বিএনপি’র কড়া অভিযোগ : আওয়ামী লীগ বলছে অর্ন্তদ্বন্দ্বের কথা
নিউজ ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভার আহ্বান করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গার দু’টি আসনের সকল প্রার্থীকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। সভার শুরুতে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচনী নানা বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেন সভা প্রধান জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণার কাজে বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত অফিস/ক্যাম্পে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছে।’তাঁর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আ.লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেন, ‘দলের মধ্যে অতি উৎসাহি কিছু নেতাকর্মী থাকে, যারা নেতাকে বিব্রত করার জন্য এই কাজগুলো করে।’চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী আলহাজ্ব মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘প্রতিদিন আমার অন্তত ১০টি করে নির্বাচনী অফিসে হামলা-ভাঙচুর, প্রচারণায় বাধা, পোস্টার ব্যানার বিনষ্ট করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, নেতাকর্মীদের উপরও হামলা করা হচ্ছে।’ চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের বর্তমান সংসদ, আ.লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হাজী আলী আজগার টগর বলেন, ‘বিএনপির এই অভিযোগ রীতিতে পরিণত হয়েছে। তারা আবাসিক এজেন্টের মত শুধু অভিযোগ ও নালিশ করতে শিখেছে।’ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী মো. শরীফুজ্জামান নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিন তাঁর উপর হামলার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমার উপর হামলা হয়েছে, আবার আমার দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশি হয়রানী চলছে, তাদের আটক করা হচ্ছে। নির্বাচনে সৌহার্দ্য পূর্ণ পরিবেশ বিরল, শুধু সহিংসতা চলছে।’পাল্টা বক্তব্যে ছেলুন জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘ওই দিন তার উপর হামলার বিষয়টি সম্পূর্ণ দলীয় অর্ন্তদ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট গোলযোগ থেকে হামলার ঘটনাটি ঘটেছে। তা ছাড়া তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা আমাদের অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। আমরা মামলা করেছি। হামলার ঘটনায় তারাও মামলা করেছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আমার দলের নেতাকর্মীরা আদালতে হাজির হয়ে আবেদন করে জামিন পেয়েছে।’প্রচারণায় বাধা সৃষ্টির অভিযোগ করেন মুসলিম লীগ মনোনীত হারিকেনের প্রার্থী মেরিনা আক্তার। সবশেষে সকলের সহযোগিতায় নির্বাচনে সুন্দর পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী শেখ লালন আহমেদ। পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘অনেক সময় অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটনা ঘটে। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেবো।’ বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুর ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘বতর্মানে আমার পুলিশ সদস্য, ইন্টেলিজেন্সি উইং ও মিডিয়া সোচ্চার। কারো চোখ ফাঁকি দেওয়া যাবে না। যা ঘটছে সব কিছুর তথ্য ও চিত্র আমাদের কাছে রয়েছে। যা কিছু ঘটছে তা নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে পক্ষ-বিপক্ষতা থাকবেই। তাই বলে সংঘর্ষে জড়ানো যাবে না। স্পষ্ট করে বলতে চাই- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গার দু’টি আসনে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে যত কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে নেবো। কোন বাঁধা বিপত্তি মানবো না।’ চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্ণেল ইমাম হাসান মৃধা তাঁর বক্তব্যে নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ করতে রাজনৈতিক নেতাদেরকে আচরণ বিধি মেনে তাদের কর্মীদের পরিচালনার আহ্বান জানান।জেলা প্রশাসক তাঁর সমাপণী বক্তব্যে বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণে আমরা সকলে বদ্ধ পরিকর।’ প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি নিজে পরিষ্কার থাকুন, কর্মীদের পরিষ্কার রাখুন। শান্তিপূর্ণ থাকতে সকলকে উদ্বুদ্ধ করুন। আমাদের পক্ষ থেকে সুন্দর একটা পরিবেশ সৃষ্টি করবো। আগামী ১৫ দিন সৌহার্দ্য পূর্ণ পরিবেশে জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনার মাধ্যমে সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। এরমধ্যে কোন ব্যত্যয় ঘটলে সকলের সহযোগিতা নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সভায় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত এড. মো. সোহরাব হোসেন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মো. হাসানুজ্জামান, জাকের পার্টির মো. আব্দুল লতিফ খান, চার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ।