ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিল্লাদ হোসেন। গত ১৯ জুলাই পল্টনে বিএনপি’র প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। তিনি এখনও তার হাতের অচলাবস্থার সঙ্গে লড়ছেন। বাম হাতের হাড় চূর্ণ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসা নেওয়ার পরও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশা ক্ষীণ হয়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসা ও থেরাপির মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার চেষ্টা করছেন তিনি। তবে বর্তমানে প্রতিদিন অস্বাভাবিক যন্ত্রণায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে, যা তার স্বপ্ন পূরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ১৯শে জুলাই শুক্রবার ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর পল্টনে বিএনপি’র ডাকা সমাবেশ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এসময় বিজয়নগর এলাকায় বিক্ষোভকালে পুলিশের গুলিতে আহত হন তিনি। মিল্লাদের বাম হাতের উপরে গুলি লেগে হাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। রাস্তায় ঢলে পড়লে আশপাশের ব্যক্তিরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও অচল হয়ে রয়েছে তার হাতটি।
আহত মিল্লাদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, চিকিৎসকরা জানান ক্ষতিগ্রস্ত হাতটি আর কখনোই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে না। আমি স্বাভাবিক ভাবে এই হাতের ব্যবহার করতে পারবো না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের একজন কর্মী হিসেবে আমি বড় ক্ষতির শিকার হয়েছি। আমার পিতা মো. জিতু মিয়া হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক ছিলেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। আমার চিকিৎসার সার্বিক খরচ এবং খোঁজখবর নিচ্ছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাবা-মাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পারলে বাবা-মাকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন পূরণ করবো কীভাবে? ঢাকা কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পূর্ণ করেছি। এখন স্নাতকোত্তর করছি।
সেদিনের ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ১৯শে জুলাই শুক্রবার বিএনপি প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি ছিল। আমরা ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির ভাইয়ের নেতৃত্বে কর্মসূচি পালনের জন্য পল্টন এলাকার বিজয়নগর পানির ট্যাংকির পাশের রাস্তায় অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে থাকি। এমন সময়ে পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুলি করে। এ সময় দুই জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। আমি তখন নাসির ভাইয়ের নেতৃত্বে তার পাশে থেকেই পুলিশের এই আক্রমণের পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম- ঠিক তখনই কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার বাম হাতের উপরি ভাগ বুকের কাছাকাছি গুলি লাগে। এ সময় আমি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকি। আমার বাম হাত নিস্তেজ হয়ে যায়। আমি তখন বুঝতে পারি কিছু একটা হয়েছে। হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে। আশপাশে থাকা সহযোদ্ধারা আমাকে সঙ্গে সঙ্গে কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার মুমূর্ষু অবস্থা দেখে চিকিৎসা করতে অপারগতা জানিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যেতে বলেন।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন অনেক মেডিসিন খেতে হয়। স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগবে। আগে যেভাবে চলাচল করতাম সেটি পারছি না- অস্বস্তি লাগে। চিকিৎসক এক মাস থেরাপি নিতে বলেছেন; সেটি নেয়া হচ্ছে। এটা শেষে এক্সে-রে করলে জানা যাবে হাতের অবস্থা। এই পর্যন্ত অনেক টাকা খরচ হয়েছে চিকিৎসা নিতে। আমার শরীরের অবস্থানের উপরে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। সেদিনের ওই ভয়ানক মুহূর্তগুলো এখনো আমি ভুলতে পারি না। আমি দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাই।