নিউজ ডেস্ক:আলমডাঙ্গায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবি) জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিরা। নামে-বেনামে ডিসিআর-এর নামে গড়ে তুলেছেন পাকা দালান। এ সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি)। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখলমুক্ত করতে ৭ দিনের নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পাউবির সূত্রমতে, কঠোর নিরাপত্তার মাধ্যমে ২৩ ডিসেম্বর একযোগে সারা দেশে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে। প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার উপস্থিত থেকে এ উচ্ছেদ অভিযানের উদ্বোধন করবেন।
স্থানীয়রা দৈনিক সময়ের সমীকরণকে বলেন, এক যুগ পূর্বে কুমার নদ ও সংযুক্ত জিকে ক্যানেলের দুই পাড় অবৈধ দখলের কবলে পড়ে। নদের দুই পাড় দখল করে এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক স্থাপনা গড়ে তুলতে শুরু করলে ক্রমেই তা বৃদ্ধি পেয়ে ছড়িয়ে পড়ে জিকে ক্যানেলের মধ্যেও। দখলকৃত এসব জায়গা নিয়ে একপর্যায়ে বাণিজ্যও শুরু হয়। এই জিকে ক্যানেল পাড়ে মন্দিরসহ বিনোদন পার্কও গড়ে উঠেছে। বর্তমানে অনেকে জিকে ক্যানেলের মধ্যে মাটি ভরাট ও পিলার তুলে পাকা ভবন নির্মাণ করছেন। ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে প্রায় তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা।
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাষাবাদে সেচ সুবিধার জন্য দেশ স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী জিকে সেচ প্রকল্প চালু করা হয়। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার বিপুলসংখ্যক জমিতে জিকে সেচখালের মাধ্যমে সেচ দেওয়া হয়। এতে সেচ খরচ কম হয় কৃষকদের। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৩৭ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে সেচযোগ্য জমি রয়েছে ২৫ হাজার ৯৮৪ হেক্টর। সেচ-সুবিধা চালু রয়েছে ১৮ হাজার ৬১৮ হেক্টর জমিতে। এমনিতেই নিয়মিত সংস্কার না করার কারণে অনেক ছোট ছোট জিকে সেচ ক্যানেল ভরাট হয়ে গেছে। ভরা মৌসুমেও সেচ খালগুলোর সব এলাকায় সেচের পানি পৌঁছায় না। এরপর ক্যানেল বেদখল হওয়ায় খালগুলো দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, জমি দখলকৃত ব্যক্তিরা দাবি করেন, ‘আমরা দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা চালিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে জীবন-জীবিকা চালাচ্ছি। যদি সরকার দোকানগুলো ভেঙে দেয়, আমাদের পথে বসতে হবে।’ আমেনা খাতুন ও সমছের আলী নামের দুই ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা খুব গরিব মানুষ। দীর্ঘদিন জিকে ক্যানেলের জমিতে গড়া কাঁচা বাড়িতে বসবাস করে কিছু টাকা জমিয়েছি। জমানো টাকা দিয়ে নতুন ইটের ঘর করেছি। এই ঘর যদি ভেঙে দেয়, আমরা এই বয়সে কোথায় যাব!’
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম এ বিষয়ে সময়ের সমীকরণকে জানান, ২৩ ডিসেম্বর সারা দেশের ন্যায় কঠোর নিরাপত্তার মাধ্যমে আলমডাঙ্গায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে নির্মিত স্থাপনায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। তিনি আরও বলেন, উচ্ছেদ অভিযান উদ্বোধন করনে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। এসময় আলমডাঙ্গার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিটন আলী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিমা শারমিন, আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিকুর রহমানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।