করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সবোর্চ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিউনিটি সাপোর্ট কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সপোর্ট কমিটি কর্তৃক গৃহীত সেবামূলক কার্যক্রম সমূহ, ১৫০ শয্যাবিশিষ্ট নতুন ভবন চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল সংক্রান্ত বিষয়ে, নতুন ভবনে দর্শনার্থী বসার জন্য অপেক্ষমান চেয়ার, হাসপাতাল সুষ্ঠু মনিটরিংয়ের জন্য দুটি ৪২ ইঞ্চি মনিটর, ১৬টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ নানাবিধ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ সভায় আগামী ১৪ মার্চ শনিবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ১৫০ শয্যাবিশিষ্ট নতুন ভবন চালু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমার চৌধুরী জিপু। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিউনিটি সাপোর্ট কমিটি ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে যাত্রা শুরু করে। এরপর হাসপাতালে চালানো হয় পরিচ্ছন্নতা অভিযান। হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিউনিটি সাপোর্ট কমিটি কাজ করে যাচ্ছে নিরন্তর। আমাদের হাসপাতালের জনবল সংকট দীর্ঘদিনের সমস্যা। ১ শ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতার জন্য কমিটি থেকে হাসপাতালে ২৩ জন জনবল দেওয়া হয়েছে। নতুন ভবনের কার্যক্রম শুরুর জন্য গত সোমবার আরও ১০ জন নতুন জনবল দেওয়া হয়েছে। তাঁরা নতুন ভবনের পরিচ্ছন্নতার কাজ করবেন। নতুন ভবনে দর্শনার্থী বসার জন্য অপেক্ষমান চেয়ার আছে ১১ সেট, আরও ১৯ সেট চেয়ারে প্রয়োজন। ধীরে ধীরে তারও ব্যবস্থা করা হবে। হাসপাতাল সুষ্ঠু মনিটরিংয়ের জন্য দুটি ৪২ ইঞ্চি মনিটরসহ ১৬টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা জরুরি। ১৬টি সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাও করা হবে।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে পুরাতন ভবন থেকে নতুন ভবনে জরুরি বিভাগ, সার্জারি ও গাইনি বিভাগ স্থানান্তর করা হবে। আমরা কমিউনিটি সাপোর্ট কমিটির পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি সদর হাসপাতালের সেবার মান আরও বৃদ্ধি করতে।’
সভায় চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, ‘একটি হাসপাতালের সব কার্যক্রম শুধুমাত্র সরকার দ্বারা পরিচালনা করা যায় না। এখন পর্যন্ত সাপোর্ট কমিটি থেকে ৩৪ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী পেয়েছি আমরা। নতুন ভবনটি পরিচালনার জন্য আরও পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্রয়োজন। সাপোর্ট কমিটি বিভিন্ন সময় হাসপাতালের জন্য বিভিন্নভাবে কাজ করে চলেছে। আমরা আশা করব, আগামীতেও সাপোর্ট কমিটি এ ভাবে হাসপাতালের জন্য কাজ করবে এবং চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালকে একটি মডেল হাসপাতালে রুপান্তরিত করতে সক্ষম হবে।’ এ সময় বর্তমান সময়ের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় করোনা ভাইরাসের বিষয়টি উল্লেখ করে সিভিল সার্জন বলেন, ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত এ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভা ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। আমরা সবোর্চ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।’
সিভিল সার্জন আরও বলেন, ‘সদর হাসপাতালে এ বিষয়ে একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। এরপর যদিও সমস্যা চরম পর্যায়ে পৌঁছায়, তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি হাসপাতাল এলাকার নার্সিং ইনস্টিটিউটের পাশে একটি চারতলা কোয়ার্টার আছে। যেটি খালি করে ওখানে ১ শ জনের সেবা দেওয়ার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরপরও যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাডেমিক ভবনকে আইসোলেশন ওয়ার্ড ঘোষণা করে সেখানে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।’ এ সময় ডা. এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, ‘আমদেরকে সচেতন থাকতে হবে। গুজবে কান দেওয়া যাবে না। করোনা ভাইরাস নিয়ে কোনো প্রকার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। চেষ্টা করতে হবে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হয়ে, জেনে তারপর কথা বলা বা করোনা আসলে কীভাবে ছড়াই, সেটি মাথায় রেখে চলাফেরা করা।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেটের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট আমজাদ হোসেন, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ, গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম, সদর হাসপাতালের সাবেক আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. একরামুল হক, বর্তমান আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শামীম কবির, হাসপাতালের সিনিয়র গাইনি কনসালটেন্ট ডা. আকলিমা খাতুন, সিনিয়র শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন, জুনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেন ইম্প্যাক্ট ফাইন্ডেশনের চুয়াডাঙ্গা প্রজেক্ট ম্যানেজার মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের হেল্থ এডুকেটর দেলোয়ার হোসেন। সভা শেষে উপস্থিত সবার সঙ্গে নতুন ভবনের জরুরি বিভাগ পরিদর্শন করেন সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান ও পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু।