চুয়াডাঙ্গায় কৃষক প্রতিনিধি ও মিলারদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জেলা প্রশাসক
নিউজ ডেস্ক:আসন্ন আমন সংগ্রহ মৌসুম ২০১৯/২০২০ উপলক্ষে কৃষক প্রতিনিধি ও চালকল মালিকদের উদ্দেশ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেছেন, ‘আমরা এবারও প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ও মিলারদের কাছ থেকে চাল কিনতে চাই। কেউ দুর্নীতি করলে, হোক কৃষক প্রতিনিধি, চালকল মালিক, কৃষি বিভাগ বা খাদ্য বিভাগের কেউ, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটাই প্রত্যাশা, সবাই যেন সমান সুযোগ পান। এ ক্ষেত্রে আমরা কেউ দুর্নীতি করব না, দুর্নীতি হতে দেব না।’গতকাল বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে কৃষক প্রতিনিধি ও চালকল মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন জেলা প্রশাসক নজরুর ইসলাম সরকার। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, যখন সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনছে, তখন এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার ৭৫ শতাংশ কৃষক কিছুই জানেন না। তাঁদের সচেতন করতে হবে। কৃষক তালিকা নির্ধারণে যেন স্বচ্ছতা থাকে। কৃষি বিভাগ প্রকৃত কৃষক তালিকা দিতে পারলে, প্রকৃত কৃষকেরা তাঁদের সুবিধা বুঝে পাবেন এবং সচেতন হতে পারবেন। এ কাজে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কৃষি বিভাগ ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে তদারকি করবেন। মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলী হাসান বলেন, এবার তালিকা তৈরির পর তা অনলাইনে আপলোড করার পর আর কারো নাম সংযোজন বা সংশোধনের সুযোগ থাকবে না। এ ছাড়া যাঁরা আমন ধান দেবেন, তাঁরা বোরো ধান দিতে পারবেন না। সর্বোপরি নীতিমালা অনুসারে তালিকা নির্ধারণ ও প্রকাশ করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অস্বচ্ছতা থাকবে না। বোরো মৌসুমের ধারাবাহিকতায় এবারও লটারির মাধ্যমে কৃষক তালিকা নির্ধারণ করা হবে। কৃষক প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য দেন মাসুদউজ্জামান লিটু, সেলিম জাহাঙ্গীর (আলমডাঙ্গা), বরকত আলী (দামুড়হুদা), আতিয়ার রহমান (জীবননগর) ও আব্দুর রহমান (সদর)। কৃষক প্রতিনিধিরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, উৎপাদন খরচের চেয়ে কমমূল্যে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই কৃষকেরা ধানচাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। বোরো মৌসুমে যেভাবে ন্যায্যমূল্যে ধান-সংগ্রহ করা হয়েছিল, এবারও যেন সেই ব্যবস্থা করা হোক। ব্লকে ব্লকে ভাগ করে লটারির মাধ্যমে ধান-সংগ্রহ করতে হবে, তাহলে সব এলাকার কৃষকেরা সমান সুযোগ পাবেন। সেই সঙ্গে কৃষি অফিসারদের মাধ্যমে জমির পরিমাণ ও আবাদ অনুযায়ী বরাদ্দ নির্ধারণ করা গেলে কৃষকেরা আরও উপকৃত হবেন।জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘মজুতের চেয়ে সরবরাহ কম হওয়ায় আমরা চালকল মিল মালিকেরা লোকশান গুনছি। কৃষকদের কাছ থেকেও তাঁদের উৎপাদনের খুব কম পরিমাণ ধান কেনায় তাঁরা বাধ্য হয়ে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আমি অনুরোধ করব, ইউএনওসহ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে তদারকি করুন। তবেই ধান-চাল সংগ্রহে অনিয়ম-দুর্নীতিমুক্ত হবে। মধ্যস্থকারীদের হাত থেকে কৃষক ও চালকল মালিকদের বাঁচানো যাবে। চালকল মালিকেরা নিজেদের বরাদ্দের চাল নিজেরা দিন। এতে করে নিজেরা লাভবান হবেন।’চুয়াডাঙ্গা সদরের চালকল মালিক প্রতিনিধি আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘সরকারিভাবে আমাদের যা বরাদ্দ আসে, তা দিয়ে এক-দুই মাসের বেশি সময় মিল চলে, চলে না। ফলে কিছু মিল বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে গুটি কয়েক অটোমিল মালিকদের জিম্মায় বন্ধ হতে বসেছে হাস্কিং মিলগুলো। হাস্কিং মিল বন্ধ হলে বিপাকে পড়বে প্রান্তিক কৃষরাও।’জীবননগর উপজেলা চালকল মালিক সমিতির প্রতিনিধি আব্দুল ওহাব বলেন, মিল মালিকদের বাঁচাতে হলে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। মিলগুলোর বরাদ্দ বাড়ালে মিলাররা বাজারে যাবে ধান কিনতে। তখন ধানের দাম বাড়বে, কৃষকেরা তাঁদের ন্যায্যমূল্য বুঝে পাবেন। কৃষক বাঁচাতে হলে হাস্কিং মিলগুলোও বাঁচিয়ে রাখতে হবে।এ ছাড়াও মিল মালিকদের মধ্যে বক্তব্য দেন আলমডাঙ্গা উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন, মিল মালিক জনি শাহ, আল্পনা খাতুন প্রমুখ।