নিউজ ডেস্ক:
বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানা থেকে আত্মসমর্পণ করা নারী জঙ্গিদের এখন কারাগারে দিন কাটছে। তাদের মামলাগুলো তদন্তাধীন থাকায় এখনো বিচার শুরু হয়নি। স্বামী বা পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রেরণায় যেসব নারী জঙ্গিবাদে যুক্ত হয়েছেন তাদের অনেকেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট থানায় দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দেশের জঙ্গি কার্যক্রমের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। জঙ্গি সংশ্লিষ্ট সবগুলো মামলার তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে নারী জঙ্গিরা জঙ্গিবাদের পথকে অন্ধকার পথ উল্লেখ করে অনুশোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, জঙ্গিবাদের পথ সঠিক নয়। তারা তাদের স্বামী বা পরিবারের অন্য সদস্যদের অনুপ্রেরণায় জঙ্গিবাদে যুক্ত হয়েছিলেন।
২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আজিমপুরের একটি বাসায় ‘অপারেশন আজিমপুর’ নামের অভিযান চালায় সিটিটিসি। ওই অভিযানে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তানভীর কাদেরী নিহত হন। সেখান থেকে কাদেরীর ১৪ বছরের ছেলেসহ তিন নারী জঙ্গিকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- তানভীর কাদেরীর স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা, নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেটের স্ত্রী শারমিন ওরফে শায়লা আফরিন।
ঘটনার পরের দিন লালবাগ থানায় একটি মামলা (নং ৮) দায়ের করে সিটিটিসি। এতে পাঁচ জনকে আসামি করা হয়। আটকের প্রায় ১ মাস পর তানভীর কাদেরীর ছেলেসহ তিন নারীকে আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের করে রিমান্ড চাইলে বিচারক তাদের সাত দিন করে পুলিশ হেফাজতে রাখার আদেশ দেন। রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে নেওয়ার পর কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। এর মধ্যে প্রিয়তী কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন। গত ২০ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি সন্তানের জন্ম দেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, তিন নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। বিশেষ করে, তারা কীভাবে জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হয়েছিলেন, সে বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন তারা। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, তারা কীভাবে তাদের স্বামীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন ও সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানা, জঙ্গি অর্থায়নের উৎস ও অন্যান্য জঙ্গিদের ব্যাপারে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর দক্ষিণখান থানা এলাকার আশকোনায় সূর্য ভিলা নামের একটি বাসায় গড়ে ওঠা জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় সিটিটিসি। ওই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘রিপল ২৪’। অভিযানে সুমি নামের এক নারী জঙ্গি ও নব্য জেএমবির নেতা তানভীর কদেরীরের ছোট ছেলে আফিফ কাদেরী নিহত ও সুমির মেয়ে সাবিনা আহত হয়। এ ছাড়া দুই শিশুকে নিয়ে দুই নারী জঙ্গি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। অভিযানের পরের দিন রাত ১১টার দিকে দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আত্মসমর্পণকারী দুই নারীকে আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড শেষে আদালতে তারা গত ৯ জানুয়ারি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো আদালতে জমা না দেওয়ায় বিচার শুরু হয়নি।
চলতি বছরের ১৫ মার্চ সীতাকুণ্ডের সাধন কুটির থেকে জঙ্গি দম্পতি জসিম উদ্দিন ও আর্জিনা বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সীতাকুণ্ড’। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সীতাকুণ্ডের কলেজ রোডের ছায়ানীড় ভবনে ‘অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬’ নামের ২০ ঘণ্টার অভিযানে এক নারী ও শিশুসহ ৫ জঙ্গি নিহত হয়। গ্রেপ্তারের পর এই জঙ্গি দম্পতিকে প্রথমে ১২ দিন ও পরে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। দুই দফা রিমান্ড শেষে আর্জিনাকে ও তার স্বামীকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সিটিটিসির দাবি আর্জিনার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিলেটের আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। ২৫ মার্চ সিলেটে শুরু হওয়া ‘অপারেশন টোয়াইলাইটে’ আর্জিনার বোন মর্জিনা নিহত হন।
গত ১১ মে রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলায় এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালালে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী ছিলেন। ওই অভিযানের নাম দেওয়া হয় অপারেশন সান ডেভিল। সে সময় সুমাইয়া নামের এক নারী জঙ্গি দুই শিশুকে সঙ্গে নিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৪ মে আদালতে নেওয়া হলে তাকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি অভিযান তার আগের অভিযানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ফলে জঙ্গি আস্তানার অভিযানের পর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত দেওয়া যাচ্ছে না। তবে আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা চেষ্টা করছেন যেন তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত আদালতে দিয়ে বিচার শুরু করাতে পারেন।
তিনি বলেন, নতুন কোনো জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালালে নতুন নতুন তথ্য আসে। তখন এগুলো পর্যালোচনা করতে গেলে সময় লাগে।