আমি ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ থেকে কলেজে অধ্যাপনারত। ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইউনিসেফ এবং এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (ইআই)-এর উদ্যোগে সারা বিশ্বে পালিত হয়। দিবসটি শিক্ষকদের অবস্থা সম্পর্কে ১৯৬৬ ILO/UNESCO সুপারিশ গ্রহণের বার্ষিকী হিসেবে উদ্যাপিত হয়।
২০২৪ সালে দিবসের প্রতিপাদ্য Valuing teacher voices: towards a nwe social contract for education, ‘শিক্ষকের কণ্ঠের মূল্যায়ন : শিক্ষার জন্য একটি নতুন সামাজিক চুক্তির দিকে।’
শিক্ষকের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য, তাদের কণ্ঠস্বর শোনা, তাদের পেশাকে প্রভাবিত করে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলো মূল্যায়ন করাই বিশ্ব শিক্ষক দিবসের মূল তাত্পর্য। এবারের প্রতিপাদ্য নিয়ে UNESCO-এর বক্তব্য underscoring the urgency of calling for and attending to teachers’ voices to address their challenges but, most importantly, to acknowledge and benefit from the expert knowledge and input that they bring to education.
শিক্ষকের উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘ইউনেস্কো-হামদান পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। [সূত্র সংক্ষেপ: UNESCO International Days]
আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতে’ আরবে শিক্ষিত ছিলেন মাত্র ১৭ জন, ফলে তত্কালীন সমাজ ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহ বিলিয়মান ওই সমাজে সর্বপ্রথম আদেশ দিলেন—‘পাঠ করো তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন….তিনি মানুষকে তাই শিখিয়েছেন যা সে জানতো না।’ (সুরা আলাক, আয়াত : ০১-০৫)
জ্ঞানের মূল উত্স ‘ওহি’ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর ‘সুন্নাহ’। পবিত্র কোরআনের আলোকে জ্ঞান তিন প্রকার ‘ইলমুল ইয়াকিন’ বা বিশ্বাসগত জ্ঞান, ‘আইনুল ইয়াকিন’ বা চাক্ষুষ জ্ঞান এবং ‘হাক্কুল ইয়াকিন’ বা সত্যজ্ঞান।
জ্ঞানচর্চা ফরজ ও সার্বক্ষণিক কর্তব্য। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানান্বেষণ করো।’ প্রিয় নবী (সা.) দারুল আরকাম প্রতিষ্ঠা, গোত্রে গোত্রে শিক্ষিত সাহাবিদের প্রেরণ, আসহাবে সুফ্ফার নিয়মিত শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ, যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণ হিসেবে শিক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষাবিস্তারের প্রাথমিক উদ্দোগ গ্রহণ করেন।
পবিত্র কোরআনে আরো বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ (সুরা জুমার, আয়াত : ০৯)
জাতিকে খাড়া রাখবার শক্তি যোগায় যাঁরা—তাঁরাই ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ শিক্ষক।
১৯৬৬ প্যারিস সন্মেলনে ১৩ টি অধ্যায়, ১৪৬ টি ধারা-উপধারায় শিক্ষকের মর্যাদা ও অধিকারের জন্য প্রণীত সুপারিশ—(ক) সম্মানজনক পারিতোষিক নিশ্চিতকরণ, (খ) যুক্তি সংগত জীবনমান বিধানকল্পে সুবিধাদি নিশ্চিতকরণ, (গ) স্কেল অনুযায়ী নিয়মিত বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, (ঘ) জীবনধারণের ব্যয়বৃদ্ধির সঙ্গে বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস ও বর্ধিতবেতন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ইত্যাদি। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে শিক্ষকতা নির্মোহ পেশা ও বঞ্চনার পরিভাষা মাত্র।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ
কাপাসিয়া, গাজীপুর।