রিপোর্ট : ইমাম বিমান: ঝালকাঠি সদরের কালিয়ান্দার গ্রামের ইব্রাহিম খলিলের মেঝ ছেলে মো: অাব্দুর রহমান জিহাদ (৯) বাবা অসুস্থ থাকায় দীর্ঘদিন নদী পাড়াপাড়ের খেয়া চালিয়ে উপার্জন করা টাকা দিয়ে বড় বোন ফারজানা অাক্ততারের এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করায় জিহাদ। অাজ ৪মে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে জিহাদের বড় বোন ফারজানা ঝালকাঠির বাউকাঠি বিন্দুবাসিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় গ্রেড পয়েন্ট ৪.৬৮ ( এ) গ্রেডে উর্তীর্ন হয়। এ বিষয় জিহাদের বোন ফারজানা জানায়, অামাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭ জন তাই অামার বাবার পক্ষে সংসার চালাতে বেগ পেতে হয়। অামার ছোট ভাই হুমায়ুন কবীর স্কুলে লেখাপড়া করতো কিন্তু পরিবারে অভাব থাকায় সে লেখাপড়া ছেড়ে কাজের সন্ধানে ঢাকা চলেযায়। অামি জে এস সি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছিলাম তাই বাবা মায়ের অাশাছিল অামাকে লেখা পড়া করাবে। এসএসসি পরীক্ষার পূর্বে নির্বাচনী পরীক্ষায় অামি প্রথম স্থান অধিকার করি। অপর দিকে বাবা হার্নিয়া রোগে ভুগছিলেন ঘরে টাকা ছিলনা তাই আমার পরীক্ষার ফরম ফিলাপ হবে না বলে অামি কান্না করি, সেই কান্না দেখে অামার ছোট ভাই জিহাদ খেয়া চালানোর কাজ করে আমার ফরম ফিলাপের টাকা জোগার করে দেয়। বর্তমানে অামরা তিন ভাই বোন স্কুলে লেখাপড়া করছি। আমার বাবা অসুস্থ থাকা সত্বেও অাইসক্রিম বিক্রি করে সংসার চালায়। আমি আরো লেখাপড়া করতে চাই এবং লেখাপড়া করে শিক্ষক হতে চাই। ঝালকাঠি সদরের কালিয়ান্দার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর ছাত্র অাবদুর রহমান জিহাদ জানান, অামার বাবা ইব্রাহিম খান ( ওরফে ছিনু খা ) রিক্সা চালতেন, অনেক দিন অাগে থেকেই বাবার শরীরে হার্নিয়া অপারেশন হয়, কিন্তু সুস্থ হওয়ায় আমার বোনের পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা, বাবার অপারেশন ও সংসারের খরচ যোগাতে অামি খেয়া চালাতে যাই। আমরা দুই ভাই তিন বোন।
এক দিকে বোনের এস এস সি পরীক্ষার ফরম ফিলাফ , বাবার চিকিৎসার খরচ অন্যদিকে সংসারের খরচ সবমিলিয়ে এ যেন বিশ্বজয়ের চাপ একার মাথায়। সব বাধা প্রতিকুলতার অবসান ঘটিয়ে নয় বছরের শিশু জিহাদ বেছে নিল অন্যরকমের এক জীবন । নবগ্রাম ইউনিয়নের বেতারা নামক স্থানে ঝালকাঠি-শিকারপুর সংযোগ ছোট্র নদী সুগন্ধা নদীর খেয়া ঘাটের মাঝি।
৯ বছরের শিশু জিহাদ জানায় প্রতিদিন সে ফজরের নামাজ পরে ৬ বছরের ছোট্র বোন জান্নাতকে নিয়ে চলে যায় খেয়া ঘাটে। সেই সকাল থেকে শুরু করে দুপুর ১১:৩০মিনিট পর্যন্ত খেয়া চালিয়ে দুপুর ১২টা বাজার অাগেই চলে যায় স্কুলে। স্কুল ছুটির পর শুরু হয় আবার খেয়া চালানো, তার জীবনের সাথে সংগ্রাম। প্রতিদিন সে নৌকা ভাড়া বাবদ ৫০ টাকা দেয় নৌকার মালিককে এরপর সারাদিনে তার আয়ে দুই’শ থেকে অাড়াই’শ টাকা থাকে। জিহাদ মাঝি হয়েও ২০১৬ সালের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষায় ১১তম স্থান অধিকার করে। বর্তমানে জিহাদের বাবা একটু সুস্থ হওয়ায় তাকে অার খেয়া চালাতে হয় না। জিহাদের বাবা ইব্রাহিম খান ও তার মা কহিনুর বেগম জানান, আমার সন্তানরা যেন লেখাপড়া করতে পারে, সে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অামি উপরমহলের সহযোগীতা কামনা করছি।