কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ হয় ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
গত ৮ আগস্ট থেকে যাত্রা শুরু করা এই সরকারের তিনমাস পূর্ণ হয়েছে।
ঘটনাবহুল এই সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন এবং ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর পাশাপাশি বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একইসঙ্গে ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা, মব জাস্টিস, দাবি আদায়ে একের পর এক আন্দোলন, সড়কে চাঁদাবাজি, বাজার সিন্ডিকেট, সচিবালয়ে আনসারের অবরোধ কর্মসূচি, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের বিষয়সহ নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয় ইউনূস সরকারকে।
এসব মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও এখনও বড় চ্যালেঞ্জ বাজার সহনীয় করা। বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে দু’মাসের জন্য মাঠে রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। চলছে নিয়মিত বাজার তদারকি। তবে, এখনও পুরনো সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি ভোক্তা অধিকার।
এ ছাড়া ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে নেওয়া উদ্যোগের সুফল মিলতে শুরু করেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করার নীতিগত সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচারকাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাদ দেওয়া হয়েছে জাতীয় আট দিবস।
যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার
জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচারে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ, শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি, সেইসঙ্গে আহত ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এখন রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ, দ্রুত সংস্কার শেষ করে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলের সংলাপও করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সংলাপে দলগুলো এই সরকারের কাছে নির্বাচন ও সংস্কারের একটি রোডম্যাপ চেয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখনও কোনো রোডম্যাপ দেয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়াসহ বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এত অল্প সময়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষানুযায়ী তা করা বেশ কঠিন। তারপরেও বেশ কিছু সমস্যা সমাধান হয়েছে। তবে যে বিশাল জনআকাঙ্ক্ষার ধারক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে এই সরকার, জনগণের সেই আস্থা ধরে রাখাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।