নির্যাতনের শিকার দিল মোহাম্মদ : বাঁচার আকুতি!
নিউজ ডেস্ক:এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে গত এক মাস আগে সোনার হরিণের খোঁজে বিদেশে পাড়ি জমায় খেটে খাওয়া দিন মজুর দিল মোহাম্মদ। আশা ছিলো বাড়তি আয় করে গড়ে তোলা হবে পরিবারের উজ্জল ভবিষ্যৎ। কিন্তু অসাধু দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে জীবন নিয়ে দেশে ফিরে আসায় এখন দিল মোহাম্মদের দুঃষ্কর। বলা হচ্ছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের গহেরপুর গ্রামের মৃত আজিবার রহমানের ছেলে দিল মোহাম্মদের কথা।
জানা যায়, গত বছর ডিসেম্বর মাসের ২৪ তারিখের সোনার হরিণের খোঁজে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে এক সন্তান ও স্ত্রীকে রেখে আমির হোসেনের ছেলে মানব পাচারকারী ছানোয়ারের মাধ্যমে দর্শনায় বসবাস করা শ্যালক আশরাফুলের হাত ধরে পাড়ি জমায় ইরাকে। মানব পাচারকারী ছানোয়ারের প্রতিশ্রুতি ছিলো ইরাকে পৌঁছানোর পরের দিন থেকেই তাকে কাজ দেওয়া হবে। বেতন দেওয়া হবে প্রতি মাসে বাংলাদেশী টাকা ৪০ হাজার। কিন্তু দিন যায়, সপ্তাহ যায় এমনকি পুরো একটা মাস পার হয়ে যায় তবুও তাকে কোন কাজ দেওয়া হয়নি। তাকে বন্দি করে রাখা হয় ইরাকের এক দালাল চক্রের বন্ধঘরে। প্রতিনিয়ত দিল মোহাম্মদের উপর চালানো হচ্ছে অমানবিক নির্যাতন। কখনো শারীরিক কখনো বা খাবার বন্ধ করে।
দিল মোহাম্মদের স্ত্রী মুসলিমা খাতুন জানান, ব্রাক (এনজিও) থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করে এক সন্তান ও আমাকে রেখে গত বছর ডিসেম্বর মাসের ২৪ তারিখ আমার স্বামী ইরাকে পাড়ি জমায়। যাওয়ার পর থেকে আমার স্বামীকে একটি বন্ধ ঘরের ভিতর আটকিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে আরো ২ লাখ টাকা দাবি করছে। ২ লাখ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় প্রতিনিয়ত তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে দালাল চক্র।
প্রতিবেশী সূত্রে জানা গেছে, ব্রাকসহ বহু জায়গা থেকে ধার-দেনা করে দিল মোহাম্মদ ইরাকে পাড়ি জমায়। যাওয়ার পর থেকে পরিবারসহ এলাকার কারো সাথে কোন যোগাযোগ করতে দেয়নি দালালচক্র। হঠাৎ দুইদিন আগে দালালের অগচরে কয়েকটি ভয়েচ বার্তা পাঠায় এক প্রতিবেশীর ইমুতে। যেখানে বার বার দিল মোহাম্মদ বলছে, “এরা আমাকে অমানবিক নির্যাতন করছে। (কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলছে) ঠিক মতো খেতে দিচ্ছে না। এক দিন পর পর সামান্য খাবার খেতে দেয় এক বেলা করে। আমি বাঁচতে চাই! আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাও।” এ বিষয়ে নির্যাতিত দিল মোহাম্মদের স্বজন মানব পাচারকারী ছানোয়ারের কাছে গেলে ছানোয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে বলে জানান দিল মোহাম্মদের পরিবার।
এবিষয়ে মানব পাচারকারী ছানোয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে ছানোয়ার জানান, আমি তাকে কাজের কথা বলে পাঠিয়েছি। কিন্তু সে কাজ ছেড়ে চলে আসতে চাইছে। তাকে ঘরবন্দি করা হয়েছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু গ্রামবাসীর অভিযোগ, ছানোয়ার যা বলছে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। দিল মোহাম্মদ অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে বিদেশে গেছে। সে ফিরে আসার ব্যক্তি নয়। এবিষয়ে দিল মোহাম্মদের পরিবার ছানোয়ারের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করবেন বলে জানা গেছে।