নিউজ ডেস্ক:
ঢাকায় সমাবেশ করতে না দেওয়া এবং কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল রোববার দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করেছে বিএনপি। দলটির গতকালের বিক্ষোভ কর্মসূচিতেও বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ বাধা দিয়েছে।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করতে ওই দিন সারা দেশে বিক্ষোভ এবং ৭ জানুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। ৫ জানুয়ারি অন্তত ১৬টি জেলায় বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা এসেছিল; আর ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি মেলেনি।এসবের প্রতিবাদে গতকাল দেশের সব জেলা ও মহানগর এবং রাজধানীর থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয় বিএনপি। তবে সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় গতকালও বিএনপির কর্মসূচি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
সরকারের এই আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির নেতারা মনে করছেন, বিএনপির ব্যাপারে সরকারের কঠোর অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি, ভবিষ্যতে সরকার আরও কঠোর হবে। বিএনপি যতই নমনীয় হোক না কেন, সরকারের আচরণে শিগগিরই কোনো পরিবর্তন আসবে না।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে (২০১৫ সালে) সমাবেশ করতে না পেরে টানা অবরোধের ডাক দিয়েছিল বিএনপি। তিন মাস সে কর্মসূচি চলে। কিন্তু সরকার পতন হয়নি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে কর্মসূচি থেকে ফিরে আসার পর গত বছর ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে পেরেছিল। সেদিন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তিনি সমাধান চান।
নেতারা বলেছেন, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি থেকে বিএনপি ‘ইতিবাচক’ রাজনীতিতে থাকার দিকে জোর দেয়। এরই অংশ হিসেবে গত বছর দলের কাউন্সিলে একটি রূপকল্প তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি জঙ্গিবাদ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরা এবং নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর কিছুটা আশাবাদী হয়েছিল বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তির দিন ঘিরে সরকারের আচরণ আবার তাদের সংশয়ে ফেলেছে। তাঁরা মনে করছেন, সরকার বিএনপিকে কোনো সুযোগ দিতে চায় না, বরং বিএনপিকে আবারও সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। তবে বিএনপি এখনই হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে নামার চিন্তা করছে না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, সরকারের আচরণে কোনো নমনীয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে না।
বিভিন্ন জায়গায় বাধা
গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা ও তাণ্ডব চালিয়েছে। আগের রাতে নেতা-কর্মীদের বাসায় পুলিশ গিয়ে অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। রাজধানীর শাহ আলী থানা বিএনপির মিছিল থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার এবং কামরাঙ্গীরচরে মিছিলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা চালিয়ে সাতজনকে আহত করে।
বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিরা জানান, গতকাল সিলেট শহরের তালতলা এলাকার রেজিস্টারি মাঠে বিএনপিকে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে ফিরিয়ে দেয়।
ময়মনসিংহ জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা। দলটি জানায়, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির কার্যালয় থেকে মিছিল বের করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পুলিশ নেতা-কর্মীদের ঘিরে ফেলে। মিছিল করতে না পেরে নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
খাগড়াছড়িতে দলীয় কার্যালয় থেকে বিএনপি মিছিল নিয়ে মূল সড়কে যেতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি তারেক মোহাম্মদ আবদুল হান্নানের দাবি, ‘বিএনপির অপর একটি গ্রুপ এসে ঝামেলা করতে পারে—এমন আশঙ্কায় আমরা নিরাপত্তা দিয়েছি।’
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বরিশাল মহানগর বিএনপি দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল বের করলে সেটি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। জামালপুর শহরের শফি মিয়ার বাজার এলাকার দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ঢাকা মহানগর বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজধানীর প্রায় সব কটি থানায় নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।