বর্তমান অন্তবর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচন দিলে জামায়াতে ইসলামী ভালোভাবে লড়েই ক্ষমতায় আসতে চাইছে। দলটি দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে রাজনীতি ভালোভাবে করার সুযোগ পায়নি। নির্বাচনে তাদের সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকবে বিএনপি এমনটিই মনে করছে এ দল। কারণ আওয়ামী লীগের এমন হত্যাকাণ্ডের পর রাজনীতি করার সুযোগ নেই বলে মনে করেন দলের নেতারা।
সেজন্য তারা বেশ কয়েকটি ছক করেছে। আওয়ামী লীগের অত্যাচারের কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করা ও সেই দলের সমর্থকদের আশ্বস্ত করা যে, জামায়াত প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। নিরাপত্তা দিতে পারে সবার, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের।
দুই, আওয়ামী লীগবিরোধী দলগুলোকে এক সুতায় গাঁথার চেষ্টা করছে দলটি। ধর্মভিত্তিক ছাড়াও বিএনপির সঙ্গে একসময় যুগপৎ আন্দোলন করা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে পাশে রাখতে চাচ্ছে তারা। এসব দলকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে নির্বাচনী জোটে রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতের।
তিন, জামায়াত ইসলামী বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছে। আলিয়া-কওমীপন্থি আলেমদের মধ্যে বিভাজন দূর করে আলেমদের একতার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে দলটি। আর এই উদ্যোগের কারিগর খোদ জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। ইতোমধ্যে তিনি কওমী-আলিয়ার আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন। জামায়াতের অতীত ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন।
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী দলগুলোকে নিজেদের বলয়ে টানার চেষ্টায় রয়েছে জামায়াত। এই দলগুলোর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব। এর সুফলও পেয়েছে দলটি। এই দলগুলো জামায়াতের বিষয়ে আগের মতো কট্টর অবস্থানে নেই। তাদের মধ্যে কিছুটা নমনীয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
চার, জামায়াত চাচ্ছে বর্তমান সরকার দেরিতে নির্বাচনের ঘোষণা দিক। এর আগে সংস্কারগুলো হোক। কারণ জামায়াত মনে করে সময় যতো যাবে ততোই তারা মাঠ গোছাতে পারবে। অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচনের দাবি বারবার করে অজনপ্রিয় হয়ে উঠবে এমনটি মনে করছে। কারণ জনগণের বড়ো অংশ দেশে বড় ধরণের গুণগত পরিবর্তন চায়।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, বিএনপি নির্বাচনের জন্য তোড়জোড় করছে, যেটাকে এ মুহূর্তে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি না। এ সময় জাতির ক্রাইসিস চলছে। বিভিন্ন জেলা বন্যার কবলে পড়েছে। এটিকে আমরা এ মুহূর্তের রাজনীতি হিসাবে নিয়েছি। আমরা মনে করি, এ বিষয়গুলো সমাধান না করে নির্বাচনের কথা তোলা যৌক্তিক নয়। তাই আমরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলছি না।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ আগস্ট গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন , ‘আমি আগেই বলেছি, এটা সুপরিকল্পিত একটা চক্রান্ত। কারণ আমরা তো এক-এগারোর কথা ভুলে যাইনি। এক-এগারোতে যেটা হয়েছিল বিরাজনীতিকীকরণের প্রচেষ্টা। যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণ মনে করে না যে এরা সরকার চালাতে পারবে, তারা এ ধরনের বিভিন্ন চিন্তাভাবনা করে, আমি কোনো দলের নাম বলছি না। সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে, আমাদের লড়াইটা গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। সেটার জন্যই তো নির্বাচন। এটা তো আমাদের রাইট। আমরা তো নির্বাচনের জন্যই এতদিন লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি। ’
জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে বাতিল করা হলো, এর জন্য ওই দলগুলো মিলেই তো আমরা আন্দোলন করেছি। অনেককে নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। এমনকি তাদের অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ওই বিষয়কে বাদ দিয়ে আমি তো অন্য রাজনৈতিক চিন্তা এ মুহূর্তে করব না।
পাঁচ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যদি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে তবে বিএনপি আরও চাপের মুখে পড়বে বিএনপি বলে মনে করে জামায়াত।
ছয়, জামায়াত নেতারা এরিমধ্যে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা নেই। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় এবং ভোট পর্যন্ত পরিস্থিতি বদল না হলে নির্বাচন হতে পারে ‘বিএনপি বনাম জামায়াত’। তবে বিএনপির বিপক্ষে এককভাবে পেরে ওঠা সম্ভব নয়, তাই আওয়ামী লীগবিরোধী সব দলকে নিয়ে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী জোট গঠনের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, এককভাবে নির্বাচন করে ১৯৯১ সালে ১২ দশমিক ১ এবং ১৯৯৬ সালের ৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল জামায়াত। পরের দুটি নির্বাচন বিএনপির সঙ্গে জোট করে অংশ নেয়। আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারানোর কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হন জামায়াত নেতারা।