মাছি-তেলাপোকার অবাধ বিচরণ অধিকাংশ বেকারি কারখানায়!
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের অধিকাংশ বেকারি কারখানায় নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বিস্কুট, পাউরুটি, কেক, টোস, চানাচুরসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি খাদ্যদ্রব্য। অস্বাস্থ্যকর নোংরা স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে তৈরি এসকল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাতকরণে প্রতিযোগিতায় নেমেছে এসকল কারখানা মালিকরা। বিএসটিআই তো দুরের কথা? সিভিল সার্জন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়োজনীয় কাগজপাতি পর্যন্ত নেই পরিচিতি পাওয়া অনেক প্রতিষ্ঠানের। ফলে এ ধরণের বেকারিতে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে জেলাবাসী। প্রশাসনের হস্তক্ষেপের বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ থাকলেও চুয়াডাঙ্গা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, তাদের অভিযান অব্যহত আছে। ছাড় দেবেন না অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক অভিযোগকারির সত্যতা যাচাইয়ে গতকাল রোববার সকাল থেকে এসকল প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে কয়েকটি বাদে বেশকিছু কারখানার নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে। এছাড়া শহরের নামি-দামি তিনটি প্রতিষ্ঠানের কারখানায় মানা হচ্ছে না খাদ্যদব্য তৈরির আইন। এসকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কারিগররা হাতে পরছেন না গ্লাবস, মাথা ও মুখে নেই মাস্ক ও নির্দিষ্ট পোশাক ব্যবহারের নিয়মের ধারও ধারেন না। ফলে খালি হাতে খাদ্যদ্রব্য তৈরি করার সময় কারখানার ভিতরে প্রচন্ড গরমে কারিগরদের গায়ের ঘাম মিশে যাচ্ছে খাবারে। অনেকটা বাধ্য হয়ে প্রতিনিয়ত নোংরা পরিবেশে তৈরী খাবার খেতে হচ্ছে এ জেলার মানুষের। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরীর প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- বাদুরতলা এলাকায় রাস্তার বিপরীতে ওয়াপদা রোডে গ্রীন ফুডে’র একটি কারখানা, পুরাতন ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সাতগাড়ী মোড়ে অবস্থিত চুয়াডাঙ্গা ফুডের কারখানা, তালতলা এলকায় নিউ ভ্যানিলা ফুডের কারখানা ও দৌলতদিয়াড় বিএডিসি এলাকায় রাস্তার বিপরীতে সাম্পানের কারখানা। এসকল কারখানায় নোংরা, ধূলা-বালি ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে খোলা অবস্থায় রাখা হয়েছে প্রস্তুতকৃত খাদ্যদ্রব্য। যার উপর জীবানু বহনকারী মাছির রয়েছে অবাধ বিচরণ। ময়দা মাখানোর মেশিনগুলো দেখলে মনে হয় কয়েকমাস পরিস্কার করা হয়নি সেগুলো। ভুলক্রমে ময়দার মিশ্রন নোংরা মেঝেতে পড়ে গেলেও সেটাও তুলে ব্যবহার করা হচ্ছে নিউ ভ্যানিলা কারখানায়। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা দল বেধে এক সাথে খাবারও খাচ্ছেন প্রস্তুতকৃত খাবারের পাশে। সেখানেই ফেলছেন তাদের খাবারের উচ্ছিষ্ট। এবিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে শ্রমিকদের সরল জবাব এখুনি ঝাড়– দিয়ে পরিস্কার করে দিবেন। ঝাড়– দেওয়ার সময় বাতাসে উড়া ময়লা প্রস্তুতকৃত খাবারে পড়বে, এমন প্রশ্নের কোন উত্তর নেই তাদের কাছে। বেশকিছু কারখানায় মাছি ও তেলাপোকাসহ ইদুরের অবাধ বিচরণ স্বাস্থ্য ঝুঁকি দিনদিন বাড়িয়েই চলেছে।
এদিকে, দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার জাহাঙ্গীরের চানাচুর ফ্যাক্টরী, একই এলাকার সর্দারপাড়ার মিন্টুর চানাচুর ফ্যাক্টরীর নেই কোনো সরকারি অনুমোদন। বেলগাছি রেলগেট এলাকার আলপনা ফুডসহ শহর জুড়ে ছোট ছোট অনেক কারখানা বিএসটিআই, সিভিল সার্জন, পৌরসভাসহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্দিষ্ট অনুমোদনপত্র ছাড়াই দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের ব্যবসা। নোংরা পরিবেশসহ কারিগররা হাতের গ্লাবস, মাথা ও মুখের মাস্কসহ নির্দিষ্ট পোশাক না পরার বিষয়ে গ্রীন ফুডের অন্যতম সত্বাধিকারি ঘোরী হাসান জোয়ার্দ্দারের সাথে কথা হলে তিনি এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কিছু কর্মচারী কম থাকায় সম্প্রতি তারা এ সমস্যায় পড়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান করা হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।
এদিকে, কারখানায় স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ ও মাছির অবাধ বিচরণসহ কারিগররা হাতের গ্লাবস, মাথা ও মুখের মাস্কসহ নির্দিষ্ট পোশাক না পরার বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ফুড নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সেলিম মিয়ার সাথে মুঠোফেনে কথা হলে, তিনি কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, কারখানাটি তিনি ভাড়া নিয়েছেন। এসকল সমস্যাগুলো আপনারা দেখে গেলেন আগামীতে ঠিক করে ফেলবো। এছাড়াও তালতলার নিউ ভ্যানিলা ফুডের কারখানা মালিক দ্বীন মোহাম্মদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শ্রমিকদের জন্য হাতের গ্লাবস, মাথা ও মুখের মাস্কসহ নির্দিষ্ট পোশাক থাকলেও তারা সেগুলো ব্যবহারে অভ্যস্ত না। এসময় প্রতিবেদকের সামনেই ময়লাস্থানে পড়ে যাওয়া ময়দার খামির পুনরায় ব্যবহার করলে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোন সদুত্তোর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তবে অনকে কারখানায় সমীকরণ টীম পরিদর্শনের জন্য প্রবেশ করলে সাথে সাথে অনেক শ্রমিক হাতের গ্লাবস, মাথা ও মুখের মাস্কসহ নির্দিষ্ট পোশাক পরার বিষয়ে ব্যস্ত হতে দেখা যায়। চুয়াডাঙ্গা শহরের সুনামধন্য সাম্পানের কারখানায় মিস্টির উপর মাছির স্তুপসহ নানা ধরণের সমস্যার বিষয়ে কারখানা মালিক খোকনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কিছুদিন আগেই কারখানা করা নতুন এই প্রতিষ্ঠানটি ভাড়া নিয়েছেন, তাই এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেননি। ভবিষৎ-এ সব আইন-কানুন মানা হবে বলেও তিনি জানান।
স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনের নজরদারী কম থাকায় এসকল প্রতিষ্ঠান দিনের পর দিন নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করতে সাহস পাচ্ছে। প্রশাসন একটু কঠোর হলে এ প্রতিষ্ঠানগুলো আইন মেনে কারখানায় স্বাস্থকর পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা কনজ্যুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, (ক্যাব)’র সভাপতি এ্যাড. মানিক আকবরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাথে তারা একত্রে কাজ করছেন। এসকল নোংরা ও খারাপ পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারী কোনো প্রতিষ্ঠান যেনো ছাড় না পায় সে বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ভোক্তা অধিকার ও স্থানীয় প্রশাসন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এবিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার সহকারি পরিচালক সজল আহম্মেদ বলেন, স্থানীয় প্রশাসনসহ আমাদের অভিযান অব্যহত আছে। ছাড় দেবেন না এসকল অস্বাস্থ্যকর নোংরা প্রতিষ্ঠানকে। চুয়াডাঙ্গা শহর বাদে আশপাশ এলাকায় বেশি অভিযান পরিচালনার কারণে এগুলোতে নজরদারী একটু কম হয়েছে। তবে এসকল প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তাদের কাছেও ব্যাপক তথ্য আছে। অচিরেই এসকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামবেন তারা।