মো.ফরিদ উদ্দিন, লামা প্রতিনিধি: বান্দরবানের লামার সরই ইউনিয়নে গতকাল মঙ্গলবার পাহাড় ধসে একই পরিবারে ৩ জন নিহত হয়েছে। টানা বৃষ্টি, বৈরী আবহাওয়া ও লামা হতে সরই রাস্তাার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। বৈরী এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় লামা আলীকদম সেনা জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল মাহাবুবুর রহমান পিএসসি এর নির্দেশে দ্রæত মাঠে নামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী লামা-আলীকদম জোনের ২টি সেনা সদস্যের টিম।
উদ্ধার অভিযানের ১ম টিমে নেতৃত্বে প্রদান করেন মেজর ইসরাফ আহমেদ। প্রথম সেনা টিম প্রচুর বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে লামা-সরই সড়কের বাইশারী ও ডিসি রোড এলাকার বিভিন্ন স্থানে ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি অপসারণ করে দ্রæত গাড়ি যোগাযোগ সচল করে এবং পাহাড় ধসের ঘটনায় পৌছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। সেনা সদস্যরা প্রথমে ঘটনাস্থল রেকি করে এবং দুই ঘন্টা ব্যাপী প্রচেষ্টা চালিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় মৃতদের লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের পরেও দীর্ঘক্ষণ কাজ করে বাড়ির উপরে ধসে পড়া মাটি সরিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ঝুঁকিমুক্ত করেন। উদ্ধার অভিযান চলমান অবস্থায় আলীকদম ১৮ ইস্ট বেঙ্গল এর অধিনায়ক জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল মাহাবুবুর রহমান পিএসসি উপ-অধিনায়ক মেজর আব্দুল কাদের সহ সঙ্গীয় সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। জোন কমান্ডারের নেতৃত্বে ২য় টিমও উদ্ধার অভিযানে যুক্ত হয়। উদ্ধার অভিযান শেষে লাশের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর ও দাফন কাপন সম্পন্ন করে সন্ধ্যা ৭টায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সেনাবাহিনী। পরে সেনাবহিনীর পক্ষ থেকে জোন কমান্ডার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে নগদ টাকা ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
সেনাবাহিনীর সাথে উদ্ধার অভিযানে যুক্ত হন লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি, লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা, সরই ইউপি চেয়ারম্যান, ফায়ার সার্ভিস, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও স্থানীয়রা।
সরই ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফরিদ উল আলম বলেন, গতকাল মঙ্গলবার লামার সরই এলাকার পাহাড় ধসের ঘটনায় লামা-আলীকদম সেনা জোনের সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।দুর্গম পাহাড়ে যে কোন ধরনের সমস্যায় আমরা সেনাবাহিনীকে বন্ধুর মত সবসময় পাশে পাই।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে-এ জান্নাত রুমি বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় ধসে পড়া মাটি অপসারণ না করলে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্যদের ঘটনাস্থলে দ্রæত পৌছানো অসম্ভব হত। তিনি লামা-আলীকদম সেনা জোন ১৮ ইস্ট বেঙ্গলকে ধন্যবাদ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড কালাইয়া পাড়া এলাকায় মঙ্গলবার (৩ জুলাই) বেলা ২টায় পাহাড় ধসে মো. হানিফ (৩০), রাজিয়া বেগম (২৫) ও হালিমা আক্তার (৩) নামে তিনজন নিহত হয়। দুপুরে বাড়ির বারান্দায় ঘুমন্ত অবস্থায় পাহাড়ের মাটি এসে মাটির ঘরের দেয়ালে চাপ দিলে ঘরের দেয়াল গায়ের উপর পড়ে তিনজন নিহত হয়।
এদিকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এই সময় ঘরে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যায়। আখি মনি নামের ৬ বছরের অবুঝ শিশুিিট দাদার দাদীর সাথে গল্প করতে গিয়ে মা বাবা কে হারিয়ে বেচে যায়।
সময়ের ব্যাবধানে অপ্রত্যাশিত প্রাকৃতিক দুর্ঘটনায় একটি পরিবারের সুখের বন্ধন নিমিষেই তছনছ হয়ে গেছে যেন, তারপরেও বঁচে থাকার প্রবল মানসিকতা শোককে শক্তিতে রুপান্তরের আশ্বাসে মাতৃত্বের পরম পুলকে ঐ পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য আঁখি মণিকে স্নেহের ক্রোড়ে আঁকড়ে ধরলেন, আদরে আদরে ভরিয়ে দিলেন লামা উপজেলা নিবার্হী অফিসার নুরে এ জান্নাত রুমি।
স্বজন হারানো কষ্টক্লিষ্ট কোমলমতি মুখখানায়।ঐ পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য মোঃ মঈনুদ্দিন এর হাতে তুলে দিলেন পরিধেয় বস্ত্রাদি, দেখভাল করাসহ শিক্ষা পরিচালনার ব্যায়ভার।এর ব্যক্তিগত পক্ষ হতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার কে সাহায্য প্রদান করেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সরই ইউপি চেয়ারম্যান, সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।