করোনা ভাইরাস থেকে পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করতে গৃহবধুদের ভুমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গৃহবধুরা বাড়িতে দৈনন্দিন যে কাজগুলো করে থাকেন সে কাজগুলোই আগামী ১২/১৪ দিন (১৪ এপ্রিল) পর্যন্ত একটু বাড়তি সতর্কতা নিয়ে ঘরের কাজগুলো করলে খুব সহজেই নিজ নিজ পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন।
ঘরের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নারী সদস্যদের অত্যান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে একেবারে সাধারণ (তবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ) ৮ টা কাজ করতে হবে। সংসারের গৃহবধু বা নারী সদস্য মা-বোনরা খুব ভাল করে মনে রাখবের আপনার হাতেই নির্ভর করছে মরণ ঘাতি করোনা ভাইরাস থেকে আপনিসহ আপনার পরিবারের প্রিয় মানুষগুলোর নিরাপত্তা। করোনার আধিপত্য থেকে পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করতে প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ কঠোর হবেন। করোনার বিষয়ে কোন আপষ করবেন না। মা-বোনদের যা করতে হবে নিম্নে তার বিস্তারিত দেওয়া হলো:
(০১). কমন স্পেসগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করুন
আমাদের ঘরের এমন কিছু জিনিস বা জায়গা আছে যেগুলো, দিনে রাতে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সেগুলোর প্রতি নারীদের বেশী মনোযোগী হতে হবে। যেমন; বিভিন্ন টেবিল, ডাইনিং চেয়ার, ইলেকট্রিক সুইচ, টয়লেট, ডোর নবস, হ্যান্ডেল এবং রিমোট। সারা দিনে এই জিনিসগুলো ঘরের সবাই বার বার স্পর্শ করে থাকে। যার ফলে ঘরের এই সমস্ত জিনিসে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। এইজন্য এগুলো জীবানুনাশক দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। খুবই ভালো ফলাফল পেতে দিনে দু-তিনবার এগুলো পরিষ্কার করবেন। যেকোন দোকান থেকে অ্যালকোহল বেইসড লিকুইড, সাবান, ব্লিচিং পাওডার দিয়ে পরিষ্কার করে জীবাণু মুক্ত করতে পারেন।
(০২). অপর ব্যক্তির কিছু ব্যবহার করবেন না
এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে। ফলে শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমেও একজনের থেকে আরেকজনের দেহে ছড়িয়ে যায়। ঠান্ডা লাগার মতোই এই ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে। থুতু ফেলার সময়ও বাড়ির সবাইকে সাবধান করবেন এবং নির্দ্রিষ্ঠ স্থানে থুতু ফেলতে বলবেন। ভাইরাসটি নতুন হওয়াতে এখনই এর কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। পরিবারের সবাইকে সুরক্ষিত রাখতে নারী সদস্যরা গুরুত্বের সাথে মনে রাখবের প্লেট, গ্লাস, কাপ, তোয়ালে, চশমা ব্যক্তিগত জিনিস এমনকি অন্যের বিছানা ব্যবহার কিংবা আশেপাশে যাওয়া এখন থেকেই কমিয়ে দিন। এছাড়া একে অপরের সংস্পর্শে থাকা সম্পূর্ণ কমিয়ে দিন।
(০৩). সাবান দিয়ে ভালো মত ধুয়ে নিন
ব্যবহারের সবকিছু গরম পানি ব্যবহার করে সাবান বা লিকুইড সোপ দিয়ে সাথে সাথে ধুয়ে নিন। বেশি কিছু করবার প্রয়োজন নেই, সাবান দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ ঘষে মেজে, তারপর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এছাড়া ব্যবহারের কাপড়, বিছানার চাদর একইভাবে গরম পানি আর ডিটারজেন্ট দিয়ে ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। গরম পানি আর ডিটারজেন্ট, যেকোন জীবাণু ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট।
(০৪). ইলেকট্রনিক্সের জিনিসগুলো পরিষ্কার রাখুন
ঘর পরিষ্কারের পাশাপাশি ঘরের ইলেক্ট্রনিক্সগুলো পরিষ্কার করতে যেন ভুলেও ভুলে যাবেন না। যেগুলো হল, ল্যান্ড ফোন, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ইত্যাদি। এগুলো নিয়ে আমরা বাইরে অনেক জায়গায়ই ঘোরাফেরা করি। সুতরাং এগুলোর মাধ্যমেও এই ভাইরাসটি আমাদের ঘরে এবং দেহে প্রবেশ করতে পারে। এইজন্য এগুলো অ্যালকোহল প্যাড দিয়ে পরিষ্কার করুন। এবং সময় সময় খেয়াল রাখুন যে আবার পরিষ্কার করা প্রয়োজন কিনা।
(০৫). ঘরের মেঝে পরিষ্কার করুন
করোনা ভাইরাস থেকে ঘরের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিয়মিত সাবান/ স্যাভলন/ ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ঘরের মেঝে পরিষ্কার করুন। এতে করে শুধু করোনা নয়, অন্যান্য রোগ জীবাণু থেকেও আপনি মুক্তি পাবেন। ঘরের মেঝে থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা কম হলেও সাবধান থাকাটাই সবচেয়ে নিরাপদ।
(০৬). ধোয়ামোছার জিনিসগুলো পরিষ্কার করুন
ঘর ধোয়ামোছার কাজে একবার ব্যবহারের ঝুটকাপড়, স্পঞ্জ এবং মোপসগুলো পুনরায় ব্যবহার করার করার আগে গরমপানি সাবান দিয়ে ভালোমত পরিষ্কার করে নিবেন। তা না হলে দেখা গেল, পরিষ্কার হয়ে যাওয়া করোনা ভাইরাস বা অন্য জীবাণুগুলো আপনার অজান্তে আবার অন্য ঘরে থেকে যেতে পারে। সেজন্য একটু কষ্ট বা বিরক্ত লাগলেও পরিবারের সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে সামান্য ১২ থেকে ১৪ দিন প্রচুর সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজন হলে ঘর পরিষ্কার করা কাজে ব্যবহৃত জিনিস গুলো তাপের সাহায্যে শুকিয়ে নিতে হবে। রুটিন মাফিক এসব কাজগুলো করতে বাড়ির মা-বোনরা যখন খুব বিরক্ত হয়ে উঠবেন। তখন দু’চোখ বন্ধ করে একটু ভাবুনতো সামান্য এই কয়টা দিন আপনার কঠোর পরিশ্রমের ফসল হিসাবে পরিবারের সকল সদস্যকে মরণ ঘাতি করোনার হাত থেকে আপনি সুস্থ রাখতে পেরেছেন। এটা ভাবার সাথে সাথে আপনি যে আনন্দ আর সুখ পারেন তাতে দেখবেন আপনার সমস্ত কষ্ট কখন যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে। আপনি আবার নতুন শক্তি ও মনোবল নিয়ে সু-দিনের অপেক্ষা করবেন।
(০৭). পোষ্য প্রাণীটির যত্ন নিন
আমাদের প্রিয় ও বেশ আদুরে বাড়ির পোষ্য প্রাণীগুলোও এই ভাইরাসের বাহক হতে পারে। তথ্যে আছে, ইতিমধ্যে কিছু পোষ্য প্রাণীর দেহে করোনা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাই তাদের প্রতিও বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। পোষা সব প্রাণীকেই কুসুম গরম পানি এবং সাবান/ জীবাণুনাশক দিয়ে ভালো মত গোসল করাতে হবে। এ সময়ে পোষ্য প্রাণীগুলো বাসার বাইরে যেন বের না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হব।
(০৮). অতিথি আগমন কমিয়ে ফেলুন
ঘরের ভেতর বাইরের মানুষদের আনাগোনা যতটুকু সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। এই ভাইরাসটির অণ্ডস্ফুটন সময়কাল হচ্ছে ২ থেকে ১৪ দিন সুতরাং এই সময়কালে ঘরের ভেতর বাইরের মানুষ না আনাই ভাল। করোনা ভাইরাস থেকে ঘরের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাড়ির গৃহীনিদের এতটুকু করতেই হবে। কেননা নিজের ও পরিবারের সকলের নিরাপত্তা সবকিছুর উর্ধ্বে।
দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও মৃতর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এমন অবস্থায় শুধুমাত্র নিজস্ব সাবধানতা দ্বারা এই সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব। সুতরাং, আজ থেকে বরং এখান থেকেই এই উল্লিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন এবং কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে আপনার ও পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত শুরু করুন।
বি:দ্র: আমি কোন ডাক্তার না। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করা নিয়ে এতদিন দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ যে পরামর্শ দিয়ে আসছেন তারই আলোকে সকলকে সতর্ক করাসহ প্রস্তুতি নিতে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা মাত্র। আমার এই লেখা পড়ে যদি একটি পরিবারও উপকৃত হয় তাহলে আমার সাংবাদিকতার জীবন সার্থক হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজন করুক। মহান সৃষ্টি কর্তার কাছে এই প্রার্থনা করি।
“লেখন : শামসুজ্জোহা পলাশ (সাংবাদিক)