ঝিনাইদহ সংবাদাতাঃ
কৃষকেরা ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে চরম বিপাকে পড়ছেন। ঝিনাইদহ ছয়টি উপজেলার গ্রামাঞ্চালের মাঠগুলোতে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে ৩ গুণ বেশি টাকা দিয়েও সময় মত মেলানো যায়নি কৃষি শ্রমিক। যে কারনে অনেকের ক্ষেতের ধান পানিতেই পঁচে নষ্ট হওয়ায় খরচের টাকাও তুলতে পারেননি। সে কথা কৃষকদের মনে ঘোরপাক খাচ্ছে। ফলে এখন ঘরে ধান তোলার সময়ে এসে কৃষি শ্রমিক পাওয়া ছাড়াও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে তাদের। উপজেলার কালীগঞ্জ কৃষি অফিসসূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৪ হাজার ৩’শ ২০ হেক্টোর। কিন্ত চাষ হয়েছে ১৮ হাজার ৩’শ ২০ হেক্টোর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার হেক্টোর বেশি জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর কৃষি বিভাগের মাঠকর্মিরা বোরো মৌসুম শুরু থেকে বাড়তি নজর রেখেছেন। সময় মত পরিমিত সার, পানি সেচ, কীটনাশক প্রয়োগ করার পরামর্শ ছাড়াও কীটপতঙ্গের হাত থেকে ক্ষেত বাঁচাতে ক্ষেতের মাঝে মাঝে গাছের ডাল পুতে দেওয়া ও আলোর ফাঁদ তৈরী করে পোকা মাকড় নিধনে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ব্লাষ্ট রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে হাটে বাজারে, মাঠে ঘাটে জনসমাগমের স্থানে লিফলেট বিতরন করে কৃষকদেরকে আগে থেকেই সচেতন করা হয়েছে। যে কারনে এবছর ক্ষেতে ধান দেখা যাচ্ছে অন্য বছরের তুলনায় অনেক ভালো। কৃষকেরা যে জমিগুলোর ধান বাড়িতে এনে মাড়াই করেছেন সন্তোষজনক ফলন দেখা যাচ্ছে। ফলে ক্ষেতের ধান ঠিকমত ঘরে তুলতে পারলে লক্ষ্যমাত্রার অধিক উৎপাদনের আশা করা যায়। সরেজমিনে উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের মাঠে গেলে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেতের ধান পাক ধরতে শুরু করেছে। সোনালী ক্ষেতের ধান গাছগুলো বাতাসের দোলায় কৃষকদের মনে আনন্দের দোল দিচ্ছে। একাধিক কৃষক জানান,এ বছর সব মাঠের সব জাতের ধানই ভালো হয়েছে। তবে গত বছর বোরো সংগ্রহের সময় দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে এ অঞ্চলের কৃষকদের ভরা ক্ষেত নষ্ট হয়ে অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছিল। প্রকৃতিতে কারও হাত নেই। এ বছরও বৈশাখের প্রথম দিক থেকে প্রায়ই ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দূর্য়োগের ভয়ে তাদের বুক দুরু দুরু করছে। উপজেলার বলরামপুর গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, গত বছর বোরো ক্ষেতের ধানের পাক ধরলে কয়েকদিনের ঝড়োবৃষ্টিতে ক্ষেতের ধান গাছ মাটিতে শুয়ে পড়ে। এরপর আবার ভারী বর্ষন হওয়ায় সব ক্ষেতগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ এলাকার অধিকাংশ ক্ষেতগুলোতেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে পড়ে যাওয়া ধান থেকেই আবার কলিয়ে গাছ বেরিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। বেড়ে যায় কৃষি শ্রমিকের মজুরী। ফলে কৃষকেরা ক্ষেতের ধান নিয়ে পড়েন চরম বিপাকে। ক্ষেতে পড়া ধানে ফলন কমে যায়। অনেক কৃষক ধারদেনা করে মাঠে ধান চাষ করে খরচের টাকাও ঘরে উঠাতে পারেননি। যে কারনে এখন আকাশে মেঘ জমলে কৃষকদের সব সময় ভয় হচ্ছে কখন জানি কি হয়। উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের বোরো চাষী বকুল হোসেন জানান, গত বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে এ বছর আগাম ৬০ শতক জমিতে স্বর্ণলতা জাতের ধান চাষ করেছিলেন। এ বছর ভালো ভাবে ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। ওই জমিতে তার প্রায় ৫৪ মন ধান হয়েছে। এটা একটা সন্তোষজনক ফলন। শুধু তার একার নয় গ্রামের অন্য কৃষকদের ক্ষেতেও ভালো ধান হয়েছে। ইতোমধ্যে যারা তার মত ঘরে তুলেছেন সকলেই ভালো ফলন পেয়ে বেজায় খুশি। তিনি জানান, বাজারে ধানের দাম ঠিক থাকলে আর কৃষকেরা যদি কোন দূর্যোগের সম্মুখীন না হয় তা হলে উৎপাদন ব্যয় বাদ দিয়ে এ বছর বেশ লাভ করতে পারবেন। কৃষকেরা খানিকটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন গত বছরের ক্ষতি। উপজেলার পারখালকুলা গ্রামের কৃষক তোফাজ্জেল হোসেন জানান,এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। ক্ষেত থেকে ধান কেটে বাড়ি এনে ধান ঝেড়ে দেওয়া পর্যন্ত ৪৬ শতাংশের প্রতি বিঘায় শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। তিনি আরও জানান, এখনও তাদের মাঠের প্রায় অর্ধেক পরিমান ধান কাটতে বাকি রয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, চলতি বোরো মৌসুমের শুরু থেকে কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মিসহ সকল স্তরের কর্মকর্তারা প্রচন্ড পরিশ্রম করে কৃষকদেরকে নানা দিক নির্দেশনা দিয়ে কৃষকদেরকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি জানান, এ পর্যন্ত কৃষকেরা যে পরিমান ধান ঘরে উঠাতে পেরেছেন ফলন খুবই ভালো হচ্ছে। মাঠের ধান ঠিকমত ঘরে তুলতে পারলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।