নিউজ ডেস্ক:১৯৭১ সালে যাঁদের বয়স ৫-এর অধিক, দেশে এমন মানুষ বেঁচে আছেন ৮৫ লাখের মতো। আর যাঁদের স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখনো জ্বলজ্বল করছে, সম্ভবত এমন মানুষের সংখ্যা হবে ৪৫ লাখের মতো। এসব প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখ থেকে মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনতে চায় ‘যুক্ত’ নামের একটি সংগঠন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের যুদ্ধকালীন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অনুসন্ধান ও লিপিবদ্ধ করে ধারাবাহিক প্রকাশনার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চায় তারা। গল্পগুলো তাঁদের কাছ থেকে শুনে সংগঠনের সদস্যরা প্রকাশ করতে চান ‘জনগল্প-৭১’ নামের বই-এ। ইতিমধ্যে জনগল্প-৭১ নামের একটি বই প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। ২৬ মার্চ উপলক্ষে বইটি প্রকাশ করায় সেখানে গল্প রয়েছে ২৬টি।
গতকাল শনিবার দুপুরে যুক্তর ওই দলটি মেহেরপুরের বিভিন্ন সংগঠন, লেখকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে। দলটির নেতৃত্বে আছেন যুক্তর প্রতিষ্ঠাতা ও জনগল্প ৭১-এর সম্পাদক নিশাত জাহান রানা। এ সময় সঙ্গে ছিলেন সংগঠনটির সদস্য ঊর্মি লোহানি, আনাম জোয়ার্দ্দার, সাংবাদিক মরিয়ম শেলী ও শেখ ফিরোজ আহেম্মদ। প্রথম সভাটি অনুষ্ঠিত হয় মেহেরপুর কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিল হলরুমে। সেখানে অংশ নেন লেখক, সাংবাদিক, গবেষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ নানা শেণি-পেশার মানুষ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট লেখক ড. গাজী রহমান।
নিশাত জাহান রানা বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের কাহিনি সংগ্রহ করছি না। ওই সময়ে সাধারণ মানুষ কীভাবে জীবনযাপন করেছেন, পাকবাহিনীর নির্যাতনের চিত্রটা কেমন ছিল, সাধারণ মানুষ কতটা অসহায় ছিল, তা তুলে ধরতে চাই। যাঁরা লিখতে পারবেন, তাঁরা লিখবেন, আর না পারলে তাঁদের কথাগুলো অডিও করে পাঠালে তাঁদের গল্পগুলো জনগল্প-৭১ বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হবে। এখানে সাধারণ মানুষের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, নেই মুক্তিযুদ্ধের ভাতা পাওয়ার সম্ভাবনা।’ এখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের আসল চিত্রটি উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, লেখাগুলো ছাপানোর সময় অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করছেন তাঁরা। যাচাই-বাছাই করার জন্যও রয়েছে দুটি কমিটি। এভাবেই ধারাবাহিকভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে চায় সংগঠনটি। এ দিন সন্ধ্যায় ওই দলটি যায় মেহেরপুর শিল্পকলা একাডেমিতে। সেখানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান। বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইব্রাহীম শাহীন, প্রফেসর হাসানুজ্জামান মালেক, প্রচার প্রকাশনাবিষয়ক উপসম্পাদক শাশ্বত নিপ্পন, জেলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নুরুল আহমেদ প্রমুখ। এ সময় বক্তারা ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তাঁরা।