জনগণের জানমাল রক্ষায় পুলিশ সব সময় তৎপর -অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানাই লাল সরকার
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা সিনেমা হলপাড়ায় ঈদের ছুটিতে ফাঁকা বাড়িতে জানালার গ্রিল ভেঙ্গে সোনা-রুপার গয়নাসহ মোবাইল ফোন ও সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার মালামাল লুটের ঘটনায় পৃথক অভিযানে দুই চোরকে আটক করেছে সদর ফাঁড়ির পুলিশ। একই সঙ্গে চুরি হওয়া সোনার গয়নাসহ মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোরে শহরের হকপাড়ার হৃদয় (২০) নামের এক চোরকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দহকুলা গ্রাম থেকে আটক করা হয়। আটক হৃদয় পৌর শহরের হকপাড়ার মুনছুর আলীর ছেলে। এর আগে গত সোমবার রাতে এ ঘটনায় জড়িত চঞ্চলকে ফার্মপাড়া থেকে আটক করা হয়। তিনি ফার্মপাড়ার কবির হাসান ওরফে কারনের ছেলে। দুর্ধর্ষ এ চুরির ঘটনায় চোর আটকসহ চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার করায় টিএসআই মুহিতুর রহমান মুহিতকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অক্ষত অবস্থায় স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারের ঘটনা বিরল বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানাই লাল সরকার।
প্রেস ব্রিফিং ও থানা সূত্রে জানা যায়, ৪ জুন ইটভাটা ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন ও নাজনিন নাহার দম্পতি তাঁদের সিনেমা হলপাড়ার ভাড়াবাড়িতে তালা দিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ঝোড়াঘাটা গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদ্যাপন করতে যান। এ সুযোগে তালাবদ্ধ ফাঁকা বাড়ি পেয়ে জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে স্টিল আলমারির ড্রয়ারে থাকা সোনার গয়না কণ্ঠমালা ১টি, চেন ৫টি, কানের দুল ৮ জোড়া, চুড়ি ১ জোড়া, রুলিবালা ১ জোড়া, আংটি ৪টি, ব্রেসলেট ১টি, লকেট ১টি, টিকলি ১টি, কোর্ট পিন ১টিসহ সর্বমোট ১১ ভরি সোনার গয়না লুট করে নিয়ে যান চোরোরা। যার আনুমানিক মূল্য সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। আক্তার হোসেন দম্পতি ৭ জুন গ্রাম থেকে শহরের বাড়ি ফিরে এ দৃশ্য দেখে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সদর ফাঁড়ির টিএসআই মুহিতের ওপর। এরপর চোর আটকসহ চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধাে জোর অভিযান শুরু করেন টিএসআই মুহিত। একপর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তিনি জানতে পারেন চুরির সঙ্গে জড়িত হকপাড়ার হৃদয় পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া জেলার দহকুলা গ্রামে আত্মগোপনে আছেন। এ সংবাদের ভিত্তিতে টিএসআই মুহিত ফোর্স নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে কুষ্টিয়ার দহকুলা গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন। একই সঙ্গে দহকুলা গ্রামের একটি বিচালি গাদার নিচ থেকে চুরি হওয়া সোনা ও রুপার গয়নাসহ তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পুলিশের হাতে আটক হৃদয় চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। এছাড়া তিনি চুয়াডাঙ্গা শহরে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
চোর হৃদয় ও তঁাঁর সহযোগীরা তাঁদের সিন্ডিকেটে নারী সদস্য যুক্ত করে শহরের বিলাসবহুল বাসাবাড়িতে গৃহপরিচারিকা ও গৃহকর্মী হিসেবে প্রেরণ করতেন এবং অভিনব কৌশলে চুরি ও লুটের ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। গ্রেপ্তার হৃদয় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি দিতে চান। তাই তাঁকে আজ আদালতে সোপর্দ করা হবে।
এদিকে, এ দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে চোর আটকসহ চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার করায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ টিএসআই মুহিতকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কারের নগদ অর্থ গতকাল অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে টিএসআই মুহিতের হাতে তুলে দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানাই লাল সরকার।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কানাই লাল সরকার বলেন, চুরির মালামাল প্রায়ই উদ্ধার হয়ে থাকে। কিন্তু অক্ষত অবস্থায় সোনার গয়না উদ্ধারের ঘটনা বিরল। তিনি আরও বলেন, জনগণের জানমাল রক্ষায় পুলিশ সব সময় তৎপর। যথাযথ তথ্য ও অভিযোগ পেলে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুব দ্রুত আটক করে আইনের আওতায় আনাও সম্ভব।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহা. কলিমুল্লাহ, সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ খানসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ৭ জুন ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন ও নাজনিন নাহার দম্পতির চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় করা লিখিত অভিযোগের তিন দিনের মাথায় ১০ জুন রাতে ফার্মপাড়ার চঞ্চলকে আটক করা হয়। সেই সময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চুরির ঘটনা স্বীকারসহ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে নানা তথ্য দেন গ্রেপ্তার চঞ্চল। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য চোরদের আটকসহ চুরির কাজে ব্যবহৃত সেলাইরেঞ্জও উদ্ধার হয়।