাম নিতলায় ৩১২ নাম্বার রুম। এ হোটেলটিও নামী ও জৌলুসপূর্ণ। রুমটি বেশ বড়সড়। ডাবল বেডেড। রুম হীটার, এসি রয়েছে, রয়েছে চা খাওয়ার যাবতীয় সরঞ্জাম, টিভি। নেপালে নেপালী চ্যানেলই বেশি চলে। শুধু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে স্টার পলাস আনা গেল। দেশের কোনও খবরই জানতে পারছি না। আবারও মেয়েটার মুখ মনে পড়লো।
হালিমা নামাজ পড়বেন, তাই তাকেই আগে ওয়াশরুমে পাঠালাম। আমি ঢুতে তো তাজ্জব। রুমের চেয়ে ওয়াশরুম ভাল। গরম পানি, বাথটব হাতছানি দিয়ে ডাকলো। ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখলাম সেলফ সার্ভিস। সাজানো হরেক রকম খাবার। ভাত, পোলাউ, রুটি, ডাল, চিকেন, সবজি কয়েক রকমের, স্যূপ, পাপড়,করলার  আচার, মিষ্টি, দই। পেট পুড়ে খেয়ে আমরা বেরহলাম পোখরা দেখতে। হেঁটে হেঁটে ঘরছি অঅর দোকানগুলোতে ঢু মারছি। গরম কাপড়ের নানা ধরনের সম্ভার। দোকানী তরুণ। জিঞ্গেস করলেন, কোথা থেকে এসেছি। ইংরেজির উত্তর তো ইংরেজীতেই দেয়া উচিত। বললাম . উই অঅর ফ্রম বাংলাদেশ।  তরুণের মুখটা উজ্জবল হয়ে উঠলো- সাকিব আল হাসান? আমি বেশ জোরেই বললাম–ইয়েস অল রাউন্ডার।  স্বপ্না ভাবী খাবারের দোকান খুঁ জছেন অঅর বলছেন নেপালে এসে মোমো খাব না? মোমো চাল দিয়ে বানানো তিব্বতী এক খাবার।   চাবির রিং ও গহনার দোকানের বিক্রেতা যখন শুনলেন, আমরা বাংলাদেশের, তিনি হেসে হেসে নেপালী উচ্চরণে  বললেন শেখ মুজিবুর রহমান। প্রবীন নেপালী জানালেন, তিনি ৭১ সালের যুদ্ধ থেকেই বাংলাদেশের কথা জানেন। প্রায় সবাই বড় বড় প্যাকেট নিয়ে হোটেলে ঢুকলাম শুধু ফেরদৌসী খালি হাতে। কারণ সে  কয়েকদিন আগে চীন থেকে এসেছে। রাতে খাওয়ার সময় রউফ ভাই বললেন, ঠিক ছটায় লনে আসবেন, গাড়ি এক মিনিটও দেরী করবে না।

তখনও রাতের আর্ধার কাটেনি। নেপালের আকাশে অজস্র তঁরা। গাড়ির কাছে গিয়ে ভাবলাম আমরা আগে, গাড়িতে উঠে দেখলাম শতকরা আশি ভাগই এসে গেছে। হন্তদন্দ হয়ে এলো ফেরদৌসী। তার রুমমেট  ডেইজী এলো না। বাচ্চু ভাই বললেন, হাজার হাজার টাকা খরচ করে কি ঘুমাতে এসেছি।

শরন কোট -৫ কিলোমিটার দূরে। এখানেই পড়ে সূর্য্যরে প্রথম অলো। এখানেই রয়েছে অন্নপূর্না শৃঙ্গ, পর্বতচূড়া। অন্নপূর্নায় ফিস টেইল( মৎস্যপূচ্ছ) মাছের লেজের মতো মৎস্যপূচ্ছ ৬,৯৭৭ মিটার উচুঁ। এ অন্নপূর্ণাতেই হিমালয়ের পশ্চিমাংশের কয়েকটি চূড়ার সারি গর্বিত ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অন্নপূর্নার সবচাইতে উচুঁ চূড়াটির উচ্চতা ৮০০০ মিটার। তুষারবৃত এ চূড়ায় যখন সূর্য্যরে প্রথম আলোটি পড়ে, সে দৃশ্য বিস্ময়কর। শুধু এ দৃশ্য দেখার জন্য হাজারো মানুষ ভোর হওয়ার আগেই প্রতিদিন এখানে এসে ভীড় জমায়।  আমরা চলেছি জগৎ বিখ্যাত  মাছের লেজ (মৎস্যপূচ্ছ) দেখতে। অন্নপূর্না পৌছার প্রায় আধমাইল আগেই দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি গাড়ি ও বাস দেখে বুঝলাম  আমাদের গন্তব্য কাছেই। একটি পাহাড়ের ওপর বড় সড় জটলা।  চৌকস ড্রাইভার রাম সে জটলা ছাড়িয়ে গাড়ি রাখলো। গাড়ি থেকে নেমেই  আবার মুগ্ধ হওয়ার পালা। চারপাশেই পাহাড় আর পাহাড়। হেঁটে চললাম সেই জটলার দিকে। সিড়ির পর সিড়ি ভেঙ্গে উঠলাম উচুঁ সমতলে। এটিও  পাহাড় কেটে বানানো হয়েছ। হাজার হাজার মানুষ সামনের পাহাড় সারির  দিকে তাকিয়ে। একর পর এক পর্বত শৃঙ্গ। ধ্যান ভেঙ্গে দিল নেপালী কন্ঠের হিন্দি স্বর- চা লিজিয়ে, গরম চা দাম ২৫ টাকা। কবি মহাদেব সাহার, আমি এমন একজন বন্ধু চাই, গভীর শীতের রাতে যার মুখ মনে হবে সবুজ চায়ের প্যাকেট- এ অনুভবে চা নিলাম। এখানে কয়েকজন নারী মিলে গড়ে তুলেছে চাখানা ও গরম শালের দোকান। এখানে বসেই এক নারী খটাখট শাল বুনে যাচ্ছে। সাধারণ মার্কেটের চেয়ে এখানে দাম বেশি।  তাই খুব ধনী ছাড়া কেউ কিছুই কিনছে না। আচমকা মৃদ্যু শোরগোল। সামনেই বেশ দূরের পর্ব র্শঙ্গে ঢেউ খেলে যাচ্ছে সূর্য্যে রশ্মি। সূর্য্য উঠছে মহিমান্বিত স্যেন্দর্য্য নিয়ে। মনে পড়লো কুয়াকাটার  সূর্য উদয়। গোলাপী আভায় মনে ছুঁয়ে যাওয়া সূর্য্য ওঠা- দুনিয়া যা জানে না। কে, কবে একথা সবাইকে জানাবে?

অন্নপূর্নায় সূর্য্য উঠছে। ধীরে ধীরে লাল আভা লাগছে ম ৎস্য পূচ্ছে। মাছের লেজকে সোজাভাবে ধরলে  মধ্যে একটু বাঁক খেয়ে দুদিক যেভাবে সোজা উঠে যায়, মৎস্যপূচ্ছও তেমন। আলোয় ভুবন ভরিয়ে দিয়ে সূর্য্য পরিপূর্ন মুখ তুললো।

এই পোস্ট শেয়ার করুন:

এই বিভাগের আরো খবর

নামাযের সময়

সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:৪৫
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:৪২
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৫০
  • ১১:৫৪
  • ৪:০১
  • ৫:৪২
  • ৬:৫৬
  • ৬:০২

বিগত মাসের খবরগুলি

শুক্র শনি রবি সোম মঙ্গল বু বৃহ
 
১০
১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭৩০৩১