চুয়াডাঙ্গায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের আলোচনা সভায় জেলা আ.লীগের সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শিতায় স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ যখন শুরু হয়েছিল, তখন বিশ্ব ব্যাংক অর্থ দেওয়ার অঙ্গিকার করেও দেশের এক শ্রেণির চক্রান্তে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সরাসরি হস্তক্ষেপে তা ফিরিয়ে নিয়েছে। এরপর দেশের টাকায় পদ্মা সেতু মেগা প্রকল্পের কাজ এখন শেষের দিকে। ঠিক এ মুহূর্তে সরকার বিরোধীরা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অসৎ লক্ষ্যে পদ্মা সেতুতে এক লাখ মাথা লাগবে অপপ্রচার চালিয়ে নারী-পুরুষকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির মাধ্যমে হত্যা করে নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গায় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আজাদুল ইসলাম আজাদ এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শেখ হাসিনার সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার লক্ষ্যে প্রিয়া সাহার মতো কুচক্রী সৃষ্টি করেছে ওই ষড়যন্ত্রকারীরায়। এই সমস্ত রাষ্ট্রদ্রোহীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে একত্রে নিয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় আজাদুল ইসলাম আজাদ নিজের রাজনৈতিক কর্মকা-ের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, ‘আমি এখনো চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু এ দায়িত্ব পালন করার মানসিক শক্তি আজ আমি হারিয়ে ফেলেছি। কারণ একটি, তাঁরা অনেক ক্ষমতাবান। আর ক্ষমতাবান হয়ে তাঁদের যে আচরণের পরিবর্তন, এ পরিবর্তনের সামনে কোনো ভদ্র মানুষের যাওয়াই দুষ্কর। বারবার তাঁদের প্রখর আচরণের মুখে আমি ক্ষত-বিক্ষত। যে আমি, ১৯৭০ সালে প্রথম এ নৌকার নির্বাচন করতে গিয়ে কুলি টানা শুরু করেছি, যা টানতে টানতে আমার কাঁধে দাগ হয়ে গিয়েছে। আমি নিজে কোনো দিন নৌকা পাইনি। এখানে (চুয়াডাঙ্গা) এসে কত ঘুরে ঘুরে ছেলুন মিয়ার হয়ে নৌকাকে বড় করে তুলেছি। আমি কোনো দিন নৌকা না পেলেও নৌকাকে জেতানোর জন্য প্রাণপণ লড়াই করেছি। অভ্যন্তরীণ বিরোধীতার কারণে অন্যদিক দিয়ে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাঁদের মনোনয়ন নিশ্চিত হয়েছে। আর আমি হয়েছি বঞ্চিত।’
আলোচনা সভায় জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আসাদুল হক বিশ্বাস, সাবেক সহসভাপতি অ্যাড. আশরাফ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুল মালেক, সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফি, অন্যতম সদস্য মো. শাখাওয়াত হোসেন টাইগার, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম রিফাত ও জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হুসাইন জ্যাকি। এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য মাহবুল ইসলাম সেলিম, আবুল হোসেন মিলন, আব্দুর রাজ্জাক, হাফিজুর রহমান কালু, ইমরান আহমেদ বিপ্লব, তাফসির আহমেদ লাল, সৈয়দ ফরিদ আহমেদ, আনিসুর রহমান, আসাদুজ্জামান সবুজ, আবু তাহের, আ. আলীম, কবির হোসেন, আব্দুর রহিম, খায়রুল ইসলাম, আব্দুস সামাদ, আশরাফুজ্জামান নান্নু, আতিউর রহমান বিপ্লব, সোহেল রানা শাহীন, তারিকুল ইসলাম টুকুল প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মতিয়ার রহমান মতি।
এদিকে কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল রাত সাড়ে আটটায় কেদারগঞ্জস্থ দলীয় কার্যালয়ে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিসহ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সব সদস্য উপস্থিত থেকে দলের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৫ পাউন্ডের বিশালাকার কেক কাটেন। এর আগে বেলা তিনটা থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা সমবেত হন ভি জে সরকারি উচ্চবিদ্যালয় (চাঁদমারী) মাঠে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে মাঠ। সাড়ে চারটায় সেখান থেকে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ হাসান চত্বরের উন্মুক্ত মঞ্চে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। সেখানেও ছোট-বড় মিছিল সহকারে সমবেত হয়ে সমাবেশে যোগ দেন নেতা-কর্র্মীরা। এ দিন সকাল ছয়টায় কেদারগঞ্জস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।