চুয়াডাঙ্গায় রিক্রুটিং পুলিশ কনস্টেবল পদের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা
.
নিউজ ডেস্ক:বর্তমানে সরকারি চাকরি মানে সোনার হরিণ। আর সেই চাকরির প্রত্যাশা থাকে যোগ্য-অযোগ্য সবারই। আর এ হরিণ ধরতে বাদ সাধে মধ্যস্বত্বভোগী এক শ্রেণির দালালের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়। এমন একপর্যায়ে যখন চাকরিপ্রত্যাশীরা দিশেহারা, তখন অবৈধ অর্থ বা ঘুষ লেনদেন ছাড়াই ৪৬ জনকে চাকরি দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার)। মাত্র ১০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট ও ৩ টাকার আবেদন ফরমের খরচেই মিলেছে ২৩ জন পুরুষ ও ২৩ জন নারীর চাকরি। চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পর তাঁদেরকে পুলিশ সদস্য হিসেবে বরণ করে নিয়েছেন জেলা পুলিশের সদস্যরা।
গতকাল বুধবার বিকেলে পুলিশ লাইনস মাঠে এ রিক্রুটিং পুলিশ কনস্টেবল (টিআরসি) পদের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এর আগে নিয়োগ-সংক্রান্ত খুটিনাটি বিষয় ও সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার)। তিনি বলেন, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া যখন শুরু করেছিলাম, তখনি বলেছিলাম চুয়াডাঙ্গার সবাই যেন নিরপেক্ষভাবে এতে অংশ নিতে পারে। মেধাভিত্তিক, যোগ্য প্রার্থীরা যেন একদম বিনাপয়সায় চাকরি পাই, সে চেষ্টা আমরা করেছি। আমরা খুবই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য। শেষ পর্যন্ত শতভাগ ন্যায়, নীতি ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ প্রক্রিয়া আমরা সম্পন্ন করেছি। কোনো প্রকার স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি, এটা আমি দৃঢ়চিত্তে বলতে পারি।’
কথাগুলো বলার সময় পুলিশ সুপারের কণ্ঠ ভারী হয়ে ওঠে, কথার মাঝ থেকে থেকে ভেসে আসে চাপা কান্নার আওয়াজ। তবে তা কষ্টের নয় বরং আনন্দের। ‘শতভাগ যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে চাকরি দেব, কোনো আর্থিক লেনদেন বা স্বজনপ্রীতির সুযোগ দেব না’ জেলাবাসীকে দেওয়া এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং ৪৬ জনকে চাকরি দিতে পারাটা তাঁর কাছে বড় একটা স্বপ্ন পূরণের মতো। আর এ কারণেই ফলাফল ঘোষণার আগে বিস্তারিত তুলে ধরতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন পুলিশ সুপার।
আরও জানা যায়, এবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে ১৮ জনের নাম ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত বছর এ প্রক্রিয়ায় ২৮ জনকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি দিতে না পারায় সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ জনে। মুক্তিযোদ্ধা কোটার ওই ২৮টি পদে এবার সাধারণ প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ কোটায় ১৬ জন পুরুষ ও ২১ জন নারী, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী এবং পুলিশ পোষ্য কোটায় ২ জন বাংলাদেশ পুলিশের রিক্রুটিং পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন। ফলাফল ঘোষণার সময় নির্বাচিত ৪৬ জন প্রার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর ঘোষণা করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি), ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কনক কুমার দাস, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়াটার্স) আবুল বাশারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের সঙ্গে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকেরাও উপস্থিত ছিলেন।