ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামের মশিয়ার রহমান (৪০) ঢাকার গাজীপুর মেট্রো থানা হাজতে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। তিনি হলিধানী গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মিয়ার ভাতিজা। রোববার সকাল ৮টার দিকে মশিয়ার ঢাকা মেডিকেলে মারা যান। নিহত মশিয়ার রহমান মানব পাচার আইনে দায়েরকৃত মামলার আসামী হিসেবে গত বুধবার থেকে পুলিশ রিমান্ডে ছিলেন বলে জানান, গাজীপুর মেট্রো থানার এসআই এবং ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান আতিক। পুলিশের ভাষ্য শনিবার পৌনে ১০টার দিকে তিনি থানার বাথরুমে নিজ শরীরে আগুন দেন। নিহত’র চাচাতো ভাই শওকত আলী জানান, একটি সন্তান দত্তক নিতে গত ৯ নভেম্বর মশিয়ারসহ ৬ জন একটি মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে গাজিপুরের এনাম মেডিকেলে যান। স্বামী পরিত্যক্তা ওই নারী গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই হলিধানীর কসমেটিক ব্যবসায়ী বাবুল তাকে আর্থিক সহায়তা করে আসছিল। মুলত বাবুলই ওই শিশুকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন।
তিনি আরো জানান, ঘটনার দিন ভুমিষ্ঠ নবজাতকটি আনার জন্য ঝিনাইদহের হলিধানী বাজার থেকে এনাম মেডিকেলে গেলে শিশুটির নানা পুলিশ ডেকে কৌশলে শিশু পাচারকারী বলে তাদের ফাঁসিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ মশিয়ার ও মাইক্রো ড্রাইভার সাধুহাটী গ্রামের আসাদকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। পালিয়ে আসতে সক্ষম হন হলিধানী এলাকার বাবলু ও ওহিদুল। তারা বাড়ি ফিরে পুরো ঘটনাটি জানান। জানা গেছে এ ঘটনায় শিশুটির নানা ৭/৮ জনকে আসামী করে গাজীপুর মেট্রো থানায় একটি মামলা করেন। আদালত মশিয়ার ও মাইক্রো ড্রাইভার আসাদকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আজ সোমবার রিমান্ড শেষ হওয়ার কথা। নিহত’র চাচাতো ভাই শওকত আলী অভিযোগ করেন, থানা হাজত থেকে নিহত মশিয়ার এসআই আতিকের মোবাইল থেকে টাকা চাইলে ৪০ হাজার টাকাও দেওয়া হয়। অথচ আরো টাকার জন্য তাকে নির্যাতনের পর আলামত নষ্ট করার জন্য গায়ে কম্বল পেচিয়ে মারা গেছে বলে বলা হচ্ছে, যোগ করেন নিহত’র চাচাতো ভাই শওকত আলী।
এদিকে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আসামীর পরিবারের কাছ থেকে টাকা গ্রহনের অভিযোগ খন্ডন করে গাজীপুর মেট্রো থানার এসআই আতিকুর রহমান আতিক বলেন, হাজত খানার সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আসামী মশিয়ার রহমান কম্বল নিয়ে হাজতের বাথরুমে প্রবেশ করে। এরপর তিনি দিয়াশলাই দিয়ে নিজের গাঁয়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। হাজতীদের চিৎকারে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেন। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায় নি। রোববার সকাল ৮টার দিকে মশিয়ার মৃত্যু বরণ করেন। থানা হাজতে কি ভাবে দিয়াশলাই আসলো জিজ্ঞাসা করা হলে এসআই আতিক কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে জানান, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তবে সাংবাদিকদের তথ্য প্রদানের সময় তার কথায় গরমিল লক্ষ্য করা গেছে। তিনি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিজে দেখেছেন বলে প্রথমে জানালেও পরক্ষনে বলেন, সহকর্মীরা সিসি ক্যামেরা দেখে তাকে জানিয়েছেন। তবে এলাকাবাসি জানিয়েছেন, নিহত মশিয়ার খুবই ভাল ছেলে। বন্ধু বাবলুকে সহায়তা করতে গিয়ে শান্ত স্বভাবের নিরীহ ছেলেটি নিজেই জীবন দিল।