শিকল বন্দি জামাই : মা-মেয়ে ও মামা আটক
শিকল বাঁধা ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল : তুমুল সমালোচনা
নিউজ ডেস্ক:জীবননগরে মেয়েকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার অভিযোগে জামাইকে শিকল দিয়ে বন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে জীবননগর উপজেলার ইসলামপুর হ্যালিপ্যাডপাড়ায়। শিকল বন্দি জামাই ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে সোহরাব হোসেন (৩০)। এদিকে, জামাইকে শিকল বাঁধা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় জীবননগর থানা পুলিশ গতকাল সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে স্ত্রী নীলা, শ্বাশুড়ি মেহেরজান ও মামাশ্বশুর মোসলেম উদ্দীনকে আটক করেছে।
স্থানীয়রা জানায়, রোববার রাতে জীবননগর উপজেলার ইসলামপুর হ্যালিপ্যাডপাড়ার জনৈক হারেজ উদ্দীনের বাড়িতে বেড়াতে আসে তার জামাই সোহরাব হোসেন। এরপর শুরু হয় উত্তপ্ত কথাবার্তা। একপর্যায়ে জামাইকে শিকলবন্দী করে বাড়ির উঠানের মাচাতে শুইয়ে রাখা হয়। সকালে বেঁধে রাখা হয় গাছের সাথে। সারাদিন এভাবেই রাখা হয় তাকে।
শিকলবন্দি জামাই সোহরাব জানায়, ‘গত ৮-১০ দিন আগে মোবাইলে টাকা ভরাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয় স্ত্রী নিলার সাথে। একপর্যায়ে আমি আমার স্ত্রী নিলার হাতে আঘাত করলে, সে হাতে ব্যাথা পায়। তারপর সে আমার উপর অভিমান করে আমার মেয়েকে নিয়ে কাউকে কিছু না বলে তার বাবার বাড়ি জীবননগরে চলে আসে। আমি রোববার সন্ধ্যায় আমার স্ত্রী ও সন্তানকে ঈদের জামা কাপড় দিতে আসলে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন প্রথমে আমাকে মারপিট করে। পরে আমাকে লোহার শিকল দিয়ে গাছের সাথে তালাবদ্ধ করে রাখে।’
স্ত্রী নিলা জানায়, ৭-৮বছর আগে শ্যামকুড় গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে সোহরাব হোসেনর সাথে উভয় পরিবারের দেখাদেখিতে বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনের একটি কন্যা সন্তান আছে। তার দাবি বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই স্বামী তাকে নানা অজুহাতে মারপিট করতে শুরু করে এবং যৌতুকের টাকা দাবি করতে থাকে। ইতোমধ্যে যৌতুক বাবদ কয়েক দফায় সোহরাবকে নগদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দেওয়া হয়েছে। তারপরও স্বামীর সংসারে সুখী হতে পারেনি সে। কয়েকদিন আগে মোবাইলে ১০ টাকা ভরার অপরাধে তাকে মারপিট করে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে।
শ্বশুর হারেজ উদ্দীন জানান, ‘আমার মেয়েকে মারপিট করার কারণে জামাই সোহরাব হোসেনকে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে রেখেছি। সে পালিয়ে যাবার পর তার বাবা-মা আমাদের নামে যেনো মিথ্যা গুম মামলা দিতে না পারে এ জন্য তাকে আটকিয়ে রেখেছি। তার বাবা-মা আসলে আমরা তাকে তাদের হাতে তুলে দেবো।
এদিকে, শ্বশুড় বাড়িতে জামাইকে শিকলবাঁধা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দৃশ্যটি দেখতে জীবননগরের হ্যালিপাডপাড়ার হারেজ উদ্দীনের বাড়িতে উৎসুক জনতার ভিড় জমতে শুরু করে। দিনভর বিভিন্ন এলাকার লোকজন জামাইকে বেঁধে রাখার দৃশ্য দেখতে আসে।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ গণি মিয়া জানান, শ্বশুড় বাড়িতে জামাইকে নির্যাতন ও শিকল বেঁধে রাখার ঘটনায় সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে স্ত্রী নীলা খাতুন, শ্বাশুড়ি মেহেরজান বেগম ও মামা শ্বশুড় মোসলেম উদ্দীনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।