নিউজ ডেস্ক:
দেশের আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায় অর্থমন্ত্রীকে প্রধান করে গঠিত হচ্ছে ‘ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি কাউন্সিল (এফএসসি)’।
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পর দাতা সংস্থাগুলো আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায় উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের তাগিদ দিয়ে আসছিল। সম্প্রতিককালে সরকারি খাতসহ বেসরকারি ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক খাতে নানা ধরনের সংকট দেখা দেওয়ায় এফএসসি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে ‘ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি কাউন্সিল (এফএসসি)’ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে এ কাউন্সিল গঠনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী।
অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ কাউন্সিলের সদস্য হবেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব/সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব/সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) এক্সিকিউটিভ ভাইস-চেয়ারম্যান, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান, সমবায় বিভাগের রেজিস্ট্রার অ্যান্ড ডিরেক্টর। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নর কাউন্সিলের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। তবে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রয়োজনে যে কাউকে সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন।
সূত্র জানায়, দেশের যেকোনো আর্থিক সংকটকালে কীভাবে তা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে, সে বিষয়ে কাউন্সিলের সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রস্তাবিত কাউন্সিলে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক বছরের মধ্যে এ কাউন্সিল গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। তার আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। এ কাউন্সিল কার্যকর করতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ সংশোধন করতে হবে বলে সূত্র জানায়।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের কাউন্সিল আছে।
এর আগে ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সংস্কারের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা দিয়েছিল সরকারকে। সে কর্মপরিকল্পনায় আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায় এ ধরনের কাউন্সিল গঠনের পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বর্ধিত ঋণ কর্মসূচির (ইসিএফের) অন্যতম শর্তও ছিল এ কাউন্সিল গঠন করা। নানা কারণে সরকার এতদিন এ উদ্যোগ না নিলেও এখন তা করতে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, বড় ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ায় কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংকটে পড়তে পারে। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করবে এ কাউন্সিল। এমনকি যাতে এ ধরনের সংকট সৃষ্টি না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও নজরদারি করবে কাউন্সিল। এজন্য দেশের সব নিয়ন্ত্রক সংস্থা একসঙ্গে কাজ করবে। আর্থিক খাতের কোনো প্রতিষ্ঠানে সংকট দেখা দিলে তা উত্তরণে কাউন্সিল সরকারকে সুপারিশ করবে।
সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর উপস্থাপিত ধারণাপত্রে প্রস্তাবিত কাউন্সিলের গঠনতান্ত্রিক কাঠামো তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কাউন্সিলের অধীনে দুটি ওয়ার্কিং গ্রুপ থাকবে। একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করবে। অপরটি কাজ করবে সামষ্টিক আর্থিক খাতের নজরদারিতে। এজন্য একটি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল থাকবে। এসব গঠনের জন্য ইতিমধ্যে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল টেকনিক্যাল গ্রুপ গঠন করা হয়েছে, যারা কারিগরি সহায়তা দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে এর সচিবালয় হবে।