চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনসহ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নানা আয়োজন
নিউজ ডেস্ক:তিনি নিজেই বলেছিলেন এক হাতে তাঁর বাঁশের বাঁশরী, আরেক হাতে রণতূর্জ। তিনি অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী, তিনি গানের বুলবুল, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আজ ২৫ মে তাঁর ১২০তম জন্মবার্ষিকী। সারা দেশের ন্যায় চুয়াডাঙ্গাতেও আনন্দঘন উৎসবের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হবে নজরুল জয়ন্তী। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদসহ জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন হাতে নিয়েছে নানান কর্মসূচি।
কবি সারা জীবন তাঁর ক্ষুরধার লেখনীতে তুলে ধরেছেন সমাজের শোষণ-বঞ্চনার কথা। সোচ্চার হয়েছেন কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা ও কূপম-ূকতার বিরুদ্ধে। নির্ভীক চিত্তে গেয়েছেন মানবতা ও সাম্যের জয়গান। দারিদ্র্যের কশাঘাত সহ্য করেছেন, ভোগ করেছেন কারা নির্যাতন, নিপীড়ন। কিন্তু ব্যক্তিগত লোভ-লাভ-খ্যাতির মোহের কাছে কখনো আত্ম-বিক্রি করেননি। কবিতায় স্বতন্ত্র ভাষারীতি ও প্রচুর আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করে ভিন্ন আঙ্গিক সংযোজিত করেছিলেন। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে। অন্যদিকে মানবহৃদয়ের সুকুমার অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে অজ¯্র গানে। উত্তর ভারতীয় রাগসংগীতের দৃঢ় ভিত্তির ওপর রচনা করেছিলেন আধুনিক বাংলা গানের সৌধ। প্রবর্তন করেছিলেন বাংলা গজল। বাংলা গানকে তিনি দিয়েছেন নতুন মাত্রা। মানুষকে তিনি জাগিয়েছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অবিচারের বিরুদ্ধে, শোষণের শৃঙ্খল ভাঙার আন্দোলনে। এখানেই তিনি সমকালের দাবি মিটিয়েও চিরকালীন। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। পিতা কাজী ফকির আহমেদ ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম। শৈশব থেকেই অভাব-অনটন ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। জীবিকার দায়ে ঠেকেছিলেন শৈশবেই। লেটো দলের বাদক, রেল গার্ডের খানসামা, রুটির দোকানের শ্রমিক এভাবেই পেরিয়ে গেছে তাঁর শৈশব-কৈশোর। পরে কাজ করেছেন সৈনিক হিসেবে। সাংবাদিকতা করেছেন। কাজ করছেন এইচএমভি ও কলকাতা বেতারে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে পথে নেমেছেন। পাশাপাশি সাহিত্য সাধনা তো ছিলই। শাসকের কোপানলে পড়েছেন, কারারুদ্ধ হয়েছেন, কিন্তু নত হয়নি নজরুলের উচ্চশির।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত কার্পাসডাঙ্গায় নানান কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জানান, আজ শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় কবির স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পন। তারপর আটচালা ঘরের সামনে আম্রকাননে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। দামুড়হুদা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নাফিসা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস। তাছাড়াও জেলা প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে নজরুল স্মৃতি বিজড়িত ময়মনসিংহে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে বিকেল ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন, ভারত-এর উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী ও অসীম কুমার উকিল এমপি। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য খিলখিল কাজী। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি। নজরুল স্মারক বক্তা হিসেবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ উপস্থিত থাকবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।