রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে সবসময়ই তৎপর ইসি
বিপ্লব নাথ (চট্টগ্রাম) : মিয়ানমারের সোনাদেরদ্বারা নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা চলমান ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ ৩২টি এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নাম-পরিচয় ও তথ্য গোপন করে স্থানীয়দের সহায়তা নিয়ে অনেকেই বাংলাদেশে ভোটার হচ্ছেন এমন খবরে উদ্বিগ্ন ইসি এদেশীয় সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে তাদের এদেশীয় আত্মীয়রা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি হয়ে উঠতে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে কমিশনের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সহায়তা বন্ধে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এখন থেকে কেউ রোহিঙ্গাদের ভোটার হতে সহায়তা করলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
পরিস্থিতি কমিশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে এলে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় নাম উঠানো ঠেকাতে নানামুখি পদক্ষেপ নিতে হয় কমিশনকে। এমনকি, গত কয়েকদিনে নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে (অব.) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী একদফা এবং কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব দু’দফায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় সফর করে বিশেষ বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে এসেছেন ভোটার সংশ্লিষ্টদের। কমিশনের নেয়া সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে ফৌজদারী মামলার সিদ্ধান্ত।
ইসি আরো জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে সবসময়ই তৎপর ইসি। বিগত দিনের ভোটার হালানাগাদ তালিকা অনুযায়ী এবারো বিশেষ সর্তকতা ও নানামুখি পদক্ষেপ নিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা। সবকিছু ঠিকঠাক চললেও ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় পুলিশের নিরাপত্তা চৌকিতে হামলাকে কেন্দ্র করে নিজ দেশীয় এই নিরীহ নাগরিকদের ওপর দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও নির্যাতন শুরু হয়।
নিরস্ত্র এসব অসহায় মানুষ প্রাণে বাঁচতে মিয়ানমার সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। অনেক রোহিঙ্গা সরকার নির্ধারিত এলাকার গণ্ডি পেরিয়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের পার্শ্ববর্তী জেলায় আত্মগোপন করে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আত্মীয়তার সূত্রে এবং নানা কৌশল অবলম্বন করে ভোটার তালিকায় নাম উঠাতে তৎপর হয়ে উঠে।
কমিশনের সহকারি সচিব মো. মোশারফ হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়েছে, চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে জাল, ভুয়া জন্মসনদ, নাগরিক সনদ এবং ভুয়া পিতা-মাতা দেখিয়ে ভোটার হওয়া অব্যাহত রেখেছে, যা ইসি বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছে। তাই রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের স্বপক্ষে মিথ্যা তথ্য প্রদান, মিথ্যা কাগজপত্র ইস্যু অথবা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করলে সেটি কমিশনের কাছে প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করা হবে। ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এর ১৮ ধারা অনুযায়ী এই মামলা করা হবে।
এদিকে গত সপ্তাহে আরেক চিঠিতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় ভোটার নাগরিকদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য ১৫ দিন সময় বাড়িয়েছে ইসি। ৫ সেপ্টেম্বর এসব এলাকায় নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে দফায় দফায় কর্মশালা আয়োজনের জন্য আরেকটি চিঠিতে চট্টগ্রামের পরিচালক স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দিয়েছে ইসি। এ ছাড়া আগের ২১ উপজেলার সঙ্গে আরো ১১টি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা বাড়িয়ে বিশেষ এলাকার সংখ্যা এখন ৩২ করা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলার ৮টি উপজেলা, বান্দরবানের ৭টি, রাঙ্গামাটির ৮ ও চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলা।
উল্লেখ্য, ২৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এদের অনেকেই চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। বেশ কিছু স্থানে আত্মগোপনে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা প্রশাসনের হাতে ধরাও পড়েছে।