নিউজ ডেস্ক:
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তখনও তিনি ৫ ফুট সাড়ে ৬। তখনও তার গাত্রবর্ণ বাদামি। তখনও তার পুরন্ত ঠোঁট যথেষ্ট আমন্ত্রণী।
তখনও তিনি ভান্ডারকরের ‘ফ্যাশন’’এর নায়িকা হিসেবে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (পরে যিনি বলবেন, এখন অনেক নায়িকা–কেন্দ্রিক ছবি সফল হলেও শুরুটা কিন্তু ‘ফ্যাশন’ দিয়ে। আধুনিক হিন্দি ছবিতে সেই প্রথম একটি মেয়ের নায়কের ভূমিকায় অভিনয়)। তখনও তার আস্তানা মুম্বাই শহর। আর ‘হোমটাউন’ উত্তরপ্রদেশের বরেলী।
এখনও তিনি গ্ল্যামার গার্ল। সেটা ঘষেমেজে আরও খানিকটা বাড়িয়েই নিয়েছেন। তবে এখন তিনি মূলত নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা (মুম্বাইয়ে নেমে নাকি গাড়ির কাচ নামিয়ে দেন। যাতে আরব সাগরের নোনা হাওয়া ঝাপ্টা মারতে পারে তার খোলা চুলে)। ‘টাইম ম্যাগাজিন’এর বিচারে দুনিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জনের একজন তো ছিলেনই। এখন তিনি ‘ফোর্বস ম্যাগাজিন’’এর পৃথিবীর ১০০ জন সবচেয়ে শক্তিশালী নারীর তালিকাতেও রয়েছেন তিনি।
হতে পারে তালিকার ৯৭ নম্বরে। হতে পারে সেই তালিকায় তার অনেক আগে হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে কে রোওলিং বা আন সান সু কি। তাতে কী এল-গেল! ঠিকই টুইট করেছেন ‘দেশি গার্ল’, ‘অনার্ড টু স্ট্যান্ড অ্যালংসাইড দিস অ্যামেজিং ট্রেলব্লেজার্স’।
জন্ম ১৯৮২। জামশেদপুরে। আপাতত উচ্ছ্বল পঁয়ত্রিশ। বাবা–মা দু’জনেই একদা সেনাবাহিনীর চিকিৎসক। বদলির চাকরির ফলে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস। লেহ থেকে পুনে। স্কুল বদলাতে বদলাতে শেষ পর্যন্ত ১৩ বছর বয়সে পড়াশোনার জন্য আমেরিকায় পাড়ি। ফিরে আসার পর মা এলেবেলেভাবে বিনা প্রত্যাশায় ‘মিস ইন্ডিয়া’ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার জন্য অপেশাদার এক ফটোগ্রাফারের তোলা কয়েকটা ছবি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। বাকিটা রূপকথার মতো। যে রূপকথা একের পর এক পরত খুলতে খুলতে রাজকন্যাকে নিয়ে যায় তার ঈপ্সিত রাজপুত্রের কাছে।
প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে গেল ভারতীয় গ্ল্যামারজগতের শীর্ষে। ২০০০ সালে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’। বিশ্বসুন্দরী হওয়া মানে হিন্দি ছবির দরজা হাট করে খুলে-যাওয়া। প্রথাগত সুন্দরী নন। গায়ের রং চাপা। নাক তেমন টিকোল নয়। কিন্তু প্রিয়াঙ্কাকে এগিয়ে দিয়েছিল তার আত্মবিশ্বাস। জীবিত কোন মানুষকে ‘আদর্শ’ মনে করেন? বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার ফাইনালে সপ্তদশী বলেছিলেন, ‘মাদার টেরিজা। ‘ যিনি তখন জীবিত নন! কিন্তু ওই যে! প্রবল আত্মবিশ্বাস! প্রিয়াঙ্কাই চ্যাম্পিয়ন!
এক, আত্মবিশ্বাস (এটা ছোটবেলা থেকেই প্রচণ্ড বেশি)। দুই, সঠিক সুযোগ চেনার ক্ষমতা (‘জীবন আপনাকে অনেক সুযোগ দেবে। আপনাকে ঠিকঠাকগুলো চিনতে হবে’)।
দিনরাত কাজ করতে করতে সেটে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। শুটিয়ের সময় লেহেঙ্গাতে আগুন ধরে যায়। সেটে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাসপাতালে যান। মার্কিন টেলিভিশনে অডিশন দেওয়ার আগে উচ্চারণের মাস্টারমশাই রাখেন। আমেরিকান অ্যাকসেন্টে ‘টেররিজম’ উচ্চারণ করতে তিনদিন লেগে যায়। কিন্তু হাল ছাড়েন না।
২০১৫ থেকে ‘কোয়ান্টিকো’র অভিনেত্রী। ইতিমধ্যেই দর্শকের বিচারে পুরস্কৃত। দেশি-বিদেশি খবরের কাগজে কলাম লেখা। ২০১৬ সালে অস্কারের মঞ্চে হাজির পুরস্কারদাতা হিসেবে। স্কুলের পাঠ্যবইয়ে তাকে নিয়ে পরিচ্ছেদ। ১০ বছর ধরে ‘ইউনিসেফ’এর সঙ্গে বিশ্বজুড়ে কাজ করছেন ভারতে ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্টের রানী।
প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আই লাইক ব্রেকিং রুল্স। রুল্স আর বোরিং। ব্রেকিং রুল্স ইজ ফ্যাসিনেটিং!
বিডি প্রতিদিন