হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কক্সবাজার প্রতিনিধি::
টেকনাফে র্যাব-বিজিবির সাথে পৃথক ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ ৮ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে র্যাবের সাথে পাল্টাপল্টি গুলাগুলিতে পাহাড়ে অবস্থানরত জকির বাহিনীর স্বশস্ত্র ৭ রোহিঙ্গা ডাকাত ও বিজিবি’র সাথে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ এক মাদকপাচারকারী নিহত হয়েছেন। নিহতরা সকলেই রোহিঙ্গা বলে ধারনা করা হচ্ছে।
২ মার্চ (সোমবার) গভীর রাত থেকে হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া-নয়াপাড়া ২৬ নং ও ২৭ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিমের পাহাড়ে থেমে থেমে র্যাব ও ডাকাত দলের মাঝে পাল্টাপাল্টি গুলাগুলির এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে জকির বাহিনীর ফারুক, নুরুল আলম নুরাইয়া, জমিল, জুবাইর, আয়াছ, বাচ্চু ও আজু বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার ক্যাম্পের র্যাব-১৫ এর উইং কমান্ডার মেজর আজিম আহমেদ জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ে স্বশস্ত্র রোহিঙ্গা ডাকাত জকির বাহিনীর অবস্থানের খবর পেয়ে র্যাবের একটি চৌকস আভিযানিক দল সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় ডাকাতরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়লে র্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলিবর্ষন করে। কিছুক্ষন পর গুলাগুলি থেমে গেলে ঘটনাস্থলে তল্লাশীর এক পর্যায়ে সাতজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। তারা সকলেই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী জকির বাহিনীর সদস্য বলেও জানায়।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ঘটনাস্থল হতে ৩টি বিদেশী পিস্তল, ৭টি ওয়ান শুটার গান ও ১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
টেকনাফ উপজেলা স্থাস্থ্য কমপ্লেক্স জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সাকিয়া হক জানান, গুলিবিদ্ধ ৭ জন রোহিঙ্গা ও র্যাব সদস্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসাপাতলে নিয়ে আসা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ সাত রোহিঙ্গার আগেই মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের শরীরে ৪ থেকে ৫টি করে গুলির চিহ্ন রয়েছে। আহত তিন র্যাব সদস্যকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং মৃতদেহগুলো কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২২ আগস্ট রাতে একদল রোহিঙ্গা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা এলাকায় ওর্য়াড যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে গুলি করে হত্যা করে। এঘটনায় ওমর ফারুকের পিতা আব্দুল মোনাফ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার জের ধরে প্রধান আসামি রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার নুর মোহাম্মদ, মো. শাহ, আব্দু শুক্কুর ও নেছার আহমদ নেছারসহ পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন।
এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র্যাবের অভিযানে সাতজন ডাকাত নিহতের খবরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অনেকে এঅভিযানকে স্বাগত জানাই। আবার অনেকে ব্যাপক গুলাগুলির শব্দে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে। জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের (২৭ নং) প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা জানান, খারাপ লোকদের মারলে আমরা খুশি। তাদের কারনে আন্তর্জাতিকভাবে রোহিঙগাদের বদনাম হচ্ছে। এধরনের অভিযান আরো অব্যাহত থাকুক এবং সন্ত্রাসীদের নির্মুলের দাবীও জানান তিনি।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানান, র্যাবের সাথে সংঘঠিত ঘটনার ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। লাশগুলো কক্সবাজার মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী জকিরকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে গ্রেফতার করা হবে। সন্ত্রাসী যেই হোক তাদের রক্ষা নেই।
অপরদিকে একইদিন ভোররাতে নয়াপাড়া জাদিরখাল এলাকায় বিজিবির সাথে মাদকপাচারকারীদের বন্ধুকযুদ্ধে এক মাদক পাচারকারী নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে দেড়লাখ পিস ইয়াবা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অজ্ঞাত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ মাদকপাচারকারীকে উদ্ধার করলেও স্থানীয়রা জানান, নিহত ব্যক্তি আকিয়াব জেলার মংডু চালিপ্রাং এলাকার জাফর আলমের ছেলে নুর আলম (৩০)।
টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২বিজিবি) অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ ফয়সাল হাসান খান জানান, মায়ানমার হতে নাফ নদী হয়ে ইয়াবার একটি বিশাল চালান প্রবেশের গোপন সংবাদ পেয়ে নয়াপাড়া বিওপির বিজিবির একটি বিশেষ টহল দল জাদিমোড়া খাল সংলগ্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পর মাদকের চালান নিয়ে নৌকা যোগে কয়েকজন ব্যক্তি নাফনদীর উপকুল দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিজিবি টহলদল তাদের চ্যালেঞ্জ করলে মাদক কারবারীরা গুলি ছোঁড়ে।
এ সময় বিজিবির ৩ জন সদস্য আহত হন। জানমাল রক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। উভয়পক্ষের মধ্যে ৪-৫ মিনিট গুলি বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে গুলাগুলি থামলে ঘটনাস্থল থেকে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।