নিউজ ডেস্ক:
“সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীগণ সফলতার সাক্ষর রেখে চলেছেন”। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্সে অংশগ্রহণকারী একটি প্রতিনিধিদল ৬ অগাস্ট রবিবার জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন পরিদর্শনকালে স্বাগত ভাষণে একথা বলেছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ একটি বিশ্বস্ত নাম। জাতিসংঘসহ পিস কিপিং অপারেশনের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দেশ সবসময়ই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারি দক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করে আসছে যা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ মর্যাদার আসনে তুলে ধরছে”।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন প্রয়োজনীয় সকল কূটনীতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে মর্মে রাষ্ট্রদূত মাসুদ প্রতিনিধিদলকে অবহিত করেন। তিনি আরও জানান, ‘এ ক্ষেত্রে আমরা ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছি। ’
বাংলাদেশ মিশনে আসার আগে প্রতিনিধিদলের সদস্যগণ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যান। তারা ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশনসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শন করেন।
চলতি ২০১৭ সালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্সে অংশগ্রহণকারী সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ২৫ সদস্যের এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেজর জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, এনডিইউ, পিএসসি।
বাংলাদেশ মিশন পরিদর্শন উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তৃতায় প্রতিনিধিদলের প্রধান মেজর জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে শান্তিরক্ষীদের জন্য একটি বিশ্বমানের প্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে”।
সাম্প্রতিক সময়ের একটি উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চীনে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ‘ট্রেইন অব দ্যা ট্রেইনার’ শীর্ষক কোর্স পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চারজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করেছে, যা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের সক্ষমতারই পরিচায়ক”।
নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান এনডিসি এসময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি কনস্যুলেট অফিসের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে প্রতিনিধিদলকে অবহিত করেন।
বাংলাদেশ মিশনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো: আরিফুল ইসলাম জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশের ফলপ্রসূ ও প্রতিনিধিত্বশীল অংশগ্রহণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশ মিশনের সামগ্রিক কর্মকান্ডের উপর একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন প্রতিনিধিদলের সামনে উপস্থাপন করেন।
ডিফেন্স এ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদ প্রতিনিধিদলকে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা ও বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন শান্তিরক্ষী জাতিসংঘের ৫৪টি পিস কিপিং মিশনে অংশ নিয়েছেন যার মধ্যে রয়েছেন ১ হাজার ২৪২ জন নারী সদস্য। আর বর্তমানে ১৩টি মিশনে নিয়োজিত রয়েছেন ৬ হাজার ৯৫৯ জন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় এ পর্যন্ত শহীদ হয়েছেন ১৩২ জন আর আহত হয়েছেন ২১১ জন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্সের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবেই প্রতিনিধিদল গত পহেলা আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে আগমন করেন। ইতোমধ্যে তাঁরা ওয়াশিংটন ডিসি সফর করেন। নিউইয়র্ক সফর শেষে ৭ আগস্ট সকালে কুয়েতের উদ্দেশ্যে তারা যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন।
প্রতিনিধিদলের মধ্যে নেপালের ১ জন এবং নাইজেরিয়ার ৩ জন উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসার রয়েছেন।