নতুন প্রজন্মকে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে রাখতে এ প্রচেষ্টা
নিউজ ডেস্ক:ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেই উৎসবের আমেজটা টের পাওয়া গেল। শীতের সকালে ঠা-া হিম বাতাসে উৎসবের আমেজটা নতুন মাত্রা পেল। বলছিলাম চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের কথা। ‘এসো মিলি প্রাণে প্রাণে, পিঠা-পুলি উৎসবে’ স্লোগান নিয়ে বর্ণাঢ্য পিঠা উৎসব হয়ে গেল চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজে। শিক্ষার অংশ হিসেবে ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন ও লালনের মাধ্যমে আগামী দিনের শিক্ষিত মায়েদের অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মহিলা কলেজ প্রাঙ্গনে উৎসবের উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াশীমুল বারী।
এ সময় ইউএনও ওয়াশীমুল বারী বলেন, পিঠা উৎসব হচ্ছে আবহমান বাংলার উৎসব-পার্বণের অবিচ্ছেদ্য ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য পাহাড়ি ও বাঙালি প্রত্যেকের সংস্কৃতির শেখড়ের সন্ধান দেয়। তাই এ উৎসব প্রতিবছর আয়োজন করা হবে। তিনি আরও বলেন, পিঠা উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের বাঙালিত্বকে খুঁজে পাই। নতুন প্রজন্মকে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে রাখতে এমন প্রচেষ্টা। সেই লক্ষ্য থেকে অনুষ্ঠান চলে নিরন্তর।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হাবিবুর রহমান জানান, পিঠা উৎসবের মাধ্যমে বাঙালির কিছু হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য রক্ষা হচ্ছে। এই ধরণের উৎসব বাঙ্গালি সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যম। এরকম ভিন্ন ধর্মী আয়োজনের মধ্যদিয়ে কলেজে সকল প্রকার সাংস্কৃতিক চর্চা অব্যাহত থাকবে।
পিঠা উৎসবে বাঙালীয়না পোশাক শাড়ী পরিধান করে ছাত্রীরা বাহারি পিঠা নিয়ে অংশ নেন। ছাত্রীরা বলেন, ‘পিঠা খেলে ঐতিহ্য টিকে থাকবে। এ জন্য আমরা বলছি, ‘পিঠা খাও ঐতিহ্য ধরে রাখো।’
কলেজের বাংলা বিভাগের স্টলের একজন ছাত্রী বলেন, আমরা এবার বিভিন্ন পিঠা নিয়ে আমাদের স্টল সাজিয়েছি। এর মধ্যে ভাপা, চিতই, পাটিসাপটা, ডিম পিঠা অন্যতম। এর সঙ্গে যোগ করে স্টলের আরও দু’জন বলেন, ‘এ ছাড়াও ছিল ঝুলি, মাংস পিঠা, শামুক পিঠা, সূর্যমুখী, নকশা, পাকন পিঠা। ইতিমধ্যে আমাদের সব পিঠা বিক্রি হয়ে গেছে। আমাদের পিঠাগুলোর দাম ছিল শিক্ষার্থীদের সাধ্যের মধ্যেই। উৎসবে অংশগ্রহণ করা অন্য পিঠা স্টলগুলোতেও ছিল পিঠার বৈচিত্র্য। উৎসবে আসা শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পিঠা খেয়ে দেখেছেন। ‘প্রতি বছরই এ উৎসব হয়। আমার কাছে খুব ভালো লাগে এ উৎসবে অংশগ্রহণ করতে। শীত এলেই আম্মু পিঠা বানায়। তবে ক্যাম্পাসে এ রকম উৎসবে সবার সঙ্গে পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। পিঠা খেতে খেতে বলছিলেন উৎসবে আসা দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ব্যানার্জি।
হৃদয় হরণ, ডিম সুন্দরী, বিবি খানা, চালতা পাতা, জামাই পিঠা, গোলাপসহ মজার মজার নামের সব পিঠার দেখার মিলল। নামের মতো এসব পিঠা দেখতেও নজরকাড়া। রয়েছে মালপোয়া, তালের পিঠা, দুধ পুলি, ভাপা, চিতই, ডিম পিঠা, নকশি পিঠা, মুগ পাকন, পাটিসাপটা, লবঙ্গ লতিকা পিঠা। এ রকম নানা রকম পিঠা তৈরি, প্রদর্শনী ও খাওয়াদাওয়ার আনন্দ ভাগাভাগির মাধ্যমে শেষ হয় পিঠা উৎসবের।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার মনিরুজ্জামান, সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুজ্জামান, দর্শনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শহিদুল ইসলাম, ইসরাফিল প্রমুখ।
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পক্ষ থেকে ১০১ রকম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে ৩৮ রকম, দর্শন বিভাগ থেকে ৪০ রকম, অর্থনীতি বিভাগ থেকে ৭৫ রকম, ইসলামের ইতিহাসের পক্ষ থেকে ৩৮ রকম এবং বাংলা বিভাগের থেকে ১০২ রকমের পিঠা এই উৎসবে পরিবেশন করা হয়।