বিশেষ প্রতিনিধি: পুলিশের সহযোগিতায় প্রথম স্ত্রীকে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে ঘরে নতুন বৌ তুলেছে এক ইয়াবাসেবী পাষ- স্বামী। দীর্ঘ ১৭ বছরের সংসারে ভালবেসে বিয়ে করা স্ত্রী পলীকে অমানুসিক নির্যাতনের পর ঘৃণ্য নাটক সাজিয়ে তাকে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়েও খ্যান্ত হয়নি নুরে আলম নামে এক ইয়াবাসেবী, শুরু করেছে অপর এক নারীকে নিয়ে নতুন সংসার।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, ২০০১ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চাকরিরত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হাসান আলীর মেয়ে সৈয়দা হামিদা হাসান পলি(৩১)কে ভালবেসে বিয়ে করে নরসিংদীর শিবপুরের যশর উত্তরপাড়া এলাকার মৃত. আহাম্মদ আলী ও ফিরোজা বেগমের ছেলে নুরে আলম(৩৯)। এরই মধ্যে তাদের সংসারে আসে নুরে হানজালা পিয়াস(১৩) নামে এক ছেলে সন্তান। এদিকে বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময় স্ত্রীর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে মাদকসেবী নুরে আলম। এরই প্রেক্ষিতে স্ত্রী পলি তার পরিবারের লোকজনের থেকে কয়েক দফায় তাকে প্রায় দেড় লক্ষ্য টাকা এনে দেয়। কিন্তু দিন দিন যৌতুকের চাহিদা বাড়তে থাকে তার। বিশেষ করে স্ত্রী পলি ও চাকরি থেকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত শশুরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তারই পেনশনের টাকা থেকে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা কর্মীর চাকরি পাওয়ার পর থেকে বেড়ে যায় অত্যাচারের মাত্রা ও ধরন। প্রতিদিন ইয়াবা ও গাঁজা সেবন, একের পর এক নারী কেলেঙ্কারীতে জরানো এমনকি যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নানাভাবে পৈশাচিক ও আদিম উপায়ে নির্যাতন শুরু করে নুরে আলম। যার ফলে কয়েকবার পলিকে মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া একাধিকবার স্থানীয় কাউন্সিলর ও গণ্যমান্যরা বিচার-শালিসের মাধ্যমে নুরে আলমকে হুশিয়ার করেন বলে জানায় পলি ও তার ভুক্তভোগি পরিবার।
পলির ভাষায় কি ঘটেছিল ৪ আগস্ট?
নির্যাতিতা পলির কাছে থাকা নুরে আলমের ব্যবহৃত ২টি মোবাইল সিমের কললিষ্ট ও সমস্ত তথ্য-প্রমান সহ পলির ভাষ্যমতে- আমি ও আমার বাবা খুব চেষ্টা করে ভাল টাকা বেতনের চাকরিটা নিয়ে দেয়ার পর থেকে গত ৪ বছরে আলম আমাকে যত ধরনের নির্যাতন করে যাচ্ছিল তার সবই সয়ে যাচ্ছিলাম শুধু ছেলেটার দিকে তাকিয়ে। কখনো কম বয়সী নারীদের সাথে আমার সৌন্দয্যের তুলনা করে আমাকে বয়স্কা বলা, কখনো মারধর সহ আমার গায়ে থুথু ছেটানো কিংবা সরাসরি আমার গায়ে প্র¯্রাব করে দেয়া, অন্য নারীর সাথে ওকে অপ্রস্তুত অবস্থায় এলাকাবাসী হাতেনাতে ধরা সহ ওর সমস্ত অন্যায় অত্যাচার সয়েও সাভাবিক থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পূণরায় ৫ লক্ষ্য টাকা যৌতুক এর দাবীতে উৎপীড়ন বাড়িয়ে দেয়ার এক পর্যায়ে গত বছরের (২০১৭) ৪ আগস্ট আমার এক নারী সহকর্মী ও ঢাকার ডেমরা থানার এসআই আলমগীর মজুমদারকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ঘৃণ্য নাটক সাজিয়ে আমার এক সহকর্মী বাদলকে জরিয়ে আমাকে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে আটক করে থানায় সোপর্দ করায় আলম। সেখান থেকে থানায় নেয়ার পর আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করে এসআই আলমগীর মজুমদার। কিন্তু তাৎক্ষনিক টাকা দিতে পারিনি বলে আমাকে যৌনকর্মী বানিয়ে আদালতে চালান করে। এরপরপরই জানতে পারি আলম নরসিংদীর এক মেয়েকে বিয়ে করে আমাদের ওই ফ্ল্যাটেই বসবাস শুরু করেছে।
পলির দাবি, আমি সেদিন সেখানে পৌছানোর পূর্ব থেকেই নুরে আলমের সাথে ডেমরা থানার এসআই আলমগীর মজুমদার, সহকর্মী মনি সহ অন্যান্য সহযোগিদের লাগাতার মোবাইলে যোগাযোগ হচ্ছিল। শুধু তাই নয়, এই ঘটনার আগে ও পরের ২ মাসের কললিস্টে স্পষ্টভাবে প্রমান মেলে যে অভিযুক্তদের সাথে সম্মিলিতভাবে প্ল্যানিং করেই উক্ত ঘটনার নাটক সাজানো হয়েছে।
যাকে জড়িয়ে এ ঘৃণ্য নাটক :
পলির সাথে একই অভিযোগে অভিযুক্ত বাদলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আসলে ওইদিন মণি ও সেলিম নামে আমার দুজন সহকর্মী বারবার মনির বাড়িতে অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ জানিয়ে সেখানে যাবার জন্য কল করেছিল আমাকে। এও বলছিল যে সেখানে আমাদের আরো এক সহকর্মী পলি আপা সহ আরো অনেকেই আসবে। তাদের এতবার ফোন পেয়ে কাজের ব্যস্ততার মাঝেই আমি সেখানে যাই। মনির বাড়িতে যেয়ে উপস্থিত হয়ে পলি আপা, মনি, মনির ভাগ্নে সহ পরিবারের অন্যদেরর সাথে বসে কথা বলার ৪ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে সেখানে পলি আপার স্বামী নুরে আলম ও তার সহযোগিরা ডেমরা থানার পুলিশ ও আনসার সদস্যদের নিয়ে মুহুর্তের মধ্যে এসে উপর্যপুরি আমাদের মারধর, কিলঘুষি, লাথি মারতে থাকে। কখনো পুলিশের হাত থেকে রাইফেল নিয়ে আমাদের দুজনকে পেটাতে থাকে। এতটাই আচমকা ঘটনাটা ঘটেছিল যে কি হচ্ছিল তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সেখান থেকে আমাদেরকে থানায় নিয়ে যায় এবং পরে কোর্টে পাঠায়।
এদিকে, ওই ঘটনার পর গত ১৭ অক্টোবর সকল তথ্য ও প্রমান সহ নির্যাতিতা পলি এবং তার ভুক্তভোগি পরিবার আদালতের দারস্থ হয়ে আলমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ৩০৮/২০১৭। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে আসামী নুরে আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে গত ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বন্দর থানা পুলিশ। পরে শুক্রবার দুপুরে তাকে চীফ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠায়।
অপরদিকে, আসামী নুরে আলমকে জামিনে মুক্ত করতে উপর মহলের বিভিন্ন জনের সহযোগিতা নিয়ে তোরজোড় শুরু করেছে হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সিকিউরিটি সুপারভাইজার আতিকুর রহমান। এমনকি আদালতের নির্দেশে নুরে আলমকে গ্রেপ্তারের পর থেকে আতিকুর রহমান বিভিন্নভাবে পলি ও তার ভুক্তভোগি পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।