রাহুল রাজ চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা শহরের মুসলিমপাড়ায় গড়ে তোলা পথ শিশু ও প্রতিবন্ধি শিক্ষাকেন্দ্রটি অবশেষে সরিয়ে নিতে হয়েছে। অনেক কষ্টে গড়া শিক্ষাকেন্দ্রটি গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরিয়ে নেয়া হয়। পথশিশু আর তাদের মণিমা জাহানারা খাতুনের চোখের জল কারো মনই গলাতে পারেনি। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার নেতৃবৃন্দের অব্যাহত চাপের মুখে নতি স্বীকার করে জাহানারা ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্টরা।
জাহানারা ফাউন্ডেশনের পরিচালক জাহানারা খাতুন জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার পথশিশু ও প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে জাহানারা ফাউন্ডেশন। জেলা শহরের রেলবস্তি এলাকার দু’একটি স্থানেও এ কার্যক্রম অব্যাহত ছিলো। পথে-প্রান্তরে শিশুদের শিক্ষাদানের বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানো হয় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলামকে। তিনি মানবিক বিবেচনায় শহরের মুসলিমপাড়া এলাকায় সংগঠনের পতিত জমিতে সাময়িক সময়ের জন্য শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার মৌখিক অনুমতি দেন। দু’মাস আগে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ওই জমিতে অর্ধলক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে একটি টিনশেড নির্মাণ করা হয়। এতে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ওয়াশীমুল বারিও টিন দিয়ে সহযোগিতা করেন। টিনশেডটি নির্মাণের কয়েকদিন পড়েই হঠাৎ করে সমিতির নেতৃবৃন্দ জাহানারা খাতুনকে তার শিক্ষাকেন্দ্র সরিয়ে নিতে বলেন। এরপর থেকেই অনেক অনুনয়-বিনয় করেও কোনো ফল পাননি জাহানারা খাতুন। এর মধ্যে নানা ধরনের হুমকি-ধামকিও আসতে থাকে বিভিন্ন ভাবে। ইতিমধ্যে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হয় সাইনবোর্ডটি। অবশেষে মঙ্গলবার সকালে এটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হন তিনি।
শিক্ষাকেন্দ্র সরিয়ে নেয়ার খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, পথশিশুদের শিক্ষাকেন্দ্রের টিন-বাঁশ এক এক করে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। অসহায় এতিম শিশুর দল আর জাহানারা খাতুন অশ্রুভেজা চোখে তা অবলোকন করছে। এসময় শিশুরা কিছুটা ক্ষোভ দেখানোরও চেষ্টা করে। শিশুরা স্লোগান দেয় আমাদের এই স্কুল ভাঙ্গতে দিবনা। আমরা পড়াশোনা করতে চায়। এতিম শিশুদের মধ্যে হাবিব, লামিয়া, সাব্বির, হাসান, নাঈম, শাহাজাদী, নাজমুলসহ কয়েক শিশু প্রায় অভিন্ন ভাষায় অভিযোগ করে, আমরা দূর্বল বলে আমাদের সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। তাদের মণিমার বিরুদ্ধে রটানো হচ্ছে মিথ্যা অপবাদ।
মুসলিমপাড়া এলাকার আয়নুর বেগম, জবেদা বেগম, শিল্পী বেগম ও লিলি বেগম জানান, স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রাইভেট বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে নানা মহল থেকে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জাহানারা খাতুনকে দমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ অন্যায়ের বিচারও দাবী করেন তাঁরা।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম জানান, জাহানারা খাতুনের শুভ উদ্যোগ এবং অনেকটা মানবিক কারণেই মৌখিকভাবে অনুমতি দেয়া হয়েছিলো। পড়ে অনেকেই সমিতির অন্য নেতৃবৃন্দকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে। এতে সমিতির সদস্যদের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ দেখা দিলে বাধ্য হয়ে জাহানারাকে তার শিক্ষাকেন্দ্র সরিয়ে নিতে বলা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াশীমুল বারী বলেন, আমি পথ শিশু ও প্রতিবন্ধি বিদ্যালয়ে বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করেছি, তবে ভাঙচুরের এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি।