জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। ওইদিনই দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন দলের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়েন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের অনেক এমপি-মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও। কিন্তু তাদের অধিকাংশেরই ভারতে থাকার বৈধ কাগজপত্র নেই। এ অবস্থায় ট্রাভেল পাস নিয়ে দেশটিতে অবস্থানের চেষ্টা করছেন তারা।
আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশির ভাগ এমপি-মন্ত্রী অবস্থান করছেন কলকাতার অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত নিউটাউন ও সল্টলেক উপশহরে। এর বাইরে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি, ত্রিপুরার আগরতলা ও রাজধানী নয়াদিল্লিতেও অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন।
পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া ক্ষমতাচ্যুত সরকারের অনেকেই পাসপোর্ট নিয়ে যেতে পারেননি। আবার বিগত সরকারের পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির পাসপোর্ট বাতিল করে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, যাদের অনেকেই এখন ভারতে অবস্থান করছেন। ফলে ভারতে অবস্থানের ক্ষেত্রে ট্রাভেল পাসই তাদের মূল অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ট্রাভেল পাস মূলত পাসপোর্টের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। সাধারণত বিদেশে গিয়ে কারো পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট দেশের হাইকমিশন ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস দেয়। এ পাস নিয়ে কোনো ব্যক্তি একটি সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওই দেশে থাকতে পারেন এবং ওটা দিয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারেন। ট্রাভেল পাসের মেয়াদ সাধারণত ৯০ দিন হয়। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একজন সম্পাদক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘শুধু বলব বেঁচে আছি। দেশের মানুষের জন্য কষ্ট হচ্ছে। দলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরাও ভালো নেই। পাসপোর্ট বাতিল করে দিচ্ছে। এজন্য এখানে ট্রাভেল পাসের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছি। চলতি সপ্তাহে ট্রাভেল পাস হাতে পাওয়ার কথা।’
ভারতে আশ্রয় নেয়া একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশির ভাগ এমপি-মন্ত্রী অবস্থান করছেন কলকাতার নিউটাউন ও সল্টলেক উপশহরে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, নেত্রকোনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ঢাকা-১৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল, ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও হাজি সেলিমের ছেলে সোলায়মান সেলিম, সাবেক সংসদ সদস্য ও যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল রয়েছেন নিউটাউন উপশহরে। একই এলাকায় আছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াও। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপাতি রিয়াজ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি, সাধারণ সম্পাদক সজল কুণ্ডু সরকার পতনের পর থেকেই নিউটাউন এলাকায় রয়েছেন।
অনেকে উঠেছেন সল্টলেক উপশহরে। তাদের মধ্যে বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়ও আছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবীর কলকাতার মারকুইজ স্ট্রিটে অবস্থান করছেন। এছাড়া চব্বিশ পরগনা জেলার মধ্যমগ্রামে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রায় দুই মাস পরও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। পালাতে গিয়ে সীমান্তে ধরাও পড়েছেন কেউ কেউ। সীমান্ত পার হতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
কলকাতার পরিকল্পিত ও অভিজাত দুটি উপশহর হিসেবে পরিচিত নিউটাউন ও সল্টলেক। এ দুটি এলাকা ভারতের দ্রুতবর্ধনশীল শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে আবাসন ও নির্মাণ শিল্পেরও প্রসার ঘটেছে। নাগরিক পরিষেবাও এ দুটি এলাকায় অনেক উন্নত।