নিউজ ডেস্ক:ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে অবৈধ গর্ভপাতের মূল হোতা কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া রিনা পারভিনকে (৩৫) আটক করেছে পুলিশ। গত শনিবার সন্ধ্যায় নিজের বাসা (হাসপাতাল কোয়ার্টার) থেকে তাঁকে আটক করা হয়। এর আগে তাঁর এ কাজে সহযোগিতার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের চালক উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের মইদুল ইসলামের ছেলে নাহিদ হাসার রকিকে (২৩) দুপুরের দিকে আটক করে পুলিশ।
কোটচাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলম জানান, কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া রিনা পারভিন দীর্ঘদিন যাবৎ এ হাসপাতালে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে গর্ভপাত করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার শহরের নওদা গ্রামের আক্কাস আলী দম্পতির সরলতার সুযোগ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বাচ্চা বেঁচে নেই বলে ওই নবজাতককের মায়ের অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটান এবং বাচ্চাটিকে শপিং ব্যাগে করে হাসপাতালের পরিত্যক্ত ভবনের পাশে ফেলে রাখেন। পরে চা ব্যবসায়ী মনু মিয়ার স্ত্রী নার্গিস বেগম নবজাতকসহ শপিং ব্যাগটি দেখার পর উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যার পর নবজাতকটি মারা যায়।
নবজাতকের পিতা আক্কাস আলীকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি রিনার অবৈধভাবে গর্ভপাতের বিস্তারিত ঘটনা পুলিশকে জানান। এ ঘটনায় রিনার বিরুদ্ধে নবজাতক হত্যায় ৩১৬ ধারায় মামলা করা হয়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলার মধুগঞ্জের ঢাকালেপাড়ার মৃত আজগর আলীর মেয়ে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া রিনা পারভিনকে আটক করে।
এ দিকে রিনা আটক হওয়ার পর এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, আয়া রিনা পারভিন অবৈধ গর্ভপাত করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এ ঘটনায় তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এলাকাবাসী।
কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুর রশিদ জানান, ‘রিনার বিরুদ্ধে অবৈধ গর্ভপাতের অভিযোগ পেয়েছি। তাঁর এ কর্মকা-ের বিষয়ে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেব।’
অপর দিকে, কোটচাঁদপুর পৌর শহরের নওদা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে বেরিয়ে আসে অন্য তথ্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, আক্কাস আলী দম্পতির মধ্যে তেমন মিল ছিল না। কারণ স্ত্রীর চাহিদা ছিল বেশি, কিন্তু সে চাহিদা তাঁর গরিব কৃষক স্বামীর পক্ষে মেটানো সম্ভব ছিল না। তাঁদের দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা ও পরিবারের চাহিদা পূরণ করে তাঁর স্ত্রী ববিতা খাতুনের বিলাসী চাহিদা পূরণ করা ছিল স্বামীর পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। আর এ জন্য তাঁর স্ত্রী চাচাতো দেবরের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আর এ অবৈধ সম্পর্কের ফলস্বরূপ ববিতা খাতুন গর্ভধারণ করেন। কিন্তু আক্কাস আলী এটা মেনে নিতে পারছিলেন না। এ সময় ববিতা খাতুনও গর্ভপাত করাতে রাজি হন। তিনি তাঁর স্বামীকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া রিনা পারভিনের (সম্পর্কে মামী) কাছে এসে কিছু টাকা দিয়ে অবৈধ গর্ভপাত করান এবং নবজাতককে শপিং ব্যাগে করে বাগানে ফেলে দেন।