অগ্রণী ব্যাংকে কৃষকের নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ঋণ জালিয়াতির ঘটনা
নিউজ ডেস্ক:ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অগ্রণী ব্যাংকে কৃষকের নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি ও মৃত ব্যক্তিদের নামে কৃষি ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বরখাস্তকৃত অফিসার (ক্যাশ) আব্দুস সালাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আব্দুস সালাম ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামের মৃত আব্দুল গণি বিশ্বাসের ছেলে। ২০১৪ সালে অস্ত্রসহ ডিবি পুলিশের হাতে আটক হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রলীগ নেতা।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর থেকে একটি এম এম বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, তিন রাউন্ড গুলিসহ সুদীপ্ত সালাম (ফেসবুক নাম) ওরফে আব্দুস সালামসহ দুই ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এর আগে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল পিস্তল, বান্ধবীসহ নগরের সাধুর মোড় এলাকা থেকে সালামকে আটক করে নগরের বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। এছাড়াও বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্য কোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে গত একই ২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে সুদীপ্ত সালামকে।
এদিকে, ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় আব্দুস সালামসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়ার পর থেকে আব্দুস সালাম তাঁর ফেসবুক আইডিতে ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপক নাজমুস সাদাতকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি করছে যেটা তার নিরাপত্তা ও সম্মানের জন্য হুমকি স্বরুপ। যেহেতু ঝিনাইদহ থেকে কালীগঞ্জ এসে অফিস করতে হয় সেহেতু এই পথে তিনি চরমভাবে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপক নাজমুস সাদাত। গত শুক্রবার রাতে তিনি সাধারণ ডায়েরি করেন।
সাধারণ ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, অত্র শাখাতে যোগদানের পর তাঁর নজরে কৃষি ঋণ বিতরণে বিভিন্ন অসঙ্গতি ধরা পড়ে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ঝিনাইদহ আঞ্চলিক কার্যালয় হতে তদন্ত টিম এসে কৃষিঋণ বিতরণে অনিয়ম খুঁজে পায় এবং উক্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে উপরোল্লিখিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাদের কিছু গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে যা তার নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরুপ। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বরখাস্তকৃত আব্দুস সালামের বিশ্বস্ত সহযোগী সন্ধ্যার পর শাখার সম্মুখে অবস্থান নেয় এবং তার গতিবিধির ওপর নজর রাখে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ক্রেডিট অফিসার আব্দুস সালাম ও মাঠ সহকারী আজির আলী রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকের ম্যানেজার শৈলেন কুমার বিশ্বাসকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে এসব টাকা আত্মসাৎ করেন। এসব টাকা আত্মসাৎ করে তারা বিপুল অর্থের মালিক হয়ে গেছেন। প্রায় ২ কোটি টাকা তখনকার ম্যানেজার শৈলেন কুমার বিশ্বাস, ক্রেডিট অফিসার আব্দুস সালাম ও মাঠ সহকারী আজির আলী আত্মসাৎ করেছেন। ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করতেন তারা দু’জন। আব্দুস সালামের ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পান না।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মুহা. মাহফুজুর রহমান মিয়া জানান, অগ্রণী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।