শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সকাল থেকে নাটোর-পাবনা মহাসড়কের লালপুর উপজেলার কদিমচিলান নতুন বাজার থেকে কদিমচিলান নদীরপাড় পর্যন্ত সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করেছেন শত শত মানুষ। প্রথম দিনেই ইট-সুঁড়কি বিছিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে গুঁতিয়ে সমান্তরাল করে কাঁচা-কর্দমাক্ত সড়কটির প্রায় এক তৃতীয়াংশ সংস্কার শেষ করেছেন। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে আরও দু’দিন সময় লাগবে বলেও জানান তারা।
বছর তিনেক আগেও প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে ও স্বেচ্ছাশ্রমে নিজেরাই সড়কটির সংস্কার করেছিলেন গ্রামবাসী। কিন্তু নষ্ট হওয়ায় ফের সংস্কারের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।
উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কদমচিলান। গ্রামটির দুই শতাধিক চাষি প্রায় ৬০০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষাবাদ করেন। কিন্তু উৎপাদিত সবজি বাজারে নিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হয় তাদের।
চলাচলের একমাত্র সড়কটি কর্দমাক্ত ও অনুপোযুক্ত হওয়ায় ভ্যান বা অন্য যানবাহন আসতে নারাজ। দু’একটি যানবাহন এলেও কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হয়। ফলে লোকসানে পড়তে হয় চাষিদের।
তাই আসন্ন শীতকালীন সবজি বাজারজাত করতে বিড়ম্বনা এড়াতে নিজেদের অর্থে স্বেচ্ছাশ্রমে ওই সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন তারা। পরে ৬ গ্রামের তিনশতাধিক পরিবারের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে কাজে নেমে পড়েন।
সরেজমিনে গেলে চাষিরা জানান, ইট-সুঁড়কি কেনা-ভাঙ্গানো ও ট্রাক্টরে বহনে তিন লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হবে। গ্রামবাসী সকলেই সানন্দে সম্পূর্ণ টাকা প্রদান করছেন। এ সড়ক সংস্কারে ৬ গ্রামের মানুষই উপকৃত হবেন।
কদিমচিলান সবজিচাষি উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি মো. রুহুল আমিন জানান, সড়কটি সংস্কারে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। সড়কটি উপজেলার একপ্রান্তে হওয়ায় কারো নজরেই পড়েনি কখনো।
তিনি আরো জানান, গত তিন বছর আগে একইভাবে সবজিচাষিরা নিজেরাই ২ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে সড়কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সংস্কার করেছিলেন। কিন্তু এ বছরের অধিক বৃষ্টিপাতে সড়কটির অবস্থা নাজুক হয়ে ক্রমশ চলাচলের অনুপোযুক্ত হয়ে পড়েছে।
সামনেই শীতকালীন সবজি বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হলে সড়ক সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। তাই সকলে জোটবদ্ধ হয়ে নিজেদের টাকা ও শ্রম দিয়ে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বারো মাস এ এলাকায় সবজি চাষ করে সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা, কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করা হয়। মাঠে বর্তমানে বাঁধাকপি, ফুলকপি, ঢেঁড়শ, বেগুন, ঝিঙে, টমেটো ও মূলার চাষ চলছে। এ সড়ক সংস্কারে উৎপাদিত সব সবজি বাজারজাত সহজতর হবে। তাছাড়া কদমচিলান, ঢুলিয়া, মোকিমপুর, মাদাইমুড়ি ও কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের শিক্ষার্থীরা সহজেই স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে পারবে।
কদিমচিলান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সেলিম রেজা মাস্টার অভিযোগ করেন, সড়কটি সংস্কারে এলজিইডি ও জেলা পরিষদের কাছে কয়েক দফায় লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, সরকারি বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে। অথচ বছরের পর বছর পার হলেও সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সড়কটি পাকা করতে সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে ফের দাবি জানান ইউপি চেয়ারম্যান।