চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী গ্রাম আকন্দবাড়িয়ায় ছয় বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান
নিউজ ডেস্ক:মাদকের গ্রাম হিসেবে পরিচিত চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী আকন্দবাড়িয়া গ্রামে অভিযান চালিয়েছে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির প্রায় দুই শতাধিক সদস্য। গতকাল শনিবার বিকেলে গোটা গ্রাম ঘিরে ঘণ্টাব্যাপী এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানের নাম দেওয়া হয় অপারেশন ড্রাগ ক্লিন আকন্দবাড়িয়া। অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই নারীসহ চার মাদক ব্যবসায়ী।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, মাদকের গ্রাম হিসেবে পরিচিত আকন্দবাড়িয়া গ্রামে অভিযানের জন্য জেলার ৫টি থানা ও ৩৭টি ক্যাম্প থেকে চৌকস পুলিশ সদস্যদের পুলিশ লাইনসে নেওয়া হয়। শনিবার সকালে পুলিশ লাইনসে নিয়ে তাঁদেরকে ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। তবে অভিযান সম্পর্কে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় অপারেশন ড্রাগ ক্লিন আকন্দবাড়িয়া।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার দাস জানান, ব্রিফিং শেষে বিকেল চারটার দিকে অপারেশন ড্রাগ ক্লিন শুরু হয়। এই অভিযানে যোগ দেন র্যাব-৬, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ব্যাটালিয়ন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রায় দুই শতাধিক সদস্য। বিকেল সাড়ে চারটায় পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ভারত সীমান্তবর্তী আকন্দবাড়িয়া গ্রাম ঘিরে রেখে অভিযান পরিচালিত হয়। ওই অভিযানে যোগ দেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকারসহ বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
অভিযানের খবরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ২টি বাসসহ ২৬টি যানবাহন নিয়ে অভিযান শুরু হয়েছে অপারেশন ড্রাগ ক্লিন। এর মধ্যে আসামি বহনের জন্য রয়েছে ২টি যাত্রীবাহী বাস ও ৫টি প্রিজন ভ্যান। গোটা গ্রামের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অপারেশন টিমের সদস্যরা মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হানা দিচ্ছেন। তবে গোটা গ্রামের কয়েকটি বাড়ি বাদে মাদক ব্যবসায়ীদের সবার বাড়িতে ছিল তালা ঝুলানো। অভিযানের খবর আগে ভাগে পেয়েই গ্রাম থেকে সটকে পড়ে তালিকাভুক্ত চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুর রহমান জানান, আকন্দবাড়িয়া গ্রামের স্কুলপাড়ার তারু মিয়ার ছেলে রনি মিয়া (২২), একই এলাকার মাহাবুবুর আলমের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫), তামালতলা পাড়ার আনারুল হোসেনের মেয়ে সেলিনা খাতুন (৪৫) ও ঈদগাহ পাড়ার দুখু মিয়ার ছেলে ইস্রাফিল হোসেনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়।
অপারেশন ড্রাগ ক্লিন টিমের কমান্ডিং অফিসার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, মাদক ব্যবসায়ীদের একটি বার্তা দিতেই মূলত অপারেশনটি চালানো হয়। অভিযানের আটকের সংখ্যাটিকে বড় করে দেখার কিছু নেই। এই অভিযান জেলাব্যাপী চালানো হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের শিকড় উপড়ে না ফেলা পর্যন্ত অভিযান চলবে।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জানান, প্রথম ধামে মূলত অভিযানটি আকন্দবড়িয়া গ্রাম থেকে শুরু হলো। পর্যায়ক্রমে মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়িতে বাড়িয়ে গিয়ে অভিযান পরিচালিত হবে। মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকেই কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। তারা যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন।
অভিযানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী-পরিচালক শরীয়ত উল্লাহ, র্যাব-৬-এর ডিএডি আওয়াল হোসেন, ৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের সুবেদার বারেক, ২৬ নম্বর আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক আমিন হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।