নিউজ ডেস্ক:
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে বিশ্বব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, আগামী ২০১৯ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধি না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবেদন প্রকাশের সময় উপস্থিত ছিলেন- বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান, সিনিয়র ডিরেক্টর কালোর্স হ্যারোমিলো, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, প্র্যাকটিস ম্যানেজার ম্যানুয়েলা এবং যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব।
অনুষ্ঠানে চিমিয়াও ফান বলেন, জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আদায়ের হার বাংলাদেশে কম। সেদিক থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আয় বাড়বে এবং রাজস্ব প্রশাসনের দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বেশকিছু ঝুঁকি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব, রাজস্ব সংস্কারের উদ্যোগ বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতার অভাব। এ ছাড়া বহির্বিশ্বের ক্ষেত্রে ঝুঁকিগুলো হচ্ছে- বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যনীতি, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা এবং আর্থিক বাজারে নানা সমস্যা। এসব ঝুঁকি মাথায় রেখেই আর্থিক পরিকল্পনা করতে হবে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি অনেক কমেছে। গত বছর আড়াই শতাংশের মতো কমলেও চলতি অর্থবছর সেটি কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশের মতো। তা ছাড়া গত বছর মধ্যেপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স কমলেও চলতি অর্থবছর আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও রেমিট্যান্স কমেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়লেও সেটি ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না, সেটি দেখার বিষয়। কেননা, বিনিয়োগ কোথায় গেছে তা দেখা যাচ্ছে না।
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বলা হয়েছে, সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল ও স্বস্তিদায়ক হলেও চালের দাম বাড়ায় খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। যা কিছুটা অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে।
রিজার্ভের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, রিজার্ভে স্বস্তি আছে। কিন্তু তুষ্টির কোনো কারণ নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনটি বিষয়ে উদ্যোগ নিলে আগামী ১৫ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এগুলো হলো- প্রথমত, শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ ৪৫ শতাংশে উন্নীত করা। এতে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়বে। দ্বিতীয়ত, সরকারি বিনিয়োগে দক্ষতা বাড়ানো এবং অপচয় রোধ করা। এতেও ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়বে। তৃতীয়ত, বিদ্যমান সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। এতেও ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি করবে।
প্রতিবেদনে শ্রম খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রতিবন্ধকতা হিসেবে তিনটি কারণের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো- পারিবারিক দায়িত্বের আধিক্য, মানবসম্পদের দক্ষতার ঘাটতি, বিভিন্ন পেশার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত বৈষম্য।
প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত শ্রম খাতে নারীর অংশগ্রহণ ৩৫ শতাংশ হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২০ সালের মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ ৪৫ শতাংশ হতে পারে। যা সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে।