নিউজ ডেস্ক:দর্শনায় আফসানা খাতুন দোলা নামের (৯) এক মাদ্রাসা ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে আফসানা খাতুন দোলাকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মাদ্রাসা ছাত্রী চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নবগঠিত নেহালপুর ইউনিয়নের কুন্দিপুর গ্রামের দোলাল উদ্দীনের মেয়ে ও দর্শনা মাসুমা মহিলা মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।
জানা যায়, গত মাসের ২৯ তারিখ আফসানা খাতুন দোলাকে (১০) ইচ্ছার বিরুদ্ধে দর্শনা হল্ট স্টেশনের অদূরে তেঁতুলতলায় অবস্থিত মাসুমা জান্নাত মহিলা মাদ্রসায় ভর্তি করা হয়। কয়েকদিন ক্লাস করার পর বাড়িতে ছুটিতে যায় দোলা ও তার খালাতো বোন একই গ্রামের আরিফুল ইসলাম এর মেয়ে রাবেয়া খাতুন (১২)। গত রবিবার দুই বোন আবার মাদ্রাসায় ফিরে আসে। এর মধ্যে মাদ্রাসায় নগত ২হাজার ৭’শ টাকা ও একটি মোবাইলফোন চুরির ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ৮২ জন শিক্ষার্থীকে চাল পড়া খাওয়ায়। এরই মধ্যে গত বুধবার দোলার বাড়িতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য দোলা ও তার খালাতো বোন রাবেয়াকে নিতে আসে পরিবারের লোকজন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের ছুটি না দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এসে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পরিবারের সদস্যদেরকে। বাড়িতে না যেতে পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পরে দোলা। পরে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে মাদ্রাসার অন্যান্য ছাত্রীদের সঙ্গে ঘুমিয়ে পরে দোলা ও তার খালাতো বোন রাবেয়া।
রাবেয়া জানায়, ওইদিন রাত ১টার দিকে দোলা হটাৎ ঘুম থেকে উঠে শৌচাগার যেতে চাইলে দুই বোন এক সঙ্গে শৌচাগার থেকে ফিরে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। ভোরে ফজরের আজানের সময় সবাইকে নামাজের জন্য ডাকা হলে দোলা ওঠেনি। পরে রাবেয়া বিষয়টি অন্যান্যদের জানালে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দোলাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
দোলার পিতা দুলাল হোসেন জানান, আমার সুস্থ মেয়ে হঠাৎ কিভাবে মারা গেলো আমি বুঝতে পারছি না। কোন ভাবেই নিজেকে সান্তনা দিতে পারছি না। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মেয়েটাকে যদি বুধবার সন্ধ্যায় আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিত তাহলে আর সে মারা যেতো না। আমার মেয়ে ওর মায়ের জন্য কেঁদে কেঁদে পেট ফুলে মরে গেছে।
পাগল প্রায় মা বলেন, এবার ছুটিতে এসে আর মাদ্রাসায় জাবে না বলে কান্নাকাটি করছিলো দোলা। পরে অনেক বোঝানোর পর রাজি করিয়ে তাকে আবার মাদ্রসায় পাঠিয়েছিলাম। দোলা বলেছিলো বুধবার বাড়িতে এসে তোমার গলা জড়িয়ে ধরে কোলের মধ্যে গল্পো করতে করতে ঘুমাবো। এখন আমার কোলের মধ্যে কে ঘুমাবে? বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন তিনি।
স্থানীয়রা জানায়, মৃত্যুর ঘটনা শুনে আমরা মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে গিয়ে বিষয়টি শিক্ষকদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা উল্টো আক্রমানত্বক আচারণ শুরু করে। পরে ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের সঙ্গে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের উত্তেজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এসময় দর্শনা থানা পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দর্শনা মাসুমা মহিলা মাদ্রাসার মুহাতামিম মুফতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ছাত্রীরা সকলেই এক সাথে রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। মেয়েদের বিভাগটা আলাদা সেখানে মেয়েদের জন্য মহিলা শিক্ষিকা আছে। মেয়েটি তার খালাতো বোনের সাথেই একসাথে ঘুমাই। হঠাৎ ভোরের দিকে জানতে পারি মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পরেছে। এসময় মেয়েটিকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন, টাকা ও মোবাইল চুরির ঘটনায় অন্য ছাত্রীদের চাল পড়া খাওয়ালেও দোলাকে খাওয়ানো হয়নি। কারণ টাকা বা মোবাইল চুরির দিন তারা দুজনেই ছুটিতে ছিলো। তার মৃত্যুটি কিভাবে হলো আমরা জানিনা।
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মোর্তজা আহসান বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। তবে মেয়েটির শরীরের কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়নি।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান কাজল জানান, এ ঘটনায় আমরা মাদ্রাসাটি পরিদর্শন করেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি। আমরাও তেমন কোনো অস্বাভাবিকতা দেখিনি। তবে মাদ্রাসায় টাকা ও মোবাইলফোন চুরির ঘটনায় চাল পড়া খাওয়ানোর বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। তাছাড়া দেশে করোনাকালীন সময়ে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরেও কেন এই প্রতিষ্ঠান চলমান রাখা হয়েছে তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, গতকালই বাদ মাগরিব কুন্দিপুর গ্রামে নামাজের জানাজা শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে দোলার দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।