নিউজ ডেস্ক:
বর্তমান সময়ে মহামারীর মতো যে ব্যাধিটি আমাদের সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে তা হলোÑ ‘ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়া।’ এ একটি কারণে কত মামলা-মোকদ্দমা, হত্যা-রাহাজানি সংঘটিত হচ্ছে তার সঠিক কোনো হিসাব আমাদের জানা নেই। ঋণ ফেরত না দেয়ার কারণে ঋণদাতাকে দুশ্চিন্তা এবং সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় সম্পর্কের কারণে ঋণদাতা দয়াপরবশ হয়ে আরেক জায়গা থেকে ঋণ করে আপনাকে ঋণ দেয়, কিন্তু আপনি সময় মতো টাকা পরিশোধ না করায় ঋণদাতাকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এটা যে কত বড় অন্যায় ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ জানে না। সান্ত¡Íনার কথা হলোÑ এ ধরনের ভোগান্তি এখন প্রায় মানুষকে পোহাতে হচ্ছে। ঋণ দিলেন আপনি, আবার ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে আপনাকে!
একটা সময় ছিল, যখন কেউ ঋণ নেয়ার পর পরিশোধ না করা পর্যন্ত শান্তি মতো ঘুমাতে পারত না। আর এখন ঋণ দেয়ার পর টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত দাতার ঘুম হয় না। ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়া কোনো মোমিনের চরিত্র হতে পারে না। ঋণ এক ধরনের আমানত। আর আমানত প্রত্যর্পণের ব্যাপারে কোরআনে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘সফল মোমিন তারা যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।’ (সূরা মোমিনুন : ০৮)। এ আয়াতে সফল তথা জান্নাতি মোমিনদের দুইটি গুণের কথা বলা হয়েছে। আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। এ দুইটি গুণই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ঋণ যেমন দাতার পক্ষ থেকে গ্রহীতার জন্য আমানত, তেমনি গ্রহীতার পক্ষ থেকে দাতাকে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও। সুতরাং ঋণ ফিরিয়ে না দেয়ার মাধ্যমে বান্দা একই সঙ্গে দুইটি কবিরা গোনাহ করে ফেলে। আমানত প্রত্যর্পণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যথাযথভাবে আমানত ফিরিয়ে দাও। মানুষের মাঝে যখন বিচার করবে তখন ন্যায়বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের উত্তম উপদেশই দেন।’ (সূরা নিসা : ৫৮)।
যথাসময়ে ঋণ না দেয়ার মাধ্যমে গ্রহীতা দাতার বিশ্বাস ভঙ্গ করে। এভাবে কারও বিশ্বাস ভঙ্গ করা ভয়াবহ অপরাধ। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলছেন, ‘যদি তোমাদের কেউ একে অন্যকে বিশ্বাস করে তবে যাকে বিশ্বাস করা হয়েছে তার উচিত আল্লাহকে ভয় করা এবং বিশ্বাস ভঙ্গ না করে গচ্ছিত সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া।’ (সূরা বাকারা : ২৮৩)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের উচিত আল্লাহ এবং রাসুলের বিশ্বাস ভঙ্গ না করা এবং পরস্পরের আমানত ফিরিয়ে দেয়া।’ (সূরা আনফাল : ২৭)।
যথাসময়ে ঋণের অর্থ বা বস্তু ফিরিয়ে না দেয়া যেমন ভয়াবহ অপরাধ, তেমনি ঋণের অর্থ আত্মসাত করা কিংবা একেবারে না দেয়াও কবিরা গোনাহ। একজন মানুষকে হত্যা করা যেমন কবিরা গোনাহ ও হারাম, তেমনি কারও অর্থ আত্মসাৎ করাও কবিরা গোনাহ এবং হারাম। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের অর্থ তেমনই হারাম যেমন তার রক্ত হারাম।’ (সহি জামে : ৩১৪০)।
অন্যত্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঋণ নেয়ার সময়ই ফেরত না দেয়ার নিয়ত করে সে কেয়ামতে আল্লাহর সামনে ‘চোর’ হিসেবে দাঁড়াবে। (ইবনে মাজাহ : ২৪১০)। কারণ ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়াও এক ধরনের চুরি। অর্থনীতিবিদরা একে গোপন চুরি বলে উল্লেখ করেছেন।
ঋণ ফেরত দানকারীর অন্যান্য আমল যত ভালোই হোক সে বা তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার কপালে এ ঋণ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। এমনকি সে যদি মারা যায়, তারপরও এ থেকে রক্ষা পাবে না। (ইবনে মাজাহ : ২৪১৩)। সাহাবি সাদ ইবনে আত্বওয়াল (রা.) বলেন, আমার ভাই মারা গেলে রাসুল (সা.) বলেন, তোমার ভাই ঋণের দায়ে আটকে আছে। আগে তার ঋণ পরিশোধ করে তাকে মুক্ত কর। (সহি জামে : ১৫৫০)।
ঋণের দায়ে শুধু সাধারণ মোমিন নয়, বরং শহীদরাও পার পাবে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয় তবে ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সহিহ জামে : ৩৬০০)। অন্যত্র তিনি বলেছেন, ‘ঋণ পরিশোধ না করার গোনাহ ছাড়া শহীদের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (মেশকাত : ২৯১২)। এ কারণে রাসুল (সা.) এর সামনে কোনো জানাজা এলে আগে জিজ্ঞেস করতেন মৃতের কোনো ঋণ আছে কিনা? যদি ঋণ না থাকত তবে তিনি (সা.) ওই মৃতের জানাজা পড়তেন। আর ঋণ থাকলে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে তারপর জানাজা পড়তেন।