জিয়াবুল হক, টেকনাফ: বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনে উপজেলা টেকনাফ সীমান্তে চোরাচালান নিরুৎসাহিত করে সরকারী রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে বৈধ বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে টেকনাফ স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই স্থলবন্দরে বৈধ বাণিজ্যের আড়ালে শক্তিশালী একটি মাদক চোরাচালানী চক্র সক্রিয় থাকায় বিভিন্ন সময়ে বাণিজ্য পণ্যেবোঝাই যানবাহন হতে মাদকের চালান আটকের ঘটনা ঘটে। এরপরও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তদারকিকে বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন করে মাদক চোরাচালানী চক্র সক্রিয় থাকায় এই বন্দর নিয়ে প্রকৃত ব্যবসায়ী ও সচেতনমহলে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বিগত বিভিন্ন সময়ে টেকনাফ স্থলবন্দরের পণ্যবোঝাই যানবাহন হতে টেকনাফ-কক্সবাজার, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট এবং চট্টগ্রামের বানিজ্যিক নগরী খাতুন গঞ্জ হতে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা মাদকের চালানসহ চালক-হেলপারদের আটক করতে সক্ষম হয়। কালো টাকার প্রভাবে মাদকসহ আটককৃতদের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে দেয় কিন্তু আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে স্থলবন্দর ব্যবসার আড়ালে মাদক চোরাকারবারীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়। এরফলে পণ্যবোঝাই ট্রলারের কর্মচারী, স্থলবন্দরে শ্রমিক, স্থলবন্দরে নিয়োজিত কর্মচারীদের একটি অংশ এবং স্থলবন্দরের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে বন্দরের পণ্যবোঝাই যানবাহনে মাদকের চালান ফিটিং করে পাচার করা হয় বলে বিভিন্ন সুত্রের দাবী। এদিকে টেকনাফ স্থলবন্দরের জেটিঘাটে অবস্থানকারী পণ্যবোঝাই শীপ ও ট্রলারে বিভিন্ন প্রকার মাদকের স্টক থাকে। কর্মরত শ্রমিকদের সহায়তায় এসব মাদকের চালান পাশ্ববর্তী এলাকায় নিয়ে মওজুদ করে সময় মতো ক্রেতাদের সরবরাহের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাই স্থলবন্দর সংলগ্ন বরইতলী ও নাইট্যংপাড়া এখন মাদক সেবন এবং বিক্রয়ের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। এসব এলাকা থেকে সম্প্রতি কোস্টগার্ড সদস্যরা বেশ কয়েকটি বড় পানীয় মাদকের চালান আটক করতে সক্ষম হয়।সর্বশেষ গত ২০ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর-পশ্চিম) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাকলিয়া থানার নতুন ফিশারিঘাটে টেকনাফ স্থলবন্দর হতে মাছ বোঝাই করে আসা ঢাকাগামী এসআরপি কার্গো সার্ভিসের কাভার্ডভ্যানে তল্লাশী চালিয়ে ১লাখ ২০হাজার ইয়াবাসহ চালক মোঃ মামুন বেপারি (৩৩),সহকারী মোঃ শাহজাহান (৩২) ও মোঃ আনোয়ার (২০)কে আটক করে। আটককৃতদের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, স্থলবন্দর কেন্দ্রিক মাদক ব্যবসায়ীরা আসলেই অনিয়ন্ত্রিত। মাদক পাচাররোধে স্থলবন্দরের পণ্যবাহী যানবাহনের উপর কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। টেকনাফ সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামূল হক বাহাদুর বলেন, টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা মাদক ব্যবসায় জড়িত নই। তবে কতিপয় গাড়ির মালিক ও চালক-হেলপারের যোগসাজশের কারণে স্থলবন্দরের পণ্যবোঝাই গাড়িতে মাদকের চালান নিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক জানান, স্থলবন্দর কেন্দ্রিক মাদক ব্যবসার বিষয়টি অনেক আগে থেকেই শুনে আসছি। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে স্থলবন্দরে একটি সুবিধাভোগী চক্র রাজস্ব ফাঁকি এবং মাদক পাচারকারী চক্রের সাথে গোপন আতাঁত করে পকেটভারী করে আসায় মাদক চোরাচালানীদের অতৎপরতা বন্ধ হচ্ছেনা বলে একাধিক সুত্র দাবী করছে।