জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ থেকেঃ ঝিনাইদহ এলাকা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম পাট উৎপাদিত। কিন্তু এবার এ জেলায় সোঁনালী আঁশ পাটের মারাত্মক ফলন বিপর্যয় হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে চলতি মৌসুমে পাটের এই ফলন বিপর্যয় বলে জানিয়েছে কৃষকেরা। একই কথা বলছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। সরেজমিনে দেখা গেছে, কেউ কেউ পাট কেটে নদী, খাল, পুকুর, বিল ও ডোবায় জাঁক দিচ্ছেন। অনেকে আবার ডোবার পানি না পাওয়ায় জাঁক দিতে পারছে না। কেউবা আবার আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত। রাস্তার দুই ধারে ও বাড়ির উঠানে বাঁশের আড়ে চলছে পাট শুকানোর কাজ। কেউ হাট-বাজারে পাট বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, কেউবা বিক্রি করে লাভ না হওয়ায় হতাশ। জেলার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজাররের ব্যবসায়ীরা বলছে, লোকসানের মুখে পড়ছে প্রান্তিক পাট চাষিরা। সরকার পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিলেও পাটের দাম কম পাওয়ায় চাষিরা হতাশ। এছাড়া এবার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পাট গুদামজাত করতে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে পাট সরবারহ করতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, অতিবৃষ্টির কারণে পাটের ফলন কম এবং এবার জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এ বছর জেলায় ২৪ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ১৫ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর কম। লাঙ্গলবাঁধ বাজারের পাট চাষি ইমরান হোসেন জানান, এবার কৃষকদের প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয়েছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। বিঘাতে ফলন হয়েছে ৩ থেকে ৫ মণ এবং প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১২শ থেকে ২ হাজার টাকায়। পুরো চাষেই লস। শৈলকুপার চাষি আবুল কালাম আজাদ ও খয়বার মন্ডল জানান, যেখানে ১ মণ পাট চাষ করতে প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে দাম পাচ্ছে গড়ে তের থেকে চৌদ্দশ টাকা। কৃষকরা হতাশ হয়ে পাট চাষ না করে অন্য ফসল করার চিন্তা ভাবনা করছেন। আব্দুল ওয়াদুদ চাষি জানান, কেউ-কেউ পাট বিক্রি করে খরচ তুলতে না পেরে পাটকাঠি বিক্রি করে খরচ পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জি এম আব্দুর রউফ জানান, অনেকে পাট বপন মৌসুমে প্রস্তুত না করার কারণে পাট রোপন করতে পারেনি। এ বিলম্বের কারণে তাদের ফলনও ভালো হয়নি। আবার আবহাওয়াগত কারণে পাটের বৃদ্ধি কম হয়েছে। পাট সোনালী ফসল। আমাদেরকে যেভাবেই হোক পাটের স্বাভাবিক ফলন ঠিক রাখতে হবে।