নিউজ ডেস্ক:
জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আরিফুন্নেছা আরিফা। পুলিশকে জানিয়েছিলেন, নিজের জীবন নিয়ে তিনি শঙ্কিত। তার সাবেক স্বামী রবিন তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।
পরে সাবেক স্বামী রবিন ফোনে অনুনয়ের কারণে তাকে বাসায় আসার অনুমতি দেন আরিফা। নিজেই নেমে গিয়ে রবিনকে বাসায় নিয়ে আসেন। রবিনের সঙ্গে ছিল বেশ কয়েকটি ব্যাগভর্তি জিনিসপত্র। তার দুটি হাতে নিয়ে ফেরেন আরিফাও। কিন্তু, বাসার ভেতরে ঢোকেনি রবিন। বারান্দা থেকে সিঁড়ি ঘরে পৌঁছার মাত্র তিন মিনিট পরেই পাওয়া যায় আর্ত চিৎকার। সিঁড়ির সামনে খুন হন ব্যাংক কর্মী আরিফুন্নেসা আরিফা। আর দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় রবিন।
গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কলাবাগান থানার সেন্ট্রাল রোডের ১৩ ওয়েস্ট অ্যান্ড স্ট্রিটের বাসায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটির ধারাবাহিক দৃশ্যপট ছিল এ রকমের। বাড়িটি থেকে পাওয়া ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন ক্যামেরা (সিসিটিভি) ফুটেজে এর সত্যতা মিলেছে। আর ফুটেজ দেখে পুলিশ মনে করছে, সাবেক স্বামী রবিনই আরিফাকে খুন করে পালিয়ে গেছেন।
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাতও একই মন্তব্য করেছেন। ওই বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৪৪ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের সময় আরিফা ফোনে কথা বলতে বলতে বাইরে বের হন। প্রায় তিন মিনিট পর সকাল ৮টা ৪৭ মিনিটে সাবেক স্বামী রবিনসহ ভেতরে ঢোকেন তিনি। এসময় দুজনের হাতে ছিল ব্যাগ। মাত্র তিন মিনিট পরেই ৮টা ৫১ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের সময় দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায় রবিনকে। এর মধ্যেই খুন হন আরিফা।
পুলিশের ধারণা, সাবেক স্বামী রবিনই তাকে খুন করে পালিয়ে যান। পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘আরিফা খুন হওয়ার স্থানটির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আরিফা ও রবিন কিছু মালামাল নিয়ে বাসায় ঢুকছেন ও বের হচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, বিবাহবিচ্ছেদের পর তাদের মধ্যে ফের ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সিসি ক্যামেরা দেখে এমনটিই মনে হচ্ছে। বাসার সিঁড়ির সামনেই রবিন তাকে হত্যা করেছেন। তবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রবিনকে ধরতে অভিযান চলছে।
নিহতর ভাই আহমেদ আলামিন বুলবুল জানান, ৪ বছর আগে রবিন নামে এক ছেলের সঙ্গে আরিফার বিয়ে হয়। ৩ মাস আগে তাদের ডিভোর্স হয়। ডিভোর্স হওয়ার পরও রবিন প্রায়ই তাকে বিরক্ত করত। বৃহস্পতিবার সকালে আরিফা তার কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বের হন। আইডিয়াল কলেজের সামনে পৌঁছালে রবিন তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে আহত অবস্থায় তাকে ধানমণ্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।