চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: পরিবেশ বিপর্যায়ে অন্যতম উপাদান নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগে সয়লাব হয়ে পড়েছে জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার। প্রশাসনের কোন নজরদারী না থাকায় দিন দিন এর মাত্রা বেড়েই চলেছে। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হওয়ায় নিষিদ্ধ পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাত করণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আইন প্রজ্ঞাপন জারী করা হলেও মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় তদারকি না থাকায় পলিথিনের ব্যবহার কোনক্রমেই বন্ধ হচ্ছে না।
জীবননগর উপজেলার কাঁচা বাজার, মাছ বাজার, পানবাজারসহ নারায়ণপুর মোড়, থানা মোড়, শিয়ালমারী পশু হাট, মনোহরপুর হাট, খয়েরহুদার হাট, ধোপাখালী সাহেব বাজার, উথলী বাজার, আন্দুলবাড়ীয়া বাজার, হাসাদাহ বাজারসহ বিভিন্ন হাট বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অবাধে বিক্রি ও ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ এই পলিথিন ব্যাগ। তরি-তরকারী, ফলমুল, মাছ-মাংসসহ প্রায় প্রয়োজনীয় সব কিছু বহন করার জন্য ক্রেতা-বিক্রেতারা দেদারসে ব্যবহার করছেন নিষিদ্ধ এই পলিথিন ব্যাগ। সবজি বাজারে গিয়ে পাঁচ রকমের সবজি দুই রকমের সালাদ, মরিচ কিনলে সবগুলি উপকরণ দেয়া হবে আলাদা আলাদা পলিথিনে। ফুটপাতের ক্ষুদ্র কলা বিক্রেতাও কেজিখানেক পলিথিন ব্যাগ নিয়ে বসে থাকেন। পলিথিন ছাড়া পণ্য নেয়ার আর কিছু নেই। পলিথিন ব্যবহার হয় বাসার ফ্রিজে, মাছ, মাংস, সবজির পুটলি তৈরি করতে। বাজার থেকেও চাররকম মাছ চারটি পলিথিনে পৃথকভাবেই দেয়া হয়। পলিথিন যুগস্থায়ী ও অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার কারণে, দোকানীরাই ক্রেতার ব্যাগের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন। এখন বাজার ফেরত একেকজন ক্রেতা আট দশটি পলিথিন ব্যাগ একসঙ্গে নিয়ে বাসায় ফেরেন সুপরিচ্ছন্ন একজন বাজারি হিসেবে।
অথচ ২০০২ সালে ১লা মার্চ তৎকালীন সরকারের পরিবেশ মন্ত্রী শাহাজান সিরাজ পলিথিনের বিরুদ্ধে এক আকস্মিক জিহাদ ঘোষণা করেন। দেশের মানুষ বেশ ভড়কে যায়। ওই বছরের ১ মার্চ সারাদেশে পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের সংশোধনী এনে পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করা হয়। আইন বলছে, ‘সরকার নির্ধারিত পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণে প্রথম অপরাধের দায়ে অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদ- বা অনধিক ২ (দুই) লাখ টাকা অর্থদ- (জরিমানা) বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন অপরাধীরা। কিন্ত এর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই।
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি পলিথিন ব্যাগে দীর্ঘ সময় খাদ্য দ্রব্য রাখলে তার গুণগত মান নষ্ট হয়ে মানুষের শরীরে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। পলিথিনের মধ্য থেকে বিষফেনোল নামক বিষ নির্গত হয় এবং খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশে যায়। যার ফলে মানব দেহের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। পলিথিন পোড়ালে বায়ুদূষণ ঘটে ও মাটির সঙ্গে মেশে না। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। তাছাড়া পলিথিনের কারনে শ্বাসকষ্ঠ, হাপানী, এ্যাজমাসহ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হতে পারে এমনকি মারাত্মক ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম রেজা বলেন, নিষিদ্ধ পলিথিন যদি কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যায় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন গত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারের বিষয়ে যদি বাজার মনিটরিং করা হয় তাহলে জীবননগর বাজারে পলিথিন বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সচেতন মহল পলিথিন ব্যবহার ও বিক্রি বদ্ধের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করছেন।