চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের আয়োজনে মাদক-জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী মহাসমাবেশে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন
শিক্ষক-ছাত্র, নবীন-প্রবীণ, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সাধারণ মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে পূর্ণ সমাবেশস্থল
নিউজ ডেস্ক:‘রাষ্ট্র এখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গত ১০ বছরে পৃথিবীর যে দু-তিনটি দেশ এগিয়েছে, তারমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। রাষ্ট্র যখন সামনের দিকে যাচ্ছে, তখন কিছু ঝুঁকি কিন্তু রয়েছে। আমাদের দেশ, আমাদের সম্পদ। খেয়াল রাখতে হবে, এ সম্পদ এখন যেন কেউ হরণ না করে। এ ক্ষেত্রে মাদক কিছুটা হলেও উন্নয়নের অন্তরায়। একটি পরিবারে যদি একজন মাদকসেবী থাকে, তাহলে সে পরিবার যত অর্থবিত্তশালীই হোক, সে ধ্বংস করে ফেলবে। এ মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অধিকাংশই যুবক-যুবতী।’ গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড় বিএডিসি বীজ শোধনাগার মাঠে জেলা পুলিশ আয়োজিত ‘মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী’ এক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন এসব কথা বলেন।এ সময় যুব সমাজের উদ্দেশে রেঞ্জ ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন আরও বলেন, ‘মাদকের ভয়াবহতা চরম। যে মাদক গ্রহণ করছে, সে নিজে শারীরিক ও মানসিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি তার আগামী প্রজন্মের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মাদকসেবীদের সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। আর যদিও সন্তান হয়, তবে তার অধিকাংশই প্রতিবন্ধী। ২০৩০-২০৩১ সালে বাংলাদেশ হবে সুখী-সমৃদ্ধ, ক্ষুধা-দারিদ্রতা যাবে জাদুঘরে। সেখানে আমার সন্তান সুস্থ, সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে, এ তো প্রত্যাশা। তাই নিজের স্বাস্থ্য, মন ও পরিবারের প্রতি নজর দিতে হবে। পরিবার এবং ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুবক বয়সে কেউ মাদক সেবন করলে, অপরাধ কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়লে, তার নামে মামলা হলে, তার পক্ষে সরকারি চাকরি পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ডোপ টেস্ট হবে, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে যাবে সবকিছু। তাই সবাইকে মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে অপরাধ কর্মকা- থেকেও বিরত থাকতে হবে।’এ সময় কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কার্যক্রম প্রসঙ্গে ডিআইজি বলেন, ‘কমিউনিটি বলতে আমরা কী বুঝি? কমিউনিটি বলতে একটা গোষ্ঠীকে বোঝায়। শিক্ষক, রাজনীতিবীদ, ছাত্র, ব্যবসায়ী, পরিবহন সেক্টরে যারা আছে, এমন গোষ্ঠীকে আমরা মনে করি। এ গোষ্ঠীগুলোকে পুলিশিংয়ে রূপান্তর করতে চাই। আমরা জানি, বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। যেহেতু পুলিশের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল, তাই সাধারণ মানুষকে যদি আমরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে পুলিশিং কার্যক্রমের গতি আরও বাড়বে। সে জন্যই কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কথা বলা হয়েছে। আপাতত এ কার্যক্রম স্বল্প পরিসরে হলেও পর্যায়ক্রমে আরও বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যেতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’জঙ্গি দমনে জনগণের ভূমিকা তুলে ধরে ডিআইজি বলেন, ‘গুলশানে হলি আর্টিজান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিরা দেশের ওপর আঘাত করেছে। তারা রাষ্ট্রকে আফগানিস্তান কিংবা ইয়েমেন হিসেবে দেখতে চেয়েছে। কিন্তু এ দেশের প্রগতিশীল মানুষ, আপনারা তাদেরকে রুঁখে দিয়েছেন। আপনারা যেভাবে তাদের মোকাবিলা করেছেন, এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন। যেখানে জঙ্গিদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে, তাদের প্রতিহত করবেন। মনে রাখবেন, জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া যায়, কিন্তু ওদের নিঃশেষ করা খুব কঠিন। এরা আর্সেনিকের মতো।
এদের ব্যাপারে কোনো ছাড় নয়। কারণ, আমার প্রিয় মাতৃভূমিকে কোনো জঙ্গি আস্তানা হিসেবে দেখতে চাই না।’সন্ত্রাস দমনে সরকার সফলতা দেখিয়েছে উল্লেখ করে ডিআইজি বলেন, ‘গত ১০ বছরে সন্ত্রাস দমনে ভূমিকা রেখেছে সরকার। এখন আর সন্ত্রাসের আস্ফালন আমরা দেখি না। সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ভবিষ্যৎ একেবারেই শূন্য সহিষ্ণুতা। কেউ এখনো এ পেশায় থাকলে অবসরে চলে যান।’সন্তানদের বাল্যবিবাহ না দিতে অভিভাবকদের উদ্দেশে প্রধান অতিথি বলেন, ‘মেয়েদের ১৮, ছেলেদের ২১ বছর বয়সের আগে বিয়ে দেবেন না। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়। অল্প বয়সে বিয়ে দিলে আপনার সন্তান অপ্রাপ্ত বয়সেই সন্তান সমভবা হবে। সে বাচ্চা দিতে পারবে না, রক্ত শূন্যতাসহ নানাবিধ রোগ-উপসর্গে আক্রান্ত হবে। এর কারণে অকাল মৃত্যুও হতে পারে।’ সমাবেশে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সেখ সামসুল আবেদিন খোকন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খোন্দকার ফরহাদ আহমদ, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, জেলা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাওসার আহমদ বাবলু, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুজ্জামান, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের আহ্বায়ক প্রফেসর এস এম ই¯্রাফিল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান ও সংগঠক নুঝাত পারভীন। এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্যসচিব মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহ ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সী আবু সাঈফ। এদিকে, জেলা পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের আয়োজনে ‘মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী’ মহাসমাবেশে যোগ দিতে দুপুরের পর থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে শিক্ষক-ছাত্র, নবীন-প্রবীণ, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সাধারণ মানুষ। সমাবেশে আসা মানুষ ও যানবাহনের কারণে কিছু সময় চুয়াডাঙ্গা শহরসহ আশপাশ এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। তবে ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনায় যানবাহন চলাচলে খুব বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়নি সাধারণ যাত্রী ও পথচারীদের। বেলা সাড়ে তিনটা নাগাদ সমাবেশ শুরু হলে কানাই কানাই পূর্ণ হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল। পর্যায়ক্রমে বক্তব্য দেন অতিথিরা। তবে সূচি উপেক্ষা করে বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য পর্বে হঠাৎ প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রেঞ্জ ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন।