ঘটনায় আ.লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত -সংবাদ সম্মেলনে শরীফ
নিউজ ডেস্ক: আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শেরেগুল ইসলাম বিশ্বাসের বসত বাড়ি ও গোডাউনে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে ৫টার পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষের একপর্যায়ে এ অগ্নিসংযোগের সূত্রপাত হয়েছে। এদিকে, এক সংবাদ সম্মেলনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোট ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. শরীফুজ্জামান শরীফ বলেছেন, ‘খাদিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম, স্থানীয় আ.লীগ নেতা খালিদ ও কারু মেম্বারের নেতৃত্বে স্থানীয় আ.লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ৪/৫’শ জনের সংঘবদ্ধ দল দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ির ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের হামলায় খাদিমপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি শেরেগুলসহ তার ৩ ভাই জখম হয়।’প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের খালপাড়ায় চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের নির্বাচনী পথসভা ছিলো। ইউনিয়নের শিয়ালমারী, মাঝহাট, বটিয়াপাড়া, কমলাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পথসভায় যোগদান করতে আসা নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে যাওয়ার পথে রাস্তার দু’ধারে থাকা বিএনপি প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে বিনষ্ট করতে থাকে। মিছিলটি খাদিমপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি শেরেগুল ইসলাম বিশ্বাসের বাড়ির সামনে গেলে তিনি নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ ও ভদ্রতা বজায় রেখে চলার অনুরোধ করেন। এ কথা শুনে মিছিলে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরা তাকে ও তার বাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে তার বাড়ির দোতলার ঘরগুলোর জানালার গ্লাস ভেঙে পড়ে। তাদের হামলায় আহত হন শেরেগুল বিশ্বাসসহ বাড়িতে থাকা তার তিন ভাই। একপর্যায়ে শেরেগুল বিশ্বাসের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শিবলী ট্রেডার্সের গোডাউনে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। গোডাউনটি বন্ধ থাকায় ভেতরে আগুন না দিতে পারায় প¦ার্শবর্তী দু’টি পাটকাঠির স্তুপে আগুন লাগায় হামলাকারীরা।
খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহসহ পুলিশ-বিজিবি’র বেশ কয়েকটি টিম।
এ প্রসঙ্গে আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ খান ফখরুল আলম বলেন, ‘হুইপ মহোদয়ের সমর্থক ও স্থানীয় বিএনপি নেতা শেরেগুলের সমর্থকদের মধ্যে ইট চালাচালির ঘটনা ঘটেছে। পরস্পর বিরোধী দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে কয়েকজন বাড়ির দু’প্রান্তে থাকা দু’টি পাটকাঠির স্তুপে আগুন লাগাই। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারি, ‘ওই এলাকায় হুইপ মহোদয়ের একটা পথসভা ছিলো। সেখান থেকে ফেরার পথে আওয়ামী নেতাকর্মীদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কে বা কারা। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়াসহ পাল্টা হামলার চেষ্টা চালালে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এতে আওয়ামী সমর্থকদের ৫/৬ জন আহত হয়েছে। অপর পক্ষের কারো কোন হতাহতের খবর পাইনি। তারা উভয়পক্ষই এখনও পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবো।’
আগুনের সূত্রপাত প্রসঙ্গে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার খালিদ হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় দু’টি রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষের একপর্যায়ে সেখানে থাকা পাটকাঠির স্তুপে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানতে পেরেছি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রায় আধাঘন্টা সময় লাগে। আগুনে দু’টি পাটকাঠির স্তুপ ভস্মিভুত হয়ে প্রায় ৮০ হাজার টাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বসত বাড়ির রান্না ঘরের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আমারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি জলন্ত বিড়ি সিগারেট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত।’
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোট ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের সমর্থকদের তান্ডবে আমি এ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে নির্বাচনী কার্যক্রমে কোন ভাবেই অংশ গ্রহণ করতে পারছি না। আওয়ামী গোষ্ঠীর নেতাকর্মী ও তাদের স্বশস্ত্র ক্যাডারদের তান্ডবে আমার নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, নির্বাচনী অফিস, প্রচার মাইক প্রতিনিয়ত ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে গত ১০ই ডিসেম্বর প্রচারণার প্রথম দিনেই আলমডাঙ্গা থেকে ফেরার পথে মুন্সিগঞ্জ পশুহাটের নিকট পৌছুলে আমাকে বহনকারী গাড়ীসহ সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের গাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।’
খাদিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শেরেগুল ইসলাম বিশ্বাসের বাড়িতে হামলার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের উপর হামলা-মামলাসহ তাদেরকে গ্রেফতার ও তাদের বসত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে খাদিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শেরেগুল ইসলাম বিশ্বাসের বাড়িতে খাদিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম, স্থানীয় আ.লীগ নেতা খালিদ ও কারু মেম্বারের নেতৃত্বে স্থানীয় আ.লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ৪/৫’শ জনের সংঘবদ্ধ দল দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ির ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের হামলায় বিএনপি নেতা শেরেগুল বিশ্বাসসহ তার ৩ ভাই জখম হয়।’
এছাড়াও গত রাতে পদ্মবিলা ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার ও আলুকদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমানকে আটক করে মিথ্যা-ভৌতিক মামলায় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত কোন মামলা না থাকা, সিইসি কর্তৃক নির্বাচনকালীন সময়ে গ্রেফতার না করার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের মদদে প্রশাসনের এই ন্যাক্কারজনক কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, মুজিবুল হক মালিক মজু, অন্যতম সদস্য সরদার আলী হোসেন, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি এম. জেনারেল ইসলাম, বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম রতন, আবু আলা শামসুজ্জামান, জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিকুল ইসলাম পিটু, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবীব সেলিমসহ ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।