দর্শনা থেকে জীবননগর, মুজিবনগর ও হিজলগাড়ী অভিমুখী সড়কে বাঁশ-লাঠি বাহিনীর জোরপূর্বক অর্থ আদায়, বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ প্রকাশ
ইউএনও রফিকুল হাসানের বদলির পরপরই আবারও শুরু টোল আদায় কার্যক্রম, নজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের!
নিউজ ডেস্ক:নিয়মনীতি উপেক্ষা করেই দর্শনা পৌর এলাকার মধ্যে অবস্থিত সড়কগুলোয় চলছে পৌর টোল আদায়ের নামে এক রকম প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি। দায়িত্বপ্রাপ্ত এ আদায়কারীরা বাঁশ ও লাঠি নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে প্রতিনিয়ত টোল আদায়ের নামে এ চাঁদাবাজি করে চলেছেন। বিষয়টি নিয়ে দর্শনার বিভিন্ন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে এ চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে টোল আদায়কারীরা জীবননগর-দর্শনা মহাসড়কে প্রায় ৭০ কিলোমিটার গতির একটি ট্রাক লাঠি আঁড় করে থামানোর চেষ্টা করলে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলচালক ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় টোল আদায়ের নামে এক রকম প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় দর্শনাবাসী।
প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই জানান, এ দুর্ঘটনার জন্য টোল আদায়কারীরাই দায়ী। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, জীবননগর-দর্শনা মহাসড়ক হয়ে যখন প্রায় ৭০ কিলোমিটার গতিতে দর্শনা অভিমুখে টাইলস-ভর্তি ট্রাকটি আসছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে পৌর টোল আদায়ের জন্য আদায়কারীরা সড়কের দুই পাশ দিয়ে বাঁশ ও লাঠি আঁড় করে ট্রাকটির গতিরোধের চেষ্টা করলে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইলেটিকে ধাক্কা দেয়। যার জন্য ঘটে এ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা।
দর্শনা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ইজারাপত্রে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে, শুধু পৌর এলাকার অভ্যন্তরে যেসব পণ্যবাহী যানবাহন বিভিন্ন মালামাল লোড ও আনলোড করবে, কেবলমাত্র ওই সব পণ্যবাহী যানবাহনগুলোর কাছ থেকে পৌর কর আদায় করতে পারবে ইজারাদারের দায়িত্বপ্রাপ্ত আদায়কারীরা। কোনো চলমান গাড়ি থেকে কোনো প্রকার অর্থ আদায় করা যাবে না। অথচ একটি প্রভাবশালী মহল ক্ষমতার অপব্যবহার করে রীতিমতো দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের পুরাতন বাজার, দর্শনা-জীবননগর সড়কের দর্শনা ফিলিং স্টেশনের নিকট ও দর্শনা-হিজলগাড়ী সড়কের দক্ষিণ চাঁদপুর স্কুলপাড়া মোড়-সংলগ্ন স্থানে বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট বসিয়ে লোড-আনলোড পণ্যবাহী গাড়িসহ চলন্ত পণ্যবাহী গাড়িতেও বাঁশ ও লাঠি দিয়ে গতিরোধ করে অর্থ আদায় করছে। এসব চলন্ত গাড়িগুলোকে আদায়কারীরা বাঁশ ও লাঠি দিয়ে যখনই গতিরোধ করার চেষ্টা করছেন, ঠিক তখনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এ ছাড়াও দর্শনা ফিলিং স্টেশনের কাছে কর্তব্যরত আদায়কারীদের বিরুদ্ধে লাশবাহী গাড়িসহ অবৈধ আলমসাধু-করিমন, এমনকি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক বা অটোবাইক থামিয়েও টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
গত সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে অবৈধ আলমসাধুযোগে একটি লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জীবননগর হতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসার সময় পথের মধ্যে দর্শনা ফিলিং স্টেশনের নিকট পৌঁছালে লাশবাহী আলমসাধুটি দাঁড় করাতে বাঁশ ও লাঠি আঁড় করে দেন আদায়কারীরা। এ সময় চালক গতি কমাতে না চাইলে রাব্বি নামের এক আদায়কারী তাঁর হাতে থাকা লাঠি দিয়ে আলমসাধুতে থাকা মরদেহের পেটে আঘাত করেন। এতে আলমসাধুচালক বাধ সাধলে টোল আদায়কারীরা চাঁদার দাবিতে চালককে গালিগালাজ করেন।
এ বিষয়ে দর্শনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘দর্শনা পৌর কর্তৃপক্ষ টোল আদায়ের নামে কিছু আদায়কারীকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এ আদায়কারীরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে টোল আদায়ের নামে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে চলেছেন। এঁরা সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে জোরপূর্বক গাড়ির গতিরোধ করতে চাইলে এমন পরিস্থিতিতে চালকেরা দ্রুত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করাকালে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে।’ সবশেষে তিনি বিষয়টি সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে দর্শনা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অপু বলেন, ‘দর্শনা ফিলিং স্টেশনের সন্নিকটে প্রায় সময় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ওই স্থানটি আমাদের পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। বিধায়, ওখানে টোল আদায়কারীরা সব সময় অবস্থান করেন। টোল আদায়কারীদের বারবার নিয়মনীতি মেনে টোল আদায়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা নিয়মনীতি উপেক্ষা করছেন বলে প্রায়ই অভিযোগ পাচ্ছি। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেও কোনো সমাধান মেলেনি। শেষ পর্যন্ত এ স্থানে একজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটল।’
উল্লেখ্য, বেশ কয়েক মাস আগে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠলে তৎকালীন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হাসান এ সড়কে টোল আদায় কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। কিন্তু তিনি দামুড়হুদা উপজেলা থেকে বদলি হয়ে গেলে একটি প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে আবারও এ টোল আদায় কার্যক্রম শুরু করা হয়, যা চলমান রয়েছে।