ডেঙ্গু আক্রান্তের রেকর্ড ভঙ্গ, সারা দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৫২৮
নিউজ ডেস্ক:ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা গত ১৯ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। গতকাল পর্যন্ত সরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৫২৮। এর আগে গত বছর সর্বোচ্চ রোগী ছিল ১০ হাজার ১৪৮ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে সারা দেশে এ রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৮ জন বলা হলেও বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৩ জনের মৃত্যুসনদে কারণ হিসেবে ডেঙ্গু জ্বর উল্লেখ করা হয়েছে। গতকালও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী উ খেংনু রাখাইন মারা গেছেন। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ দিকে চুয়াডাঙ্গায় ৩ ও ঝিনাইদহে ১০ জন ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান মিলেছে। গতকাল তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা:
এবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এক দিনে নারীসহ তিন রোগী ভর্তি হয়েছেন। গতকাল শনিবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁদের ডেঙ্গু-আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শামীম কবীর। আক্রান্ত ব্যক্তিরা হলেন মেহেরপুর জেলার বাড়াদি ইউনিয়নের মোমিনপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে তারিখ হাসান (২১), চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সিনেমা হল পাড়ার আজিম উদ্দীনের স্ত্রী শিরিনা আক্তার (৫০) ও চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাগান পাড়ার শের আলীর ছেলে আব্দুল মোহাইমিন (৩৮)।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস নিয়ে ভর্তি হওয়া তিনজন রোগীই এসেছেন রাজধানী ঢাকা থেকে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেহেরপুরের তারিখ হাসান জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি ঢাকা গুলশানের কলাবাগান নামক এলাকার একটি কোম্পানিতে চাকরি করে আসছেন। তবে সাত থেকে আট দিন পূর্বে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের বিভিন্ন ওষুধ সেবন করেও জ্বর না কমায় ডাক্তার তাঁকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর জন্য বলেন। পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে ডাক্তার গত বৃহস্পতিবার জানান, তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর তিনি গত শুক্রবার ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে আসেন এবং গতকাল সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এসে ভর্তি হন।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সিনেমা হল পাড়ার শিরিনা আক্তার ছেলের ভার্সিটি পরীক্ষার কোচিংয়ের জন্য এক মাস ধরে ঢাকা ফার্মগেট এলাকায় অবস্থান করছিলেন। ২০ জুলাই তিনি মাথাব্যথাসহ জ্বরে আক্রান্ত হন। ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও জ্বর না কমায় গত শুক্রবার তিনি চুয়াডাঙ্গাতে চলে আসেন এবং ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। শিরিনা আক্তারের পরিবারের সদস্যরা তাঁকে গতকালই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান।
অপর দিকে, চুয়াডাঙ্গা বাগানপাড়ার আব্দুল মোহাইমিন ১২ দিন পূর্বে কর্মসূত্রে ঢাকাতে যান। সেখানে চার দিন না পেরোতেই তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। গত শুক্রবার তিনি চুয়াডাঙ্গায় ফিরে আসেন এবং গতকাল চিকিৎসকের পরামর্শে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালে জানতে পারেন, তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। পরে গতকালই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এসে ভর্তি হন তিনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসে আক্রন্ত এ রোগীরা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শামীম কবির জানান, গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মোট তিনজন ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস নিয়ে ভর্তি হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডেঙ্গু মশাবাহিত রোগ, মশা না কামড়ালে ডেঙ্গু হবে না। সুতরাং সোজা কথা মশা মুক্ত থাকতে হবে, মশা মুক্ত রাখতে হবে। সাধারণত হঠাৎ জ্বর, ব্যথা, দুর্বলতা, ঘামাচির মতো লালচে দানা, চোখ লাল, প্র¯্রাব লাল এ সবই জ্বরের লক্ষণ। লক্ষণ সব সময় এক রকম নয়, কমবেশি হতে পারে। দুই, তিন ও চতুর্থবার যখন ডেঙ্গু হবে, তখন সেটা মরণঘাতী ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরে পরিণতের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। ডেঙ্গু হেমোরেজিক মানে হলো ডেঙ্গু জ্বরে শরীরের ভেতরের রক্তনালী থেকে ক্রমাগত চুইয়ে চুইয়ে রক্ত বের হয়ে যাওয়া।
ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটেছে। সন্ধান মিলেছে অনেক ডেঙ্গু রোগীর। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে গতকাল শনিবার পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন ১০ জন। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, একজন এখনো ভর্তি আছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিরা হলেন হরিণাকু-ু উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে মাহবুব (১৮), হরিণাকু-ু শহরের আব্দুল লতিফের ছেলে হাফিজুর রহমান (৩২), ঝিনাইদহ শহরের কালিকাপুর পাড়ার তোয়াজ উদ্দীনের ছেলে সাইফুল (৫২), চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার তিওরবিলা গ্রামের মিঠুনের মেয়ে অন্তরা খাতুন (১১), শৈলকুপার চাঁদপুর গ্রামের আবু বকরের ছেলে নাঈম ম-ল (১৮), সদর উপজেলার কংশি গ্রামের সজিবের ছেলে ও ফিলিপস কোম্পানীর জোনাল ম্যানেজার আশিকুর রহমান হিজল (২৭), পবহাটী গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে আলামিন (১৯), খাজুরা গ্রামের জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রুমানা খাতুন (২৫), হামদহ এলাকার মাঝিপাড়ার বিশ্বনাথ দাশের স্ত্রী অমিতা রানী দাস (৩৫) ও কলাবাগান পাড়ার রাজু মিয়ার ছেলে শিবলী (৩১)। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অফিস থেকে ডেঙ্গু রোগীর এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জানান, চলতি মাসের ৬ জুলাই প্রথমে মাহবুব নামের একজনের শরীরে ডেঙ্গুর জীবাণু ধরা পড়ে। তিনি চিকিৎসা নিয়ে ৯ জুলাই হাসপাতাল ত্যাগ করেন। ওই দিনই হাফিজুর রহমান নামের একজন ব্যক্তি জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁর শরীরে ডেঙ্গুর জীবাণু শনাক্ত হয়। ৫ দিন পর তিনি ১৪ জুলাই হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে ৭ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আলামিন, রুমানা ও শিবলী নামের তিনজনকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগমের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আইয়ুব আলী জানান, ‘আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছি। লিফলেট বিতরণ করে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ চলছে। তা ছাড়া ডেঙ্গু রোগীরা যাতে মশারি এবং নার্সদের সর্বোচ্চ সেবা পায়, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
এদিকে, ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ নিজেই ড্রেন, নালা-নর্দমা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেমেছেন। কয়েক দিন ধরে তিনি ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার ড্রেন পরিষ্কারে নির্দেশনা দিচ্ছেন। এ ছাড়া স্থানীয় পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাইকিং করে সচেতনতা সৃষ্টি করছেন।