নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনতে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মামলায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংককে (আরসিবিসি) অভিযুক্ত করা হবে। মামলাটি ফিলিপাইন নাকি যুক্তরাষ্ট্রে করা হবে, সে বিষয়ে আইনি সুবিধা খতিয়ে দেখার পর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে রিজার্ভ চুরির অগ্রগতি সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনতে মামলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আগামী এপ্রিলেই অর্থ উদ্ধারে মামলা করতে চাই। নিউইয়র্কের আদালতে এ মামলা করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় রিপোর্ট সিআইডিকে দ্রুত দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে ফৌজদারি মামলা করতে বাংলাদেশ সময় পাবে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে আগামী এপ্রিলে মামলা করার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন নাও হতে পারে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মামলার জন্য কোনো আইনি ফার্ম নিয়োগ দেয়া হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, নিয়োগ দেয়া হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফার্মকে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আর এ মামলায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে পার্টি করা হবে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এতে রাজি হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজি হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করছেন।
বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবিরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে সংরক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সুইফট কোডের মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে ৩৫টি ভুয়া পেমেন্ট ইন্সট্রাকশন দেয় হ্যাকাররা। এরপর ৫টি পেমেন্ট ইন্সট্রাকশনে এ অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার পাঠানো হয় শ্রীলঙ্কার একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে। বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার ফিলিপাইনের আরসিবিসির চারটি হিসাবে পাঠানো হয়। সেখান থেকে এ অর্থ একটি মানিচেঞ্জার কোম্পানি হয়ে ফিলিপাইনের তিনটি ক্যাসিনোতে চলে যায়। পরবর্তীতে তা বিভিন্ন ব্যক্তি তুলে নেন। তবে গ্রাহকের নামের বানানে ভুল থাকায় শ্রীলঙ্কার ব্যাংকে পাঠানো অর্থ তুলতে পারেনি হ্যাকাররা। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে শ্রীলঙ্কা সরকার ওই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে প্রেরণ করে।
আর ফিলিপাইনে যাওয়া রির্জাভ চুরির ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে দেশে ফেরত এসেছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত আনতে সরকার একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এবং ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আরসিবিসির সহযোগিতা চাওয়া হয়। কিন্তু তাদের অসহযোগিতায় এখন মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সূত্রমতে, প্রচলিত আইনের বিধান অনুযায়ী ঘটনা সংঘটিত হওয়ার ৩৬ মাসের মধ্যে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে বাংলাদেশকে। এরই মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে ২৪ মাস। ফলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে মামলা না করলে ওই অর্থ ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। উল্লেখ্য, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিনটি পৃথক মামলা হয়েছে। এর একটি যুক্তরাষ্ট্র এবং একটি ফিলিপাইন করেছে। পাশাপাশি ঢাকার মতিঝিল থানায় একটি মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।