নিউজ ডেস্ক:
নেপালে পা দিয়েই আমার মনে পড়লো রাজার কথা ,যাকে খুন করা হয়েছিল। আমি তখন যুগান্তরের ফিচার পাতায় কাজ করি। সারোয়ার ভাই এ খবর পেয়েই নিজের ঘরে ঢুকলেন। কিভাবে নিউজটা করা যায়, নিরিবিলিতে বসে ছক কাটবেন। সেদিনই আমার ছুটির দরকার। ফিচার এডিটর সাহস পেলেননা ছুটি দিতে, বললেন সারোয়ার ভাইর কাছে যান। সারোয়ার ভাই ছুটির কথা শুনে বললেন, তুমি কেমন সাংবাদিক এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল আর তুমি ছুটি চাইছো?
২০০১ সালের ১ জুন নিজ প্রাসাদে খুন হন নেপালের রাজা বীরেন্দ্র বীরবিক্রম শাহ দেব। শুধু তিনি একা নন ঐদিন একি সময়ে খুন হন রানী ঐশ্বরিয়া , যুবরাজ নিরাজন, যুবরানী শ্রুতি রাজ্যলক্ষ্মী এবং ভাই ধীরেন্দ্রসহ রাজপরিবারের ছয় সদস্য। অন্যরা হলেন রাজার বোন শান্তি ও শারদা , শারদার স্বামী কুমার খাদগা এবং রাজার চাচাতো বোন জয়ন্তী। আহত হন রাজা বীরেন্দ্রর বোন শোভা, যুবরানী শ্রুতির স্বামী কুমার গোরখ, রাজার ভাই জ্ঞানেন্দ্রের স্ত্রী কমল ও ছেলে পরশ এবং চাচা কেটাকী চেষ্টার।রাজা বীরেন্দ্রর ছেলে দীপেন্দ্রও গুলিবিদ্ধ হন। কোমায় থাকা দীপেন্দ্রকে পরবর্তী রাজা ঘোষণা করা হয় ।কিন্তু চারদিন পর তিনি মারা যান। এরপর সিংহাসনে বসেন বীরেন্দ্রর ভাই জ্ঞানেন্দ্র বীরবিক্রম শাহ দেব।
নেপালে পৌছালাম ২২ নভেম্বর । মাত্র একঘন্টা দশ মিনিটের পথ। কাঠমুন্ডুর ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ার পোর্ট একটি সাদামাটা বাড়ির মতো। ছিমছাম। ঢাকার এয়ারপোর্টের মতো নেই ভীড়ভাট্টা। নেই যান্ত্রিকতা। কাঠের দেয়ালের কারুকার্যের মাঝে চোখ জুড়ানো মূর্তি আর ছবির বাহার। বিমান বন্দরটি মাটি থেকে চার হাজার ফিট উচুঁ। ভিসার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে দেখলাম রাজধানী কাঠমুন্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের শান্ত রূপ।নেপালে অন এরাইভাল ভিসা। যা ভ্রমণ পিয়াসীদের জন্য স্বস্তিকর। এখানকার বিমান কর্মিরাও খুব ভদ্র। মুখে মিষ্টি হাসি। এতসব সুন্দরের মধ্যে কালো দাগের মতো একটা বিষয় বিরক্ত এনে দিল, তা হলো নিচে নামার জন্য লিফট রয়েছে, রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি, নেই সাধারণ স্থির সিঁড়ি। আমার ভেতর ভয়ের বেড়াল আড়মোড়া ভাঙলো। হালিমা আপা আর রউফ ভাই এর উপর ভর করে চলন্ত সিঁড়ি পার হলাম। এক অসুস্থ ভদ্রলোককে দেখলাম হুইল চেয়ারে বসে অন্যের সাহার্য্যে সিঁড়ি ভাঙ্গছে। পাশে একটা স্থীর সিঁড়ি থাকলে কি দোশ হতো?
বিকেল যায় যায় এ সময়ে আমরা এয়ারপোর্টের বাইরে এলাম। আমাদের স্বাগত জানালো ট্যাভেল এজেন্সীর স্থানীয় কর্তারা আর চারদিক ঘেরা মোহনীয়ো পাহাড়। সাদা রং। বরফ না অন্য কিছু বুঝলাম না। ইস কি চমৎকার, এ শব্দ ছাড়া পাহাড়ের মাহাত্ম্য প্রকাশ করার মতো আর কোন শব্দ আমি খুঁজে পেলাম না। কে যেন জোরেই বলে উঠলো ‘ভয়াবহ’।
আমরা ষোলজন ঢাকা থেকে এসেছি। মেগা ট্রুরস বিডি এজেন্সির কাঁধে ভর করে। কাঁধে ভর করে বললাম এ কারণে প্রতি কথাতেই আমরা এজেন্সির স্বত্তাধিকারী রউফ ভাই (প্রফেসর রউফ আহমেদ) এর সাহার্য্য চাইতাম। চলন্তসিঁড়িতে উঠতে পারিনা রউফ ভাই হলেন অন্ধের যষ্ঠি। কারোর গরম কাপড় নেই রউফ ভাই এক্স্রটা এনেছেন । পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে রউফ ভাই এর কাছে ফটোকপি রয়েছে।
গাড়িতে উঠে ভাবলাম কাঠমুন্ডু শহরেই যাচ্ছি কিন্তু না শুনলাম আমাদের রাত্রিযাপন হবে নাগরকোটে। রাস্তার দু’পাশেই পাহাড়। রাস্তাগুলো দু’ রকমের। একটা আমাদের মতো সমতল। অন্যটি উচুঁ। সে রাস্তার নিচে, প্রায় হাত দুয়েক নিচেই আরেকটি সড়ক।
আশপাশের বাড়িগুলো অপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। সাজানো পাহাড় ঘেরা নেপালের এলামেলো বাড়ি খুব চোখে লাগে। বেশ কিছু বাড়ি ভূমিকম্পের স্মৃতি নিয়ে এখনো হেলে রয়েছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে নেপালী নারী-পুরুষ। নারীর দাঁড়ানোর ভঙ্গীতে কোন জড়তা নেই। কোন মুখই ম্রিয়মান নয়। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ই বলে দেয় মেয়েদের রাস্তায় উত্যক্ত হওয়ার কোন আতংক নেই। বাস বা অন্য কোন ট্রান্সপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। তবে এখানে মেয়েদের স্কুটি চালানোর হার খুব বেশি। এমন দেখেছিলাম আজমির শরীফে।
নাগরকোট কাঠমুন্ডু থেকে ২০ মাইল দূরে। নেপালের অভিশাপ ভয়ংকর ভ’মিকম্পও নাগরকোটের সৌন্দর্য্য নষ্ঠ করতে পারেনি। এ সৌন্দর্য্যরে টানেই এখনও মানুষ ছোটে নেপালে–নাগরকোটে। নেপালে এখনও প্রধান আয়ের উৎস বিদেশী পর্যটক। গাড়িতেই রউফ ভাই বললেন নাগরকোটে ঘরে বসেই হিমালয় দেখা যায়। এখানে হিমালয়ের সর্ব্বোচ্চ শিখরের নাম প্যানোরোমা।
নাগরকোট থেকে হিমালয়ের গিরিশিখর মাউন্ট এভারেষ্ট, শালঙ্গু লেঙ্গান,চোবা ভাম্মি, গৌরী শঙ্কর, কাঞ্চন জঙ্ঘা, মাকাল, ধৌলগির , মানাসল ,হিমাচুলি, গণেশ হিমেল দেখা যায়। আমরা চললাম নাগরকোট। আমাদের সহযাত্রী ফেরদৌসী ইতি মধ্যে ছবি তোলা শুরু করেছে। প্লেনে ফেরদৌসী আমার পাশেই বসেছে। মধ্যখানে আমি অন্যপাশে হালিমা আপা, আমার ভ্রমন সঙ্গী। আমার আবার প্লেন ভীতি রয়েছে। আমরা এসেছি বাংলাদেশ বিমানে। তাই ভয়টা ছিল দ্বিগুন। এর কারণ হলো, একবার দিল্লী থেকে আসার সময় বিমানের দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
যদিও চৌকস মেয়ে পাইলট প্লেন নিয়ে সোজা চিটাগাং চলে যায়। একঘণ্টা পর ঢাকা ফিরিয়ে আনে। নেপাল যাওয়ার পথে ফেরদৌসি তুমুল ছবি তুলতে থাকে। জানালার পাশে বসতে না পারায় ফেরদৌসি আমাকে ডিঙ্গিয়ে মেঘের ছবি তোলে। তখন পাহাড় আর দেখা যায় না। নেপাল কাছাকাছি আসায় আমি মুগ্ধ হয়ে যাই,অভিভ’ত হয়ে পড়ি, ছোট ছাট বাড়িগুলো আমার মুগ্ধতা ডিঙ্গিয়ে আমাকে বিস্মিত করে। পাহাড়, মেঘ ও লোকালয়ের নয়নমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে আমরা এতো বেশি উচ্ছসিত হয়ে উঠলাম যে ভুলে গেলাম নিজেদের বয়স, পারিপাশ্বিকতা।
ভাগ্য ভাল অন্য যাত্রীরা আমাদের সহ্য করে গেছেন।হো হো হাসি আর বিস্ময় প্রকাশের শব্দে আমরা নেপাল না পৌছেই নেপালের রুপ আস্বাদন করতে লাগলাম। মুগ্ধ চোখে আমরা শুধু বলছি ওহ গড, হায় আল্লা, ওহ মাই গড। তখন আমাদের পাশে মেঘ, পাহাড় আর পুতুলের বাড়িঘর ও সড়ক। নেপালে কোনও বড় সড় নদী নেই। নেই সাগর। এ দুঃখ ওদেরও। ওখানকার মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি একটা সমুদ্রের জন্য ওদের তৃষ্ণা কত প্রগাড়।
নাগরকোট চলার পথেও সেই একি দৃশ্য। বাঙ্গালীর চোখে অসম্ভব উচুঁ পাহাড়, একেবারে মেঘ ছুঁয়েছে। মনে হয় হাতবাড়লেই মেঘ ছোঁয়া যাবে। ধরা যাবে আকাশ। এ জন্য ই কবি বলেছেন ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই। নাগরকোট ভ’মি থেকে ৭২০০ ফুট উচ্চতায়। আমরা যাচ্ছি এমন উচুঁ রাস্তা দিয়েই। পাহাড়ের গায়ের বাড়িগুলো দেখতে লাগছে পুতুলের বাড়ির মতো। ওরা অত উচুঁতে উঠে কিভাবে। আমি এবার জানালার কাছে বসেছি। মুগ্ধ চোখে দেখছি পাহাড় আর মেঘ হঠাৎ বাদিকে তাকাতেই বুক হিম হয়ে গেল। একটু সামান্য ,মৃদ্যু ধাক্কাতেই আমরা পড়ে যাবো সমতলে, ছোট ছোট টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়বো। আমি আর কোনদিন আমার মেয়ের মুখটা দেখতে পারবো না।
বিকেল হয়ে প্রায় সন্ধ্যা এলো। গাড়ি থামানো হলো রাস্তার পাশে । সবাই নেমে পড়লো শীতের কাপড় জড়িয়ে। নেপাল চার ঋতুর দেশ। গ্রীস্ম, বসন্ত, শীত হেমন্ত।ততক্ষণে আকাশ লাল আভায় জমাট বেঁধেছে। রউফ ভাই বললেন, ঐ দেখেন হিমালয়ের চূড়া দেখা যায়। বেশ দূরে সুউচ্চ পাহাড়ের চ’ড়া গলিয়ে লাল আভা গড়িয়ে পড়ছে। বিস্ময়ে আমি স্তব্দ হয়ে গেলাম। হে ইশ্বর তোমার অর্পূব সৃষ্টি সৌন্দর্য্য আত্মস্থ করা বড়ই কঠিন। গাড়ি আবার চলতে শুরু করেছে, ফেরদৌসী গান গাইছে, আমার পথ চলাতেই আনন্দ। পাহাড়ের ওপর বাড়িগুলোতে বাতি জ্বলছে। তার এক হাত উপরেই আকাশ সেখানে জ্বলছে তাঁরা। কোনটা তাঁরা আর কোনটা ঘরের বাতি বোঝা কষ্ট। ঘরের লাইট নিভে গেলেই বোঝা যায় একটু উপরের জ্বলে থাকা আলোটই আকাশের তাঁরা। আমরা অনেক উচুঁতে উঠতে লাগলাম। আরো উচুঁতে। একেবারে খাঁড়া হয়ে উঠছে গাড়ি। গাড়ির ভেতর শোরগোল নেই। নীরবতাই বলে দিল মৃত্যুভয় দূর করতে সবাই আল্লাহর নাম নিচ্ছে।
আমরা পৌছালাম হোটেলের চত্বরে। আকাশ নেমে এসেছে আরো কাছে। হোটেলের নাম চৌধারা বাংলায় চারদিক। এর চারিদিকে অজানা সব ফুলের গাছ ও লতার পাহাড়। হোটেলটি একটি পাহাড়ের ওপর। এখানে আরো কয়েকটি হোটেল রয়েছে সবগুলোই পাহাড়ের ওপর। আমাদের নেয়া হলো ডাইনিং হলে। চা পানের জন্য। কিন্তু চা পান সরিয়ে রেখে সবাই হুমুড়ি খেয়ে পড়লো ঢাকায় ফোন করার জন্য। কারণ এটি ওয়াইফাই ফ্রি। অত্যন্ত সুস্বাদু মাশালা টি খেয়ে রুমের দিকে রওনা হলাম। রুমে যেতেও পার হতে হলো উচুঁ নিচু পথ। ধাপে ধাপে সিঁড়ি উঠে গেছে। আবার কয়েকটি নিচে নেমে গেছে। আবার উপরে। আবার নিচে। পথটা এবোরে সরু। আমি আর হালিমা আপা একরুমে। স্বস্তি পেলাম চেনা সঙ্গীকে পেয়ে। চাবি দিয়ে রুম খুলতে খুলতে অদেখা ভয়ে গা ছম ছম করতে লাগলো। আমাদের রুমটি নিচতলায়।
সামনে বুনো ঝোপের দলা। তাকালেই মনে হয়, এই বুঝি আজানা ভ’ত সামনে এলো। রুমটি অবশ্য আরামদায়ক। গরম হিটার, গীজার বিশাল টিভি দেখেই ঢাকার কথা মনে হলো। সবাই আয়েশ করে টিভি দেখছে। কেউকি আমার কথা মনে করছে? তখন পেটের ভেতর ক্ষুধার চরকা চলছে। ফ্রেশ হয়ে ছুটলাম ডাইনিং রুমে। খাবার বুফে সিস্টেমে। অনেক রকমের আইটেম। সবজি, মাছ মাংশ, রুটি , ভাত, ভাজি ,স্যূপ। সবজি আধা সেদ্ধ হলেও খেতে মজা। আমাদের অবস্থা কোনটা রেখে কোনটা খাই। লনে তখনও চলছে ঢাকায় ফোন করার আপ্রাণ চেষ্টা। আমরা কয়েকজন রাতের নাগরকোটের চাঁদ দেখে দেখে রুমে গেলাম। আমার গা আবার ছম ছম করতে লাগলো। শুতে যাওয়ার আগে অভ্যাসবশত ছিটকিনি, পর্দা টেনে টুনে দেখলাম। বা দিকে পর্দা টানতেই পাশের হাট করা দরজা চোখ বিস্ফোরিত করে তুললো। বাইরে ঘুটঘুট অন্ধকার কেবল বহু বহু নিচের ঘরগুলিতে টিমটিম করে জ্বলছে বাতি। হিন্দি সিরিয়াল ‘আহাট’ এর ভ’তগুলো যেন এগিয়ে এলো। পাশের রুমেই উঠেছেন আমাদের সকল দুখের ত্রাতা রউফ ভাই। তাকে ডাকলাম। তিনি এসে বেশ কসরৎ করে দরজা আটকে দিলেন। হাত দিয়ে দেখালেন বারান্দায় আরামদায়ক চেয়ার দুটো ,বললেন, দুবান্ধবী এখানে বসে সারারাত কফি খান। আমি হালিমা আপাকে বললাম আমি একা ঘুমাতে পারবো না। আপনার সাথে ঘুমাবো। বলেই কম্বল নিয়ে তার বিছানায় গিয়ে উঠলাম।র্ উফ ভাই ইন্টারকমে জানালেন ভোর পাঁচটায় উঠে ছাদে যেতে হবে, কেন তা বললেন না।
ঘুমের মধ্যে ক্রিং ক্রিং বেজেই চলেছে। ঘুমের চটকা ভেঙ্গে যেতেই বুঝলাম এটা রাইজং বেল। হাত বাড়িয়ে রিসিভার কানে দিতেই রউফ ভাইয়ের কন্ঠ- পাঁচটা বাজে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ছাদে আসুন, ডানদিকে সিঁড়ি। বের হয়ে পাশের রুমে বেল বাজালাম। এবি ব্যাংকের কর্মকর্তা ডেইজী বেশ চেঁচিয়েই বললো, আমরা যাবো না। ছাদটি লোকেভরপুর।
বেশিরভাগ বিদেশী। সবার হাতেই ক্যামেরা ও মোবাইল। কেবল একজন বায়নাকুলার নিয়ে দূরে দূরে হিমালয়ের দিকে তাক করে আছে। আমাদের দলের সবচেয়ে স্মাট মানুষ বাচ্চু ভাই দেখালেন সবচেয়ে উচুঁ চ’ড়াটিই আমাদের হিমালয়। আমার গুনগুনিয়ে গাইতে ইচ্ছা করলো, দূরে কোথায় দূরে দূরে। তখন সূর্য্য উঠেনি। কখন সূর্য্য উঠবে সে প্রতীক্ষার আনন্দ নিয়ে আমরা অপলক চেয়ে রইলাম। সূর্য্য উঠতে লাগলো সন্ধ্যার সেই লাল আভার চেয়ে আরো উজ্জ্বল ও কড়া রং নিয়ে। শিল্পীর ছবি আকাঁর মতো একটু একটু করে লালআভা ছড়িয়ে পড়তে লাগলো কয়েকটি পর্বতশৃঙ্গের চূড়ায়। পাহাড়ের গায়ে বরফ, তার উপর অল্প অল্প লাল আভা পৃথীবির বিশেষণহীন এক অপার সৌন্দর্য্য হয়ে জেগে উঠতে লাগলো।
নাস্তার আয়োজন বুফে। কমলার জুস, ডিম সেদ্ধ, আলুর দম, ডাল চচ্চড়ি, মাখন, জেলি, পাউরুটি, লুচি, হাতে বানানো রুটি, সেমাই ও চা, কফি। আমরা রাজসিক নাস্তা সেরে রওনা হলাম ভক্তপুর। আবার পথচলা মানে আবার মৃত্যু খাদ। আমার এ ভয় আমাকে মনে করিয়ে দিল একজন পর্যটক বলেছেন, ভ্রমণ করতে হয় অল্প বয়সে। তবে দিনের বেলা বলে চোখ জুড়িয়ে গেল পাহাড়ের গায়ে রং-বেরং এর ফুলের সমাহার। দেখলাম বাংলাদেশের হলুদ গাঁদা। বোগেনভিলা ও চেরীর ফুলের মতো কিছু ফুল, সাথে রয়েছে পাতাবাহার।
ভক্তপুর প্রাচীন নেপালের রাজধানী। পুরোন রাজারা এখানে বাস করতেন। ১২ শতকের দিকে রাজা আনন্দ মাল্লা প্রতিষ্ঠা করেন এ নগরী।এখানে রয়েছে প্রচুর ধর্মীয় উপসানালয়। ভক্তপুর ২০১৫ সালের ভ’মিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ শহর। এখানকার দরবার স্কোয়ার ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে মনোনীত হয়। সে দরবারও পড়েছে ভ’মিকম্পের কবলে। এখানে দেখার প্রচুর জায়গা রয়েছে। দেখার মতো ছিল নানা স্থাপনা। কিন্তু ভ’মিকম্প এ লোকালয়কে তছনছ করে দিয়েছে। এখনো পর্যটকদের আর্কষণ করে পটারস স্কোয়ারের সিংহদ্বার, ভৈরবনাথ মন্দির, এলিফ্যান্টস মন্দির, রাজভবন।